ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

একে একে ১২টি বিয়ে, অতঃপর...!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:১২ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১০:২৯ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২০ শনিবার

আবুল হোসেন (ভেন্ডার)

আবুল হোসেন (ভেন্ডার)

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদপাড়া এলাকার আবুল হাসেমের (৫৫) বিরুদ্ধে বিয়ের পর একাধিক নারীকে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ডজন খানেক বিয়ে করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এই খলনায়ক।

স্থানীয়রা জানান, আবুল হোসেন (ভেন্ডার) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কিসামত শুখানপুখুরী গ্রামের মৃত ওসমান গনির ছেলে। আগে সে ছোট্ট একটা পানের দোকান করতো। এখন সে স্ট্যাম্প ব্যবসায়ী। অসৎ উপায়ে অনেক টাকার মালিক। প্রথম স্ত্রীকে বিয়ের পর শ্বশুর মারা গেলে সু-কৌশলে(!) শ্বশুরের জায়গা-জমি সব লিখিয়ে নেয় নিজের নামে। এই থেকে তার উত্থান।

সদর উপজেলার বালিয়া আদর্শপাড়ার আলমগীর হোসেন বলেন, হাসেম ভেন্ডার একজন লম্পট, চরিত্রহীন, মাদক ব্যবসায়ী এবং অসৎ প্রকৃতির মানুষ। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তার এক ছেলেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। বিয়ে করা তার নেশা। একাধারে সে পঞ্চগড় জেলার ময়দান দীঘি, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া, আখানগর, জগন্নাথপুর বাহাদুর পাড়া, মাদ্রাসাপাড়া, আদর্শ বাজার কলোনী পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ১২টি বিয়ে করে সে। এছাড়াও নামে, বে-নামে অনেক বউ আছে এই খল-নায়কের। 

একই কথা বলেন ওই এলাকার রাসেল ইসলাম, রাজু ইসলামসহ অনেকে। তবে, ভয়ঙ্কর এক চিত্রের বর্ণনা দিলেন হাসেমের এক স্ত্রী। তিনি বলেন, আবুল হাসেন একজন ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোক। তার নির্যাতনের কথা আমি বলে শেষ করতে পারবো না। সে আমাকে এমন জায়গায় এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, যা কাউকে দেখাতে বা বলতে পারতাম না। ঘরের মধ্যে সব সময় তালাবদ্ধ করে রাখতো। বাথরুমে যেতে চাইলেও পারতাম না। অনেক সময় বাইরে যেতে না পেরে ডিসের (গামলা) মধ্যে প্রসাব করেছি। তার ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকতাম। সে ছলচাতুরী করে আমার বাবার দেয়া জায়গা-জমি লিখে নিয়েছে। সে আমাকে মারার জন্য অনেক কৌশল করেছে। আমার মা-ভাই-বোনদের পথে বসিয়েছে। প্রতিবাদ করলেই চালায় আমার উপর পাশবিক নির্যাতন।

শহরের সালন্দর মাদ্রাসাপাড়ায় বসবাস করা আরেক স্ত্রী বলেন, হাসেম ভেন্ডার একজন অসৎ প্রকৃতির মানুষ। সে আমার ওপর প্রায় সময় নির্যাতন চালাতো। ভরণপোষণ ঠিকমত দিত না। সে সু-কৌশলে আমার কাছে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপমান মূলক কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমাকে নাকি ডিভোর্স দিয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে সে গত জুলাই মাসে আমাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে রংপুর নিয়ে হোটেলে থাকলো কেন? তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, হাসেম ভেন্ডার একজন খারাপ প্রকৃতির মানুষ। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। স্থানীয়ভাবে অনেক বিষয় মিমাংসা করা হয়েছে। সে ১৯ আগষ্ট আমার এলাকায় বিয়ে করতে এসে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে। পরে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদে মিমাংসা হয়। সদর উপজেলার বালিয়া আদর্শ বাজার কলোনী পাড়ায় এ নিয়ে তার ৩টি বিয়ে হলো। 

এছাড়াও পঞ্চগড় জেলার ময়দান দীঘিতে বসবাস করা হাসেমের আরেক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছিল।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. নূর এ আলম সিদ্দিকী বলেন, হাসেম ভেন্ডারের বিয়ে করাটা নেশায় পরিণত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আবুল হাসেম (ভেন্ডার) ঘটনার সত্যতা শিকার করে মুঠোফোনে বলেন, বিয়ে আমার প্রয়োজন ছিল সে জন্য করেছি। এটা তো তেমন কোন বিষয নয়।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তানভিরুল ইসলাম বলেন, শহরের মাদ্রাসাপাড়া মহল্লার এক নারী হাসেম ভেন্ডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিল। আমরা ওই নারীকে পারিবারিক আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। 

এনএস/