মাস্ক ছাড়া কক্সবাজার সৈকতে যাওয়া নিষেধ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩৯ পিএম, ১৭ আগস্ট ২০২০ সোমবার
পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় কক্সবাজার সৈকত ও সেখানকার অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র সোমবার থেকে খুলে দেয়া হয়েছে। তবে বিভাগীয় শহরের বাইরে যেসব জেলায় এই রোগের সংক্রমণ বেশি তার মধ্যে কক্সবাজার একটি।
প্রায় চার হাজার সংক্রমিত ব্যক্তি এই জেলায় শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকাকে রেড জোনও ঘোষণা করা হয়েছিল।
যেসব বিধি মানতে হবে
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আহমেদ বলছিলেন, পর্যটক এবং যারা পর্যটকদের নানা ধরনের সেবা প্রদান করবেন তাদের জন্য কি করণীয় সে বিষয়ে একটি নির্দেশাবলী তৈরি করা হয়েছে। যা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
সেটি খুলে দেখা গেল তাতে মোট ১৩টি অধ্যায় রয়েছে। ট্যুর অপারেটর, ট্র্যাভেল এজেন্ট, হোটেল, রেস্তোঁরা, এয়ারলাইন্স, টুরিস্ট কোচসহ পর্যটনের সাথে জড়িত এরকম নানা পক্ষের জন্য আলাদা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যেমন, কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর পর থেকে যেসব স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে তাছাড়াও পর্যটকদের ভ্রমণে যাওয়ার আগে অনলাইনে বুকিং ও অর্থ পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। বড় দলে ভ্রমণের পরিবর্তে কম সদস্য ও পারিবারিক ভ্রমণকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সেবা গ্রহণের পূর্বে হোটেল, রেস্তোঁরা, স্থানীয় পরিবহণ, গাইড, স্যুভেনির শপ ইত্যাদির কোভিড-১৯ বিষয়ে নিরাপত্তা বিধানের সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা যাচাই করে বুকিং দেয়া, হোটেলে অবস্থানকালে বহিরাগত কারোর প্রবেশ নিরুৎসাহিত করা এরকম নানা নির্দেশনা ও পরামর্শ রয়েছে।
পর্যটকদের ব্যবহৃত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সঠিকভাবে ফেলা, রেস্তোরাতে পরিবেশন করা বুফে খাবার পরিহার করে বরং তিন ফুট দূরত্বে খাবার টেবিলে বসা ইত্যাদি নানা বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে।
নিয়ম না মানলে যা হবে
জাভেদ আহমেদ বলছেন, "কেউ যদি মাস্ক না পরে কোথাও যান তাহলে তাকে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে। মোবাইল কোর্ট, টুরিস্ট পুলিশ এবং জেলার প্রশাসন একসাথে এবিষয়টিতে কাজ করবে।"
টুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জেলার এসপি মো: জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, প্রথম দিন আবহাওয়া ভাল নয় অর্থাৎ তিন নম্বর সতর্ক সংকেত রয়েছে। এই কারণে সৈকতে মানুষজন তেমন একটা ছিল না।
তিনি জানিয়েছেন, সৈকতের যে অংশগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয় যেমন কলাতলি বিচ, লাবনি পয়েন্ট, ইনানি বিচ, হিমছড়ি এসব জায়গায় নামার পথে টুরিস্ট পুলিশ অবস্থান করবে এবং কেউ যদি মাস্ক না পরেন তাহলে তাকে সৈকতে নামতে দেয়া হবে না। তবে কারো কাছে মাস্ক না থাকলে দরকারে তাকে তা সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যে কারণে এসব সিদ্ধান্ত
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশে বা টোয়াবের সভাপতি মো: রাফিউজ্জামান বলছিলেন, পাঁচ মাস যাবত পর্যটন শিল্পের সব কিছু বন্ধ থাকায় এই সময়ে ৫,৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, পর্যটন শিল্পের সাথে নানা ভাবে ৪০ লাখের মতো মানুষ জড়িত। হোটেল, মোটেল ট্যুর অপারেটরসহ বাংলাদেশে টোয়াবের সদস্য রয়েছে মোট ৬৮৫ জন।
মো: রাফিউজ্জামান বলছেন, সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সকল পক্ষের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলছেন, যে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, "হোটেলে চেক-ইন করার সময়, কারো যদি বুকিং করে অনলাইনে টাকাও পরিশোধ করা থাকে তবুও মাস্ক না পরলে, দূরত্ব বজায় না রাখলে তাকে চেক-ইন করতে দেয়া হবে না। মাস্ক ছাড়া উপায় নেই।"
পর্যটকদের কোচগুলোতে একটি করে আসন বাদ দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হবে।
ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আহমেদ জানিয়েছেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের কাছে যারা বিভিন্ন সুভ্যেনির বিক্রি করেন, সেখানে যারা গাড়ি সরবরাহ করেন, ট্যুর গাইড, রেস্টুরেন্টের কর্মী তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এমনকি রান্না ঘরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কিভাবে হবে সেটিও বলে দেয়া আছে সরকারি নির্দেশাবলীতে।
খুশিতে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
"অনেক দিন কোথাও বেড়াতে যাই না। দম বন্ধ হয়ে আসছে," কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈদ কানন।
তিনি বলছেন, সেই জানুয়ারি মাসে রাঙামাটি গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই ঢাকা শহরের ইঁটের জঙ্গলে বন্দি হয়ে রয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
"আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায়ই বেড়াতে যাই। এখন দেখছি ঢাকায় মানুষজন যেভাবে চলাফেরা করছে, তাতে ঢাকায় থাকলেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়ে যায়। কিন্তু একটু ব্রেক দরকার। নিজেকে নিরাপদ রাখার যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করবো।"
তার ভাষায়, "রিস্ক নিয়েই ঘুরতে যাচ্ছি। ব্যাপারটা এরকম যে অ্যাকসেপ্ট করে নেয়ার মতো। করোনাভাইরাস আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। সেটা মেনে নিতে হবে। কিন্তু জীবনের আনন্দের জন্যেও একটু চেষ্টা করা"
তবুও যে ঝুঁকি রয়ে যায়
ঝুঁকি তবুও রয়ে যায়, বলছিলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, আইইডিসিআরের ভাইরলজি বিভাগের প্রধান ডা. তাহমিনা শিরিন।
তিনি বলছেন, বিশ্বের বেশ কিছু দেশে পর্যটনের জন্য সৈকত বা বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেয়ার পর সংক্রমণের বৃদ্ধি পেয়েছে। পরে আবার সৈকত বা বিনোদন কেন্দ্র বন্ধও করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার এখনো ২০ শতাংশের উপরে এবং শনাক্তের হার লম্বা সময় ধরে একই রকম আছে।
ডা. তাহমিনা শিরিন, "যেমন লোকে বিচে নামলে মাস্ক ভিজে গেলে সেটা খুলে ফেলবে। রেস্টুরেন্টে মাস্ক খুলেই খেতে হবে। অতএব একটা ঝুঁকি রয়েই যায়।"
তিনি বলছেন, "সৈকত যেহেতু খোলা জায়গা তার থেকে ঝুঁকি বেশি রেস্টুরেন্ট বা কেনাকাটার যায়গাগুলোতে। সেক্ষেত্রে এসব যায়গায় কতজন আসতে পারবেন সেটা নিশ্চিত করা দরকার।"
রেস্টুরেন্টে ওয়েটারদের মাস্ক পরতে হবে, খাবার টেবিলগুলোতে টেবিলের দূরত্ব ছয় ফিট রেখে বসানোর কথা বলছিলেন তিনি।
তিনি বলছেন, "স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা সেটি দেখার জন্য পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ যতই থাকুক না কেন মুল দায়িত্ব কিন্তু শেষ পর্যন্ত পর্যটকের নিজের।"
এসি