নড়াইলে পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৩৮ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২০ শনিবার
এ বছর বোরো ধানের ভালো দাম পেয়ে পাটচাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। তাই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। তবে চারা অবস্থায় আগাম বর্ষা হওয়ায় পাট বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। তবুও পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।
বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি মণ নতুন পাট বিক্রি হচ্ছে ২৩শ’ থেকে ২৪শ’ টাকায়। অথচ মওসুমের শুরুতে মণপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, আপাতত পাটের দামে কোনো কমতি নেই। এই অবস্থা চলমান থাকলে পাট বিক্রি করে কৃষকেরা লাভবান হবেন। পাট চাষাবাদসহ কৃষি কাজে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে।
নড়াইল সদরের ভান্ডালিপাড়ার মোহাম্মদ সলেমান ও আসলাম হোসেনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, এ বছর আগাম বর্ষা হওয়ায় পাট বড় হয়নি। বীজ বপনের পর থেকে চারা বড় হওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় ফলন বিপর্যয় হয়েছে। তবে মওসুমের শুরু থেকেই পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি সবাই। শেষ পর্যন্ত পাটের উচ্চমূল্য থাকলে তাদের কোনো লোকসান হবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সবার সুনজর প্রয়োজন। এতে কৃষি অর্থনীতি গতিশীল হবে।
লোহাগড়া উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, ‘গেল বোরো মওসুমে কৃষকেরা ধানের ভালো দাম পেয়ে কৃষিকাজে উৎসাহ পেয়েছেন। অন্যবারের চেয়ে মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে ধান বিক্রি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষকদের পাটচাষে আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের দাবি, হঠাৎ করে যেন পাটের দরপতন না ঘটে; সেদিকে সরকারের সুদৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, এ বছর সরকারি অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা পাটের ন্যায্য মূল্য পাবেন কী-না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। যদিও নড়াইলের হাটবাজারগুলোতে সেই প্রভাব নেই। পাটের ভালো দাম পেয়ে আমরা খুশি সবাই।’
এদিকে লোহাগড়ার এড়েন্দা হাটের পাট ব্যবসায়ী রাসেল শেখ জানান, ‘এ বছর শুরুতে প্রতিমণ পাট ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা বিক্রি হলেও এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে তা ২৪০০ টাকা হয়েছে। প্রতি হাটেই পাটের দাম বাড়তি রয়েছে। আপাতত দামের কোনো কমতি নেই। আজ শনিবার লোহাগড়ার এড়েন্দা এবং গত বুধবার (১৯ আগস্ট) শিয়েরবর হাটে এই দামে (২৪০০ টাকা) পাট বিক্রি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি দামে পাট বিক্রি হচ্ছে।’
গত বছরের শেষদিকে পাটের দাম নেমে মণপ্রতি ২০০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। প্রথম দিকে দাম ছিল ১৮০০ থেকে ২৩০০ টাকার মধ্যে। অল্প কয়েকদিন ২৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। এ বছর অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও সবমিলে গড়ে এ বছর পাটের দাম ভালো যাচ্ছে বলেও জানান এই পাট ব্যবসায়ী।
নড়াইল সদরের তুলারামপুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতরা জানান, এখানে সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার হাট বসে। প্রতি হাটেই পাটের জমজমাট বেচাকেনা চলছে। ভালো মানের পাট মণ প্রতি ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক সমবায় সমিতি সদর উপজেলা সভাপতি আলী হায়দার লিটু জানান, ‘তিন একর জমিতে পাটের আবাদ করেছি। ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পেরে আমিসহ এলাকার কৃষকেরা খুশি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অনুজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘পাট চাষে নড়াইল একটি সমৃদ্ধশালী জেলা। এখানে প্রতিবছরই পর্যাপ্ত পাটচাষ হয়ে থাকে। এ বছরও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ বেশি হয়েছে। ২১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ২২ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। আশা করছি শেষ পর্যন্ত কৃষকেরা ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারবেন।’
এআই/এমবি