৯৯৯-এ রক্ষা পেল ৪০ জীবন
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:১১ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার
৯৯৯-এ ফোন পেয়ে নাটোরের পুলিশ চলনবিলে নৌকা ভ্রমণে আসা ৫ শিশু ও ১২ মহিলাসহ ৪০ জনের জীবন রক্ষা করেছে।
বুধবার (২৬ আগস্ট) রাত দেড়টার দিকে ফোন পাওয়ার পর পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার নেতৃত্বে জেলা পুলিশের ৫টি টিম চলনবিলে প্রায় তিন ঘণ্টা অনুসন্ধান চালিয়ে ৪০ যাত্রীসহ পথ হারানো নৌকাটির সন্ধান পায়।
ফলে রক্ষা পায় নওগাঁ জেলার আত্রাই থেকে চলনবিলের বিলসা ও তিশীখালীর ঘাসি দেওয়ানের মাজার পরিদর্শনসহ নৌ ভ্রমণে আসা ৪০ যাত্রী।
জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত রাত দেড়টার দিকে সিংড়া থানার অফিসার ইনচার্জ পথ হারানো নৌকার এক যাত্রীর করা ৯৯৯-এ ফোন কল পান। বিষয়টি তাকে অবহিত করলে তাৎক্ষণিক তিনি সিংড়া ও গুরুদাসপুর থানাকে নির্দেশ দেন নৌকার অবস্থান জেনে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়ার। তিনি নিজেই ওই অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দেন। ফোনকলের ওই যাত্রীকে নৌকার অবস্থান জানতে চাইলে সে কিছুই বলতে পারেননি। পরে পুলিশের ৫টি টিমকে অনুসন্ধানে নামানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও এলআইসি ঢাকার সহায়তায় কলকৃত ব্যক্তির অবস্থান জানা যায় সিংড়া উপজেলার বিলদহর এলাকায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাদের পাওয়া যায় না। ’
তিনি জানান, ‘পরে রাত আনুমানিক ২টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর এলাকায় পথ হারানো নৌকাটির অবস্থান জানতে পারা যায়। পরে পুলিশের ৫টি দল নৌকাসহ ৪০ যাত্রীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫ জন শিশু ও ১২ জন মহিলা রয়েছে।’
৯৯৯ নম্বরে ফোন কল দেয়া ওই নৌকার যাত্রী আত্রাই উপজেলার বলরামচক গ্রামের মৃত অমৃত সরকারের ছেলে পিয়াস সরকার বলেন, ‘তারা নওগাঁর আত্রাই থেকে ৪০ জনের একটি দল নৌকা নিয়ে বুধবার চলনবিলের তাড়াশ ও গুরুদাসপুরের বিলসা বেড়ানো শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিংড়ার তিশীখালী মাজারে যান। সেখান থেকে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আত্রাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টা পথ অতিক্রম করার পরও গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় বুঝতে পারি আমরা পথ হারিয়েছি। এ সময় আবহাওয়া ছিল কিছুটা উত্তাল। তাই সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। চারিদিকে বাতাসের সাঁ সাঁ শব্দ হচ্ছিল। বড় বড় ঢেউ নৌকার সাথে বাড়ি খেয়ে আছড়ে পড়ছিল। চারিদিকে কোন বাড়িঘর চোখে পড়ছিল না। কোন আলোর দেখা মিল ছিলনা। এতে অনেকেই ভয় পেয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘নৌকার মাঝিও বুঝতে পারছিলেন না তার অবস্থান এখন কোথায়। তবে বুঝতে বাঁকি ছিল না পথ হারিয়ে তারা এখন চলনবিলের মাঝ বরাবর। এ সময় মনে পড়ে গতকাল দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছিল। চলনবিল এলাকাতে বৃষ্টি হচ্ছিল। ভাবনা হচ্ছিল কোন এক সময় ঝড়ের কবলে পড়ে দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারি। এ কথা মনে পড়তেই ৯৯৯-এ নম্বরে ফোন দিয়ে আমাদের বিপদের কথা জানাই। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার আমাদের অবস্থান জানতে চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আমরা জানাতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত পথ হারানোর প্রায় ৬ ঘণ্টা পর নাটোরের পুলিশ আমাদের গুরুদাসপুরের যোগেন্দ্রনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করেন।’
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘উদ্ধারের পর তাদের আত্রাই সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে দিয়ে আসে নাটোরের সিংড়া থানা পুলিশ।’
এআই//এমবি