মা-মেয়েকে নির্যাতন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ আসামি ৩০ জন
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:৪১ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৮:৪৫ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২০ মঙ্গলবার
নির্যাতিত সেই মা ও মেয়ে
কক্সবাজারের চকরিয়ায় মা-মেয়ের কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় উপজেলার হারবাং ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকাল ৫টার দিকে নির্যাতিত পারভিন বেগম বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী এ ঘটনায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাদেরকে মারধরের অভিযোগ এনেছেন। মামলায় আসামিদের মধ্যে আরও যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন- উত্তর হারবাং বিন্দারবান খিলের জিয়াবুল হকের ছেলে নাছির উদ্দিন (২৮), মাহবুবুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯) ও এমরান হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩২)।
মামলার বাদী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মৃত আবুল কালামের স্ত্রী পারভিন বেগম তার দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেছেন, তারা রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও বর্তমানে তারা সপরিবারে পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট কুসুমপুরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ওই বাসা থেকে গত ২১ আগষ্ট দুপুরে পারভিন বেগম, তার ছেলে এমরান, ছেলের বন্ধু ছুট্টু এবং দুই মেয়ে রোজিনা আক্তার ও সেলিনা আক্তার শেলীকে নিয়ে চকরিয়া উপজেলার হায়দার নাশি এলাকায় ছোট মেয়ের শশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। তারা প্রথমে মাইক্রোবাস যোগে সাতকানিয়ার কেরানিহাটে আসেন। তারপর সেখান থেকে একটি সিএনজি চালিত বেবী টেক্সিতে করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে দক্ষিণ দিকে চকরিয়ার ডুলাহাজারার পূর্ব পাশে হায়দারনাশিস্থ ছোট মেয়ের শশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে আবারও রওনা দেন। তারা সিএনজি বেবিটেক্সী করে চকরিয়ার হারবাং লাল ব্রীজ নামক এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৬ জন লোক তাদেরকে ধাওয়া দিতে দেখেন। এতে সিএনজি চালক ভয় পেয়ে সিএনজি চালিয়ে হারবাং পহরচাঁদা এলাকায় নির্মাণাধীন রেললাইনের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে ওই মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদেরকে আটক করে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় ওই অভিযুক্তরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোনসেট কেড়ে নিয়ে নেয়। এরপর তাদেরকে কোমরে রশি বেঁধে মারতে মারতে রাস্তায় হাটিয়ে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যান।
মামলার বাদী তার মামলায় আরও উল্লেখ করেছেন- ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে প্রথমে পারভিন বেগমের মেয়ে সেলিনা আক্তার শেলীকে তলপেটে লাথি মারেন। এরপর চেয়ার দিয়ে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়েও আঘাত করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশের হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
পারভিন বেগম জানান, গরু চুরির ঘটনা মিথ্যা ও অপবাদ। তাদেরকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে কোমরে রশি বেঁধে প্রকাশ্যে রাস্তায় হাঁটিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন মানহানির অভিপ্রায়ে অপমান করার উদ্দেশ্যে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে পুলিশ গত ২৪ আগস্ট ভোর রাতে নাছির উদ্দিন (২৮), নজরুল ইসলাম (১৯) ও জসিম উদ্দিনকে (৩২) গ্রেফতার করেন। তাদেরকে ওই দিনই চকরিয়া সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেওয়া হলে আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব শুনানি শেষে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
চকরিয়া থানার ওসি মোঃ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, মামলা রুজু করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পারভিন বেগম ও তার দুই মেয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২৫ আগস্ট বিকালে চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন।
এদিকে এ ঘটানায় হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম দাবী করেছেন, তিনি এ ঘটনার সময় চট্টগ্রামে ছিলেন। তবে তিনি মা-মেয়েকে কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা মোবাইল ফোনে জানতে পেরে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদেরকে জনতার কবল থেকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করার জন্য সহযোগীতা করেছেন।
মামলার বাদী পারভিন বেগমের আইনজীবী এডভোকেট ইলিয়াছ আরিফ জানান, এ মামলাটি রুজু হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ চাইলে আসামিদের গ্রেফতার করতে পারবেন।
এনএস/