ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

৭৫-এ পা রাখলেন অভিনেত্রী শবনম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:২০ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২০ সোমবার

অশোক ঘোষ পরিচালিত ‘নাচের পুতুল’ চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ রাজ্জাকের লিপে মাহমুদুন্নবীর গাওয়া ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’ গানটির কথা মনে আছে? এখনো দারুণ জনপ্রিয় গানটি। এ সিনেমার নায়িকা ছিলেন ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শবনম। বাংলার পাশাপাশি উর্দু ও পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রেও রয়েছে তার সুনিপুণ অভিনয়ের ছাপ। নন্দিত এ অভিনেত্রীর জন্মদিন আজ। ৭৫ বছরে পা রাখলেন তিনি।

অভিনয় জীবনের একটা দীর্ঘ সময় তিনি পাকিস্তানের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সেখানকার দর্শকের কাছে এক মহানায়িকা শবনম। পাকিস্তানে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১১ বার নিগার অ্যাওয়ার্ড।

কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর গত প্রায় ২২ বছরে দেশের চলচ্চিত্রে আর দেখা মেলেনি তার। ‘নাচের পুতুল’খ্যাত এ অভিনেত্রী এখনো ভালো গল্পের চলচ্চিত্রে কাজের অপেক্ষায় আছেন। মাঝখানের এ দীর্ঘ সময়ে অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছিলেন। কিন্তু গল্প পছন্দ না হওয়ায় কাজ করা হয়ে ওঠেনি। এমনটাই জানান অভিনেত্রী। মাঝখানে ‘খোদার পরে মা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা থাকলেও শেষে তিনি জানতে পারেন সিনেমার গল্পটি মৌলিক নয়। তাই সরে দাঁড়ান।

তবে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে এখনো কাজের প্রবল আগ্রহ অভিনেত্রী শবনমের। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে শিল্পী জীবনের কিন্তু কোনো অবসর নেই। তাই এখনো আশায় বুক বেঁধে আছি, হয়তো কোনো একদিন একটি ভালো গল্পের চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারব। ‘আম্মাজান’ আমার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। এটি যেমন দর্শকের কাছে মাইলফলক হয়ে আছে। আমার বিশ্বাস যদি ভালো গল্পে অভিনয়ের সুযোগ মিলে, তবে সেই চলচ্চিত্রও মাইলফলক হবে। তবে কষ্টের কথা হচ্ছে দিন দিন সিনেমা হলের সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। কী যে হবে আমাদের আগামী দিনের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির, তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন।’

এদিকে, আজকের দিনটিকে ঘিরে কোনো উচ্ছ্বাস নেই তার, নেই আনন্দ। শবনম বলেন, ‘এ বয়সে আসলে জন্মদিনকে ঘিরে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস বা আনন্দ থাকে না। যেহেতু দীর্ঘদিন ঘর থেকে বের হওয়া হয় না, তাই একমাত্র ছেলে রনিকে সঙ্গে নিয়ে আজ বাইরে কোথাও একসঙ্গে ডিনার করার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’

উল্লেখ্য, ষাটের দশকের জনপ্রিয় এই তারকার প্রকৃত নাম  ঝর্ণা বসাক। ১৯৪০ সালের ১৭ আগস্ট, তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ননী বসাক ছিলেন একজন স্কাউট প্রশিক্ষক ও ফুটবল রেফারী। ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বনামধন্য সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষকে বিয়ে করেন তিনি।

১৯৬১ সালে বাংলা চলচ্চিত্র ‘হারানো দিন’ এর মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন শবনম। ১৯৬২ সালে উর্দু চলচ্চিত্র ‘চান্দা’ ছবির মাধ্যমে তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পান তিনি।  এ দু’টি ছবিই তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকা থেকে মুক্তি পেয়েছিল।

পরবর্তী বছরে ‘তালাশ’ সমগ্র পাকিস্তানে মুক্তি পেলে ঐ সময়ের সর্বাপেক্ষা ব্যবসা সফল ছবির মর্যাদা লাভ করে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে শবনম পাকিস্তানের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে চিহ্নিত হন।

পেশার কারণে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান তিনি। সত্তর দশকের শুরুতে শবনম ললিউডে (লাহোর) পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করেন। আশির দশকের শেষ পর্যন্ত প্রবল প্রতাপে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন তিনি।

সম্ভবত বিশ্বে তিনিই একমাত্র চলচ্চিত্র অভিনেত্রী যিনি ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত তিনটি দশক ধারাবাহিক ও সফলভাবে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করে অগণিত দর্শক-শ্রোতার মন জয় করেছিলেন।

১৯৮৮ সালে শবনম তার চরিত্র পরিবর্তন করেন এবং পুনরায় ঢাকার চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিনয় করতে থাকেন। ৪০ বৎসরের অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় ১৮০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।

এসএ/