বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতে যুক্তরাজ্যকে বিনিয়োগের আহ্বান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:০৬ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২০ বুধবার
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানী, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও নার্সিং প্রভৃতি খাতে বৃটিশ বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। আজ এক আলোচনায় সম্ভাবনাময় এসব খাতে যুক্তরাজ্যকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তারা।
নির্ধারিত আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান, ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে’র চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বেসিস’র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোক্তাদির, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং রহিমআফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম অংশগ্রহণ করেন।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সিইও আহসান খান চৌধুরী বৃটেনে বাংলাদেশী পণ্য ও সেবা রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে দুদেশের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বাংলাদেশী কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি হারে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে প্রবর্তিত ‘বাংলা বন্ড’-এ বিনিয়োগ করার প্রস্তাব করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শরীফা খান জানান, বৃটিশ সরকার ২০২৭ পর্যন্ত বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও কোটা মুক্ত সুবিধা প্রদান করছে এবং বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোর বিষয়টি আলোচনাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য পণ্যের বহুমুখীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানী, পর্যটন, স্বাস্থ্য ও নার্সিং প্রভৃতি খাতে বৃটিশ বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
রহিমআফরোজ স্টোরেজ পাওয়ার বিজনেস-এর নির্বাহী পরিচালক ফারাজ এ রহিম, বৃটেনে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের পণ্য রপ্তানির উপর জোরারোপ করেন এবং বাংলাদেশে বৃটিশ বিনিয়োগ আকর্ষনে আমাদের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সাথে যুক্তরাজ্যের কোম্পানীগুলোকে যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ইনস্পেটা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোক্তাদির বৃটেনে বাংলাদেশী ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের নিবন্ধন পেতে সেদেশের এমএইচআরএ-এর সাথে বাংলাদেশী ঔষধ নিয়ন্ত্রন সংস্থার যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশস্থ বৃটেনের দূতাবাসকে সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ডের জেনেরিক বাজার রয়েছে, যা আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এছাড়াও তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞান বিষয়ে বাংলাদেশের মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে বৃটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাস খোলার প্রস্তাব করেন।
বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, সফটওয়্যার এবং তথ্য-প্রযুক্তি সেবাখাতে গতবছর বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখাতে পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাজ্যর অবস্থান দ্বিতীয়। তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট তৈরিতে নিয়োজিত যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের হাইটেক পার্কে বিনিয়োগের আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় বৃদ্ধি পাবে।
ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন খালেদ বলেন, তৈরি পোষাকের বাইরে বৃটেনে বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ৭ শতাংশ এবং এ অবস্থা উত্তরণে আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণের কোন বিকল্প নেই। তিনি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাস এবং ভ্যালু চেইন স্থাপনের প্রস্তাব করেন। হোসেন খালেদ বলেন, বাংলাদেশের সেবাখাতে বৃটিশ বিনিয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ লক্ষ্য পূরণে দুদেশের উদ্যোক্তাদের যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বৃটেনে বাংলাদেশী তৈরি পোষাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাড়িঁয়েছে। তিনি জানান, শীঘ্রই বাংলাদেশের দুটো পুঁজিবাজারই অটোমেশন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং বৃটিশ কোম্পানীগুলোকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও বিল্ড’র চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, সম্প্রতি চায়না বাংলাদেশী প্রায় ৩০০০ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করেছে, তিনি এ সুযোগ গ্রহণ করে বৃটিশ কোম্পানীসমূহকে আরো বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষনে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত উন্নয়নে জিডিপি’র ৬ শতাংশ বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন, যেটি বর্তমানে রয়েছে প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ। পাশাপাশি তিনি বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়ানোর উপরও গুরুত্বারোপ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
আরকে//