ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

সাক্ষাৎকারে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

করোনা হাসপাতালের সিট ফাঁকা যেসব কারণে (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:০৮ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:০৮ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার

একুশে টেলিভিশনের ‘জানতে চাই, জানাতে চাই’ অনুষ্ঠানে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

একুশে টেলিভিশনের ‘জানতে চাই, জানাতে চাই’ অনুষ্ঠানে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি বিবেচেনায় দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ সরকারি কিছু হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে এবং অস্থায়ী হাসপাতাল বানিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার উদ্যোগ নেয়। করোনার প্রথমদিকে দেখা গেছে, একটি সিট পেতে ধরনা দিতে হয়েছে দিনের পর দিন। আইসিইউ এমনকি ভর্তির জন্য রোগী নিয়ে অনেকে দৌঁড়ঝাপ করতে হয়েছে। কিন্তু এখন সেই চাপ নেই, নেই কোনো পেরেশানি। ইতিমধ্যে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। এখন অধিকাংশ ওয়ার্ড প্রায় ফাঁকা। ভর্তি হওয়ার সংখ্যা খুবই কম। 

হঠাৎ করে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়া বা সিট ফাঁকা থাকা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্তের হার কম হচ্ছে, নাকি  যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা হাসপাতালে যাচ্ছে না-এ বিষয়ে কথা বলেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ইউজিসি অধ্যাপক, প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

একুশে টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন ‘জানতে চাই, জানাতে চাই’ অনুষ্ঠানে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এর সঙ্গে অনেকগুলো ফ্যাক্টর জড়িত। আমাদের দেশে প্রথম শনাক্ত হয় মার্চের ৮ তারিখ। শুরুতে মারাত্মক ভীতিকর অবস্থা ছিল পুরো দেশে। একটা কথা স্বীকার করতেই হবে, প্রথমে আমরা কিন্তু ভীতিকর সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছিলাম। এমনকি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে এ হসপিটাল ও হসপিটাল ঘুরতে ঘুরতে রোগী মারাও গেছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিও মারা গেছে। এ রকম অবস্থা একটা ছিল, তবে বর্তমানে ওই অবস্থাটা কিন্তু নাই। কোভিড সরকারি কিংবা বেসরকারি হসপিটালে এখন অনেক সিট ফাঁকা। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে, একটা হলো- মানুষের মধ্যে ভীতিভাব অনেকটা কেটে গেছে, জনগণ করোনা সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনে গেছে তারা এখন নিজেরাই ওষুধপত্র নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে এই উন্নতি লক্ষ্যণীয়। জনগণ এখন যথেষ্ট সচেতন। 

তিনি বলেন, দ্বিতীয় কথা হলো, অনেকেই কিন্তু ঘরে বসে চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। টেলিমেডিসেন কিংবা টেলিফোন এবং ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাতে কিন্তু ৮০ ভাগ রোগী ভাল হওয়া সম্ভব। করোনা হলেই যে আতঙ্ক ছিল সেটা কেটে গেছে। মানুষ বুঝতে পারছে, ঘরে বসে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। ঘরে বসে চিকিৎসা নেয়া ভালো। কেননা হসপিটালে গেলে অনেকে ভয় পায় প্রচুর রোগী তো, আবার কারও মধ্যে থেকে আক্রান্ত হয়ে বেশি সিরিয়াস হওয়ার ভয়ও থাকে। বেশিরভাগ রোগী যেহেতু ভাল হয়ে যাচ্ছে সুতরাং ঘরে থাকলেই ভাল। অধিকাংশের সিমটম মাইল্ড বা মৃদু, তারা কেন হাসপাতালে যাবে। হাসপাতালে যেতে হয় ১০ কিংবা ২০ ভাগ রোগীদের ক্ষেত্রে।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনও অনেকে অসচেতন, সে ক্ষেত্রে আপনি কী বলবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন,  প্রথমত কোভিড-১৯ এর সুনির্দিষ্ট কোন ড্রাগ নাই। সুতরাং যেগুলো বাজারে আছে সেগুলো কিন্তু করোনার জন্য এস্ফিসিফিক না। এগুলো অন্য রোগের জন্য ওষুধ, তবে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ওগুলোই করোনাতে ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। এগুলো এন্টি ভাইরাল হিসেবে আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। এর মধ্যে কয়েকটি ওষুধ আছে- আইভারমেকটিন একটা, এর সাথে আমরা ডক্সিসাইক্লিন দেই। এটি খুব পপুলার। এছাড়া ফেভিপিরাভিট, র‌্যামডিসিভির আছে, এমনকি প্লাজমা থেরাপি দেয়া হচ্ছে। এগুলো মানুষ সবাই জানে। কিন্তু এগুলো নিজেরা কিনে না খেয়ে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা ডাক্তার কার কতো ডোজ দিবে, কিভাবে দিবে, বয়স্ক মানুষের কত হবে, বাচ্চার কত, মহিলাদের জন্য কত, প্লেগনেন্ট মহিলার কত হবে তা নির্ধারণ করে থাকেন। এই জন্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া যেকোন ওষুধের সাইড ইফেক্ট আছে, অর্থাৎ যে কোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিলে সাইড ইফেক্ট হয়েও থাকলে ডাক্তারই সেটা কাউন্টার ট্রিটমেন্ট দিতে পারবেন। সুতরাং জনগণের জন্য একটা কথা বলবো ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন, প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কিন্তু মেডিসিন খাবেন। যদিও ৮০ ভাগ রোগী ভালো হয়ে যাবেন, তাতে কিন্তু সন্দেহ নাই। তারপরও কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। টেলিফোন, টেলিমেডিসিনের সাহায্য নেয়া যেতে পারে, যাতে কোন ঝামেলা না হয়। 

তিনি বলেন, যদিও আমরা মাইল্ড রোগীদের ঘরে থাকতে বলি। কিন্তু কার কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হয়, থোকা থোকা রক্ত জমাট, অন্য কোন জটিলতা মনে হলে আপনারা জোর করে ঘরে থাকবেন না। বিশেষ করে আজকাল অক্সি মিটার দিয়ে অক্সিজেন মাপা যায়, যদি ৯৪ বা ৯৩ এর নিচে চলে আসে কারও ক্ষেত্রে ৯০ কিংবা ৮৫ হলে জোর করে ঘরে থাকবেন না। তাদের কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভাল। তাদের অক্সিজেন লাগতে পারে, অক্সিজেনের কত ডোজ কিভাবে লাগবে সেগুলো তো ডাক্তারই এডজাস্ট করে দিবে। সুতরাং এরকম হলে ঘরে না থাকাই উচিত। ওই সময় সতর্ক হবেন আর হাসপাতালে আসবেন। হাসপাতালে বেড খালি আছে, অনেক জায়গায় ইজিলি পাওয়া যায়। ইভেন অনেকে আইসিইউ ভয় পান, এটাতে ভীতির কোন কারণ নাই। ১ থেকে ৫% লোকের আইসিইউ লাগে। সবার কিন্তু আইসিইউ লাগবে না। সুতরাং অক্সিজেন যদি কমে যায়, বুকে ব্যথা করে, জায়গায় জায়গায় রক্ত জমাট হচ্ছে বা অন্য কোন কিছু মনে হলে অবশ্যই হাসপাতালের স্মরণাপন্ন হবেন। যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকে সময় মতো চিকিৎসা না নেওয়ার জন্য।

এই মুহূর্তে শুধু করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি রয়েছে, সেক্ষেত্রে করণীয় কী এমন প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এটি খুব ইমপর্টেন্ট প্রশ্ন, গতবার এই সময়টাতেই মারাত্মক ডেঙ্গু অবস্থা ছিল। অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে আবার অনেকেই মারা গেছেন। ওই সময় কিন্তু হাসপাতালগুলো সয়লাভ, বেড পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এবার আল্লাহর রহমতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ অতটা নাই। আগামী দুই একমাস যদি এভাবে চলতে পারি তাহলে আশা করি ডেঙ্গু আর বাড়বে না।

এএইচ/এমবি