মিরসরাইয়ে ৭১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার, ৪৬টি মামলা দায়ের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩৫ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৩৬ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার
চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত চার মাসে ৬৮টি বিশেষ অভিযানে ৭১ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ও মাদক সংক্রান্ত ৪৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মাদকের খুচরা ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এলাকাবাসীর দাবি, ছোট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে তাহলে মাদক নির্মূল সম্ভব হবে না।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তালবাড়িয়া রেল স্টেশনে এলাকায় মাদক থেকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা উপলক্ষে অনুষ্ঠানে তাদের মাঝে কৃষিজমি,বিভিন্ন জাতের ফলজ চারা, ও বীচ বিতরণ করা হয়।
প্রতিটি পরিবারকে ১০টি লেবুর চারা, ৪৩গ্রাম শিমের বিচি,১০গ্রাম লাউ বিচি,১০গ্রাম বরবটি বিচি,২৫০গ্রাম লালশাক বিচি, ৫০গ্রাম বেগুনের বিচি ও একটি কীটনাশক স্প্রে ড্রাম বিতরণ করা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন,মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান পিপিএম ৯নং মিরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এমরান উদ্দিন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রভাষক সালাউদ্দিন লাভলু, সাংবাদিক মো. হাসান প্রমুখ।
চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মাদকের হাট মায়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজার জেলা হয়ে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সারাদেশে মাদক পাচারের সহজ রুট হচ্ছে ঢাকা -চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মিরসরাই উপজেলার উপর দিয়ে জাতীয় মহাসড়ক হওয়ায় মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন স্পটে মাদকের ব্যাপক ছড়াছড়ি ও সহজলভ্য হয়ে উঠে। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে টিনেজ বয়সী স্কুল কলেজগামী যুবকদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়তে থাকে। পরিবারের অভিভাবক, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
হতাশার মধ্যে গত চার মাস আগে মিরসরাই থানায় বদলি হয়ে মিরসরাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন মুজিবুর রহমান (পিপিএম) যখন সারাদেশে দুয়েকজন বিপদগামী পুলিশ অফিসারের কারণে পুলিশের কষ্টার্জিত ভাবমুর্তি প্রশ্নবিদ্ধ। ঠিক সেই সময়ে একজন ওসি মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মাদকমুক্ত মিরসরাই গড়ার সাহসী পদক্ষেপ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। মানুষের কাছে পুলিশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
গত চার মাসে মিরসরাই থানার ৬৮টি বিশেষ অভিযানে ৭১ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ও মাদক সংক্রান্ত ৪৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, মাদকের ছোট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।
জানা গেছে, মিরসরাই থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান (পিপিএম) মিরসরাই থানায় যোগদান করেন চারমাস আগে। যোগদানে পর তিনি মিরসরাই থানার আওতাধীন ৮টি ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত করার ঘোষনা দেন। ঘোষনার পর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা পেয়ে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেন । একের পর এক আসতে থাকে সফলতা। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মাদক নির্মূল ও অপরাধ রোধে থানার উদ্যেগে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বীট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মিরসরাই পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে বিট পুলিশ কার্যালয় উদ্বোধন শুরু হয়েছে। একজন পুলিশ অফিসার প্রতিটি বিটের দায়িত্বে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, মাদক নির্মুল, চুরি, মহাসড়কে ডাকাতি ও অবৈধ পাচার রোধে পুলিশের এমন উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়েছেন মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ। গত চার মাসে দেশী-বিদেশী অস্ত্র উদ্ধার, একাধিক মামলার আসামি,আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার, মহাসড়কে ছিনতাকাইকারী চক্রসহ বেশ কিছু অপরাধী গ্রেফতার হয়েছেন।
মিরসরাই থানা সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসে মাদকের মামলা একটি, ১০৫ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার ও এক মাদক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার। এপ্রিল মাসে মাদকের মামলা দুটি, ৬৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫০ লিটার চোলাইমদ উদ্ধার। আটজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত মামলায় ১০ জন ও গ্রেফতারী পরোয়ানা মূলে ১৮৮ জন গ্রেফতার।
মে মাসে মাদক সংক্রান্ত ১২টি মামলা হয়েছে। ৩৪৬ পিস ইয়াবা ও ১১৫ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারের পাশাপাশি ২০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ওই মাসে একটি বিদেশী পিস্তল, চার রাউন্ডগুলি, ১৫৮৩ কেজি ওএমএস এর চাল, ৭০ কেজি চোরাই ডাল, পরিত্যক্ত একটি মোটরসাইকেল, নগদ ৫৫৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। নিয়মিত মামলায় আসামি ১৬ জন ও গ্রেফতারী পরোয়ানা মূলে ৫৮ জন এবং তিনজন ডাকাত গ্রেফতার হয়েছে। জুন মাসে মাদকের ছয়টি মামলা হয়েছে। ৯০ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০ লিটার চোলাইমদ, ১২৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। আটজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে।
এছাড়া একটি বিদেশী পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, ১০টি চোরাই মোবাইল সেট উদ্ধার হয়েছে। নিয়মিত মামলায় আসামি ১৪ জন, গ্রেফতারী পরোয়ানা মূলে দু’জন ও দু’জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুলাই মাসে ২৩টি মাদক মামলা হয়েছে। ৩০৪৯ পিছ ইয়াবা, ২৭০ লিটার চোলাইমদ, ১৮ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। ৩২ জন মাদকব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া দুটি চোরাই মোবাইল সেট, দুটি চোরাই গরু, গরু চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি মিনি পিক-আপ গাড়ি উদ্ধার করা হয়। নিয়মিত মামলায় ৩৭৮ জন আটক হয়েছে।
চলতি আগস্ট মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩০ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০ লিটার চোলাইমদ উদ্ধার ও দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কেআই//