ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২০ ১৪৩১

বাউফলে সবজীর ক্ষতি ৫ কোটি টাকা

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:৩০ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার

সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণ আর অতি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে পটুয়াখালীর বাউফলে গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। পেঁপেসহ শাকসবজির ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ও আমনের বীজতলার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উপকূলীয় বাউফলের ফসল মৌসুমের ২০-২৫ দিনের ব্যবধান থাকে। এ সময় সমন্বিত সবজিঘেরসহ কৃষক উচু জমির গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি তুলছিল। জোয়ারের পানি আর টানা বর্ষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে পেঁপেসহ এই শাক-সবজি। অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর পানি নামতে থাকায় সামান্য ক্ষতি ও কিছু আংশিক ক্ষতি হবে আমনের বীজতলার।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- বরবটি, করোলা, বেগুন, ধুন্দল, জিঙে, কলমীশাক, পুঁইশাক, পেঁপেসহ অন্তত ২৫০ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি বিনষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ’ জন চাষী। তবে পেঁপে চাষীদের ক্ষতি শতভাগ। এছাড়া শতকরা ১৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানের বরজের। টাকার অঙ্কে শাকসবজির এই ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি হবে। ৫ হেক্টর আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ ও ১০ হেক্টর আংশিক ক্ষতি হবে নীচু এলাকায়। অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর পানি নামতে থাকায় আমনের বীজতলার ক্ষতির পরিমাণ কমে ১ পার্সেন্টে নামবে।

মমিনপুর গ্রামের সবজি চাষী কাদের ডাক্তার জানান, অমাবস্যা লাগোয়া সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে ৫-৬ দিনের টানা বৃষ্টিপাত আর তেঁতুলিয়া-লোহালিয়া নদীর অতি জোয়ারের পানিতে উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চলে ২০ হাজার হেক্টর আমনের বীজতলাসহ কয়েক শ’ পুকুর, মাছের ঘের ও বিপুল পরিমাণ সমন্বিত শাকসবজির ঘের-বাগান ভেসে যায়। চর ও নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এখন সূর্য উকি দিয়ে জোয়ারের চাপ কমে পানি নামতে থাকায় শুকিয়ে শাক-সবজি গাছ মরে যাচ্ছে। এতে শাক-সবজি চাষীদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। 

তিনি আরো জানান, জৈষ্ঠ্যের শেষ ও আষাঢ়ের শুরুর দিকে টানা বর্ষণে নষ্ট হওয়ায় কয়েক দফায় শাক-সবজির বীজ লাগাতে হয়েছে। এবার জোয়ারের পানি আর ভারি বর্ষণে মাঠঘাট, সবজির বাগান ভেসে যাওয়ায় নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের সবজি চাষী। অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, স্লুইসগেট তৈরী ও নদী-খাল ভরাট হওয়ায় সাগরে পর্যাপ্ত পানি নামতে পারছে না। আছে উত্তরাঞ্চলের বানের পানি আর জোয়ারের পানির চাপও। সামনে পূর্ণিমার জোয়ার। পূর্ণিমার জোয়ারের চাপে আবারো পানিতে প্লাবিত হলে সর্বনাশ হবে কৃষকের।

উপজেলার মূলভূখন্ড বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপ ইউপির চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক আলকাস মোল্লা বলেন, ‘বেড়িবাঁধ না থাকায় চন্দ্রদ্বীপের মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। কেবল কৃষি, মৎস্যই নয়; যোগাযোগ, সেনিটেশন-হাইজিনসহ সকল সেক্টরে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে চরবাসীর। পানিতে বিলীন হয়েছে পুরো চন্দ্রদ্বীপের কয়েশ’ কৃষকের শাক-সবজির খামার।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর লক্ষ্য মাত্রায় ১৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর স্থানীয় জাতের এবং ১৬ হাজার ৫শ’ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল জাতের আমনের বীজতলার মধ্যে নিম্নাঞ্চলে আনুমানিক ৫ হেক্টর বিনষ্ট ও ১০ হেক্টর আংশিক বিনষ্ট হতে পারে। অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী আর পানি নামতে থাকায় সর্বসাকুল্যে সামন্য ১ পার্সেন্ট বীজতলার ক্ষতি হবে। তবে ৫ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পেঁপে চাষীদের।’

এনএস/