ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ঐতিহ্যের মুরাদপুর-৪ 

সরদার রেজাউল করিম

প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২০ শুক্রবার

মোস্তফা শামীম আল জুবায়ের। সম্ভবতঃ ১৯৭৩ কি ৭৪ হবে। ভরপুর তরমুজের মৌসুম। তখন এতদঞ্চল তরমুজের জন্য বিখ্যাত ছিল। আমরা চার কিশোর, শামীম, শওকত, আনোয়ার আর আমি। এসএসসি দিয়েছি। 

এই চার বনহুরের একটু পরিচয় দেয়া আবশ্যক। শামীম-মোস্তফা শামীম আল জুবায়ের, প্রিন্সিপাল নজির আহমেদ স্যারের নাতী, সীতাকুণ্ড কলেজের প্রক্তন প্রিন্সিপাল জনাব সোলাইমান সাহেবের প্রথম পুত্র, সীতাকুণ্ড ইস্কুলে আমার সহপাঠী, আমার পরম বন্ধু। 

শওকত, আমাদের মুরাদপুরের সন্তান, আমার সহপাঠী, আনোয়ার সম্ভবতঃ কুমিরার ছেলে, সেও আমাদের সহপাঠী, কুমিরা ইস্কুলের।

শামীম থাকে তার নানার বাড়ি, গোপ্তাখালীর ভোংগা খানের বাডীতে। ঐ বাড়ীর আমাদের এক আত্মীয়ের বিয়েতে আমরা নিমন্ত্রিত বিধায় আমি আমার মা'য়ের সাথে ঐ বাড়ীতে গিয়েছি। শওকত আর আনোয়ারের নানার বাড়ী সেটা। তারাও আমার মতো আমন্ত্রিত। 

যোগ হলাম চার পান্ডব, দুনিয়ার অকাজ করে বেড়াচ্ছি আমরা, দল বেধে চার জন একসাথে থাকছি, খাচ্ছি। মেহমানরা একটু সমিহের চোখে দেখছেন, আমরা ‘মেট্রিক’ পরীক্ষা দেব, বা দিচ্ছ। ভাবটাই অন্যরকম!

ফকফকা চাঁদনী রাত। জোছনা মনে হয় তার সকল রূপ ঐদিন ঢেলে দিয়েছে দুনিয়াতে। দুরন্ত কৈশোরের জন্য একদম উপযুক্ত! আমাদের প্রোগ্রাম আজ সারারাত ঘুমাবো না, গান গেয়ে, আনন্দ করে কাটাবো। 

নানা প্রিন্সিপাল নজির আহমদ সাহেব আমাদেরকে একজোটে দেখে কি মনে করে শামীমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, নাতী, আজ বিয়ে বাড়ী, কোন বাছবিচার নাই, বাহির থেকে অনেক লোক আসছে। তুমি আমাদের তরমুজের খেতে বীজের তরমুজগুলো পাহারা দেবে, যাতে কেউ তা খেতে বা নষ্ট করতে না পারে। শামীম খুবই আস্থার সাথে বললো, ঠিক আছে নানা, আমরা আছি, আপনি চিন্তা করবেন না (আপনি টেনশন নিয়েন না,  কথাটা তখনো চালু হয়নি)।

রাত প্রায় একটা দুটা হবে। আমরা ভোংগা খান বাড়ীর পিছনে বিলে ঘুরছি তরমুজ খেতে। তরমুজ বাছাই হচ্ছে, যেটা পছন্দ হবে সেটা খাবো। ঘুরতে ঘুরতে একটা খেতে পাশাপাশি বেশ বড় দুটো তরমুজ নির্বাচন করা হলো খাবার জন্য। যথা সিদ্ধান্ত তথা কাজ। তরমুজ ছেড়া হলো এবং যথারীতি ‘ফেলেছেলে’ ভক্ষন! এত বড় দুটো তরমুজ আমাদের চার জনের পক্ষে খেয়ে শেষ করা সম্ভব না। আমরা মনের আনন্দে খেলাম, বাকিটুকু ফেলে দিলাম এবং বেশ ফুর্তি নিয়ে হেলেদুলে আস্তানায় ফিরলাম। তখন রাত প্রায় ভোর....

শামীম তার নানার বাড়ীতে আর আমরা তিনজন বাড়ীর কাচারীঘরের এককোনায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লাম। সকাল প্রায় দশটা নাগাদ শামীম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জানালো আমরা কাল রাতে যে দুটো তরমুজ খেয়েছি সেগুলো তার নানার বীজের তরমুজ ছিল এবং সেগুলো পাহারা দেবার জন্য তার নানা তাকে বার বার বলে দিয়েছেন। এখন কি উপায়!
 
শামীম যতই আস্থার সাথে তার নানাকে আস্বস্ত করুক না কেন, সে তো তার নানার জমিও চেনে না! তরমুজ পাহারা কেমনে দেবে! 

যা হবার তা হলো, ইনি প্রিন্সিপাল নজির আহমদ সাহেব, বাঘে মোশে একঘাটে জল খায়, আর আমরা....
বিয়ে খাওয়া মাথায় উঠলো, আমি একদৌড়ে নিজ বাড়ীতে, শওকতও তাই, আনোয়ার পালিয়েছে, শামীমের কি অবস্থা হয়েছে আমি জানি না......

এমবি//