ভারতে করোনায় মৃত ৬৪ হাজার, আক্রান্ত ৩৬ লাখ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৮ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২০ সোমবার | আপডেট: ১২:২০ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২০ সোমবার
নয়া দিল্লির একটি সমাধিস্থলে করোনায় মৃত এক ব্যক্তির মৃতদেহ কবরস্থ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা- রয়টার্স
ভারতে প্রাণঘাতি করোনা ক্রমে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। যেখানে প্রতিদিনই প্রায় হাজার মানুষের প্রাণ ঝরছে। এতে করে মৃতের সংখ্যায় উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোকে ছাড়িয়ে শীর্ষ তিনে উঠেছে দেশটি। ফলে প্রাণহানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রাজিলের পরই এখন দিল্লি। অপরদিকে গড়ে পৌনে এক লাখ মানুষের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৬ লাখের বেশি। এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসের শুরুতে সংক্রমিতে ব্রাজিলকেও ছাড়িয়ে যাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ হাজার ৭৬১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা একদিনের নিরিখে সর্বোচ্চ। এতে করে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ৩৬ লাখ ২১ হাজার ৭৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। যার ষাট শতাংশই চার রাজ্যের (মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ)। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯৪৮ জনের। এ পর্যন্ত মোদীর দেশটিতে মারা গেছেন ৬৪ হাজার ৬১৭ জন। গত চার দিন ধরে টানা প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। সমীক্ষা বলছে, ভারতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লাখ ছোঁয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তা ৩৬ লাখ পেরিয়ে গিয়েছে। ২০ লাখ থেকে ৩০ লাখে পৌঁছে গিয়েছে ১৬ দিনে। ১০ লাখ থেকে ২০ লাখে পৌঁছেছিল ২১ দিনে। এ দিকে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছুঁতে যেখানে ১১০ দিন লাগে, সেখানে মাত্র আরও ৫৯ দিনে তা ১০ লাখের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। যার ব্যাখ্যায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির গতি সর্বোচ্চ। আমেরিকায় গড়ে দিনে সংক্রমণ বাড়ছে ০.৯ শতাংশ (সাত দিনের গড়)। ব্রাজিলে বাড়ছে ১.০ শতাংশ সেখানে ভারতে বাড়ছে ২.২ শতাংশ যা সারাবিশ্বের দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির হারের (১.১ শতাংশ) থেকেও বেশি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে সর্বাধিক সংক্রমণ ছড়িয়েছে মহারাষ্ট্রে। তারপরেই তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ, দিল্লি, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক এবং তেলেঙ্গানা। এ দিকে বিশ্ব তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলের পরে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ করোনাক্রান্ত দেশ হলো ভারত। আর প্রাণহানিতে চতুর্থ। এদিকে মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ১০৩ জন মানুষের।
আক্রান্ত ও প্রাণহানিতে রাজধানী দিল্লিকে টপকানো তামিলনাড়ুতে মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৭ জন। আর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ সাড়ে ১৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
তিনে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশেও করোনার শিকার ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। তবে, প্রাণহানি কিছুটা কম এখানে। যার সংখ্যা ৩ হাজার ৭৯৬ জন মানুষের। দিল্লিতে করোনার থাবায় প্রাণ গেছে ৪ হাজার ৪০৪ জনের। আর ভুক্তভোগীর সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। বর্তমানে সেখানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে করোনার দাপট।
সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতে প্রথমদিকে সামাজিক দূরত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন লকডাউনের কড়াকড়ি নেই। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় বাজার-হাট, গণপরিবহনে বেড়েছে লোকের ভিড়। বেড়েছে একে অপরের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাও। তাই, প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা।
ভারতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ২৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮০১ জন। গত ১০ দিনের যা কোভিড-চিত্র তাতে দেশটিতে না-হলেও অন্তত ১০টি রাজ্য দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ শুরুর মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এক দিকে যেমন পরীক্ষার হার বাড়ায় সংক্রমণ বাড়ছে তেমনি ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে দেওয়াকেও এর কারণ বলে মনে করছেন তারা।
এমএস/