ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বৈষম্য সত্ত্বেও ক্ষেত-খামারে বাড়ছে নারী শ্রমিকের উপস্থিতি

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:২১ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

গ্রামীণ জনপদে নারীরা এখন আর শুধু ঘর-সংসারের কাজে ব্যস্ত নেই। উপার্জন বাড়িয়ে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশাপাশি ক্ষেত-খামারেও শ্রম বিক্রি শুরু করেছে। যে কারণে চুয়াডাঙ্গায় কৃষিকাজসহ নানা ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি দিন দিন নারী শ্রমিকের উপস্থিতি বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে নারীরা কাজে বেশি মনোযোগী এবং পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় মজুরি কম হওয়ায় নারী শ্রমিকদের কদর বেড়েই চলেছে। 

জানা যায়, ইতিপূর্বে এ জনপদে পুরুষদের মতো নারীদের ক্ষেত খামারে কাজ করার তেমন একটা রেওয়াজ ছিল না। কয়েক দশক আগে এলাকায় বসবাসরত বাগদি সম্প্রদায়ের কিছু কিছু নারী কৃষিক্ষেত্রে ধান রোপন, ফসল তোলা ও সবজি ক্ষেতে কাজ করতে শুরু করে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে কেবল পুরুষদের পরিশ্রমে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশপাশি নারীরাও ক্ষেত খামারে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেছেন। 

তবে, নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই কাজে পুরুষের সম পরিমাণ প্ররিশ্রম করলেও তারা মজুরি পাচ্ছেন কম। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের শ্রমের ন্যায্য মজুরী থেকে। 

একসময় এ অঞ্চলের নারী শ্রমিকদের কাজ চাতালে ও গৃহস্থের বাড়িতে ধান সিদ্ধ করা, শুকানো ও চাউল তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে নারী শ্রমিকরা কৃষিক্ষেত্রে ধান, ভূট্টা, সবজিসহ নানা ধরনের ফসল রোপন, পরিচর্যা ও ফসল তোলার কাজ করছেন। এছাড়া ধান, গম, ভূট্টা ইত্যাদি মাড়াই থেকে শুরু করে ঝেড়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত সমস্ত কাজই করে থাকেন নারীরা। 

জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের মাঠে সবজিক্ষেতে কর্মরত নারীশ্রমিক সবেদা, আল্লাদি, মর্জিনা, মনোয়ারা, কোহিনূর, পঞ্চবালা, কাজলী ও সুবারনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। দল বেঁধে গ্রামের ক্ষেত-খামারে কাজ করি। এ অঞ্চলের নিয়ম অনুযায়ী- সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গৃহস্থের জমিতে নানা ধরনের কৃষিকাজ করতে হয়। গৃহস্থরা আমাদেরকে মজুরি দেয় ১৫০ টাকা। অথচ একই কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিকদের দেয়া হয় ২০০ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা। 

তারা বলেন, দল বেঁধে ক্ষেত-খামারে কাজ করতে বর্তমানে তেমন কোন অসুবিধা হয়না। তবে নিরপত্তার কথা ভেবে নিজেদের এলাকার বাইরে কাজ করতে যাই না। পুরুষদের মতো আমরাও ক্ষেত-খামারের কাজ করতে পারি। মজুরী কম হলেও সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও ক্ষেত-খামারে কাজ করে যাচ্ছি। 

ইটভাটায় কর্মরত জেলার দর্শনা পৌর এলাকার মহম্মদপুরের বাসিন্দা মর্জিনা খাতুন (৫২) ও আরতি রানী (৪৫) বলেন, আমরা ইট ভাটায় কাজ করি। ১৪০ টাকা মজুরিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্লিন লেবার হিসেবে কাজ করি। ভাটা মালিক প্রতি সপ্তায় মজুরি পরিশোধ করেন। বছরে ৫-৬ মাস ধরে কাজ করি। তাতে আমাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের উপার্জন দিয়ে সংসার ভালই চলে।

সচেতনমহল মনে করেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিই হলো নারী। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নানামুখী কাজ করছে। তাই বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে কৃষক হিসেবে নারীর স্বীকৃতির বিষয়টিও ভেবে দেখার দাবি রাখে। সেইসঙ্গে বেকার নারীদের কৃষিকাজসহ নানা ধরনের কাজের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও কাজের ন্যায্য মজুরী নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের মতো নারীরাও কৃষিক্ষেত্রসহ সমাজের নানা কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে। তাতে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হবে, অপরদিকে নারী-পুরুষ মিলে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।

এনএস/