নিরাপদ খাদ্যাভাস সুস্থ শিশু
ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন
প্রকাশিত : ১২:৫৪ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:০০ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার
বাড়ন্ত শিশুদের বয়স উপযোগী পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের মায়ের দুধের পাশাপাশি কখন ও কীভাবে সম্পূরক খাবার দিতে হয় সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পান না। অথচ শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের সময় পুষ্টিহীনতা এড়াতে এটা খুবই জরুরি বিষয়। সীমিত আয়ের পরিবারগুলো মাছ- মাংসের মতো প্রাণিজ আমিষ সব সময় কিনতে পারে না। শিশুকে বয়স উপযোগী পরিপূরক খাবার দেওয়ার হার জাতীয়ভাবেই বেশ কম এবং কিছু কিছু এলাকা যেমন শহরের বস্তি এলাকায় এই হার আশঙ্কাজনকভাবে কম।
ইউনিসেফের জরিপে দেখা যায়-
১. মাত্র এক তৃতীয়াংশ শিশুকে বয়স অনুসারে প্রয়োজনমতো সম্পূরক খাবার দেওয়া হয়।
২.মাত্র ২৩ শতাংশ শিশুকে নবজাতক ও ছোট শিশুদের খাওয়ানোর নিয়ম মেনে খাবার দেওয়া হয়।
৩. মায়ের প্রথম দুধ বা শাল দুধ খাওয়ানোর হার মাত্র ৫১ শতাংশ।
৪. ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সালে নিয়মিতভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৯০ শতাংশ থেকে কমে ৮৭ শতাংশ হয়েছে।
এছাড়া আরেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশি মায়েরা প্রায়ই সন্তানের জন্য ফর্মুলা খাবার পছন্দ করেন এবং স্বামীকে মাছ-মাংস কেনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হন।
কোনো কোনো কমিউনিটিতে শিশুকে মাছ ও মাংস খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কুসংস্কার রয়েছে। কখনও কখনও বাড়িতে এসব খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও ছোট শিশুদের তা দেওয়া হয় না।
জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে নবজাতককে অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ, যেটা ‘শাল দুধ’ নামে পরিচিত তা খাওয়াতে হবে। এই দুধে এমন অনেক উপাদান থাকে যেগুলো নবজাতককে সাধারণ কিছু অসুখ যেমন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়।
কিন্তু প্রাথমিক এই ব্যবস্থা নেওয়া এবং দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো পরিবারের সংখ্যা এখনও অনেক কম। ভৌগোলিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক অবস্থার বিচারেও এক্ষেত্রে অসমতা রয়েছে। সিলেট বিভাগে শিশুকে ‘শাল দুধ’ খাওয়ানোর হার ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও খুলনায় তা ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
দরিদ্র এবং ধনী পরিবারের মায়েদের মধ্যেও সন্তানকে শাল দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে। দরিদ্র মায়েদের ক্ষেত্রে এই হার ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ হলেও ধনী পরিবারের মায়েদের ক্ষেত্রে তা ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও এটা আবার উদ্বেগজনকভাবে কমে আসছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সালে নিয়মিতভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৯০ শতাংশ থেকে কমে ৮৭ শতাংশ হয়েছে।
শাল দুধে এমন অনেক উপাদান থাকে যেগুলো নবজাতককে সাধারণ কিছু অসুখ যেমন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষার জন্য জরুরি। পুষ্টিকর উপাদান নিশ্চিত করা এবং শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে তাকে সিরিয়াল এবং শাকসবজিও ডিমের মতো পারিবারিক খাবার চটকে খাওয়াতে হবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে অন্যান্য পারিবারিক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাইয়ে যেতে হবে। একেই বলে পরিপূরক খাবার খাওয়ানো।
এর মধ্য দিয়ে শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়া থেকে পারিবারিক খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়। শিশুর ক্রমবর্ধমান পুষ্টি চাহিদা পূরণে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বে ছয় মাস থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং এমন একটি সময়ে এটা হয় যখন তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।
এই পর্যায়ে পুষ্টির ঘাটতি ও অসুস্থতা বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চ হারে পুষ্টিহীনতার জন্য দায়ী তবে সময়মতো পরিপূরক খাবার দেওয়া শুরু করা, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়বার করে খাওয়ানো এবং খাবার তালিকায় কী কী ভিন্নতা আনা উচিত সে বিষয়ে বাবা-মার জ্ঞান খুব সীমিত। পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে পুরো জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশ শিশুকে তার প্রয়োজনমতো খাবার দেয়া যায় না।
শিশুদের ৬মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ৬-৮ মাস মায়ের দুধের সাথে বাড়তি খাবার দিতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩ বার ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার দিতে হবে। খাবারের পরিমাণ ২৫০মিলি বাটির অর্ধেক দিনে ২বার। খাবার তৈরীর সময় (ডাল, ভাত, শাক/সবজির সাথে মাছ/মাংস, ডিম) এ উপাদান থাকবে।
প্রতিদিন কলিজা, ব্রেইন এগুলো খাওয়াতে হবে। তবে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের সময় হাত ধৌত করতে হবে। ৯-১১ মাসঃ উপরোক্ত খাবারগুলো চলবে ৩বাটি ২৫০মি.লি. অর্ধেক বাটি করে খাওয়াতে হবে ১২-২৩মাসঃ ৩বাটি ২৫০মি.লি.পূর্ণভাবে খাওয়াতে হবে।
শিশুকে বাজারজাত খাবার পরিবর্তে ঘরে তৈরী বাড়তি খাবার দিতে হবে। তাতে শিশু সুস্থ থাকবে। সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য শিশুদের মানসম্মত খাবার খাওয়ান।
লেখকঃ নার্সিং কর্মকর্তা, জেলা সদর হাসপাতাল কক্সবাজার
এমবি//