ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৮ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২২ ১৪৩১

‘ভ্যাকসিন যেখানে দ্রুত মিলবে সেখান থেকেই নেয়া হবে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:২৬ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৬:০৩ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২০ সোমবার

বিশ্বের যেখান থেকেই দ্রুত ও সাশ্রয়ী মূল্যে করোনার কার্যকর ভ্যাকসিন বা টিকা পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ ভ্যাকসিন উৎপাদনের অ্যাডভান্স স্টেজে চলে গেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, চায়নার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও রাশিয়া অ্যাডভান্স স্টেজে আছে। এছাড়া আমেরিকায় ফাইজা এবং মডার্না অ্যাডভান্স স্টেজে আছে।

সোমবার (২৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব রোধে তাইওয়ান সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা গত জুলাই মাসেই এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, যখন তারা ভ্যাকসিন পাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত দিতে পারবে। এমন আশ্বাস তাদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি।

তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে আছে তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা জানিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীই নেবেন। যখন সময় হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত পেয়ে যাব। সে সিদ্ধান্ত পেলেই আমরা জানাতে পারব।

ভ্যাকসিনের বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো আঞ্চলিক রাজনৈতিকের শিকার হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটা স্বাস্থ্যসেবার বিষয়। কোভিড-১৯ একটি বৈশ্বিক মহামারি। পৃথিবীর সব দেশেই এটা ছেয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ মারা গেছেন। বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। কাজেই এগুলো নিয়ে কোনো রাজনীতির জায়গা হয় না।

তিনি বলেন, যখন ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং সেটা কার্যকরী ও অ্যাভেলেবল হবে, যে ভ্যাকসিনটা সাশ্রয়ী দামে তাড়াতাড়ি পাব আমরা সেটিই সংগ্রহ করব।

রাশিয়ায় ইতোমধ্যে করোনার ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ কি সে ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য কোনো চেষ্টা চালাচ্ছে- জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমাদের অ্যাম্বাসি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুই জায়গা থেকেই যোগাযোগ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরও এ বিষয়ে অবহিত আছেন। সব জায়গায় যোগাযোগ করা হচ্ছে সময় মতোই আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ দিয়ে সঠিক ভাবেই কোভিড-১৯ মোকাবেলা করছে। এখন প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। এ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। শুরু থেকেই দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে আসছে। আগামীতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আমরা আমরা করি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়ালটন স্বাস্থ্য সেবায় সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তাইওয়ানের এ সহযোগিতা আমাদের কাজে লাগবে। পৃথিবীর অনেক দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরও উন্নত হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে সকলকে চলতে হবে, এতে আমরা সকলেই নিরাপদ থাকবো।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কোভিড-১৯ সারা দুনিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ এবং সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করছেন।

মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সাধ্যের সবটুকু দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেশের ৬৪টি জেলায় বিনা মাশুলে স্বাস্থ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। কলসেন্টার ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি এবং টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জীবনযাত্রা গতিশীল করার চেষ্টা করছি। করোনাকালেও গ্রামের মানুষটি পর্যন্ত  উপলব্ধি করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ না থাকলে বৈশ্বিক মহামারির এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হতো।

আজকের বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষার্থীও ইন্টারনেট দাবি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালেও দেশে আট জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র আট লাখ। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ এর দিকনির্দেশনায় ডিজিটালাইজেশনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচীত হয়েছে। দেশে আজ ২১শত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে এবং দেশে ১০ কোটির বেশি মানুষ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তিনি দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, বাঙালি বীরের জাতি করোনা থেকেও আমরা জয়ী হবো।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ১ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, ১৬০০ এ-৯৫ মাস্ক, ২০ হাজার কাপড়ের মাস্ক, ১০ হাজার ফেস ফিল্ড, ৫০০ পিপিই, ২০০ গগলস এবং ২ সেট ভেন্টিলেটর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে।

সভায় বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর-উর-রহমান বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও কম্পিউটার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, ঢাকাস্থ তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক তিথমি ডব্লিউ ডি সো এবং ম্যানেজর রঞ্জন চক্রবর্তী।

আরকে//টিআই