ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

মল্লিকা এখন যাবেন কোথায়?

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৫৩ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার

কিশোরগঞ্জের তরুণী মল্লিকা

কিশোরগঞ্জের তরুণী মল্লিকা

স্বামীর খোঁজে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এসে বিপাকে পড়েছেন মল্লিকা নামে কিশোরগঞ্জের এক তরুণী। তিনি যাকে স্বামী হিসেবে দাবি করছেন, সুরুজ মিয়া নামের ওই যুবক তাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছেন না। উল্টো সুরুজ মিয়া ও তার সহযোগীরা তাকে নানানভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তিনি আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য হেলেনা বেওয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনদিন ধরে সেখানেই অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি এখনও।

এদিকে, মল্লিকাকে আশ্রয় দেওয়ায় সুরুজ মিয়া ও তার সহযোগীরা ইউপি সদস্য হেলানা বেওয়াকে গালিগলাজও করছেন। এখন তিনিও মল্লিকাকে তার কাছে রাখতে চাচ্ছেন না। বাড়ি করার জন্য জায়গা কেনা বাবদ এক লাখ টাকা স্বামীকে দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে মল্লিকাকে বাবার বাড়িতে যেতেও বারণ করা হয়েছে। মল্লিকা এখন যাবেন কোথায়?

মল্লিকা জানান, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের যশোদল গ্রামে। তার বাবার নাম আফাজ আলী। তিনি মোরাব্বা ব্যবসায়ী। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। তিন বছর আগে কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে থাকার সময় তার মুঠোফোনে একটি ছেলে কল করে। তারপর থেকে তাদের নিয়মিত কথা হতো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। মল্লিকা তার প্রেমিকের নাম ঠিকানা নেন। ঠিকানা অনুযায়ী তিনি দুই বছর আগে ঢাকার সাভারে গ্যারেজ এলাকায় প্রেমিক সুরুজ মিয়ার কাছে চলে আসেন। সেখানে সুরুজ মিয়া একটি রিকশার গ্যারেজে কাজ করতেন। তারা দুই জন বিয়ে করে গ্যারেজ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। 

এরমধ্যে স্বামীর সঙ্গে গ্রামের বাড়িতেও এসেছিলেন। কিন্তু সুরুজ তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান নি। সুরুজ তাকে তার এক বন্ধুর বাড়িতে রেখেছিলেন। পরে আবারও তারা সাভার গ্যারেজ এলাকায় চলে যান। স্বামীর বাড়ি কোন গ্রামে সেটি জানতেন না মল্লিকা। পরে তার স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জেও চলে যান। সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই ছিলেন। হঠাৎ করেই সুরুজ সেখান থেকে নিজ বাড়ি চলে আসেন। এরপর থেকে সুরুজকে মুঠোফোনে পাচ্ছিলেন না মল্লিকা। মাস দুয়েক পর সুরুজকে মুঠোফোনে পেলেও সুরুজ তাকে জানান, বাড়িতে কেউ তাকে মেনে নেবে না। এ কারণে বাড়ি করার জন্য জায়গা কিনতে হবে। বাড়ির জায়গা কেনার জন্য এক লাখ টাকা চান।  

অতঃপর সুরুজ মিয়া তাকে মুঠোফোনে জায়গার মালিকের সঙ্গে কথা বলায়। মল্লিকা স্বামীর কথায় বিশ্বাস করে প্রথমে বিশ হাজার টাকা দেন। পরে গত ৭ আগষ্ট তিনি বাবার বাড়ি থেকে আরও আশি হাজার টাকা নিয়ে আসেন। সুরুজ মিয়া তার কাছ থেকে জমি কেনার আশি হাজার টাকা নিয়ে মর্তুজাপুর গ্রামের এক আত্মীয় বাড়িতে রাখেন। একদিন পর জানাজানি হওয়ার পর সুরুজ তার বন্ধু সম্রাট ও লিটনসহ তাকে আবারও সাভারে নিয়ে ভাড়ার বাসায় যান। সেখানে তাকে একা রেখে তারা চলে আসেন। তিনি মুঠোফোনে সুরুজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে আবারও গোপীনাথপুর এলাকায় আসতে বলেন। 

সেই কথা মতো তিনি গত ২৮ আগষ্ট (শুক্রবার) রাত ৯টার দিকে গোপীনাথপুর কড়ইতলা এসে নামেন। সেখানে তার স্বামী সুরুজ মিয়া, সম্রাট ও লিটন থাকার কথা থাকলেও বাস থেকে নামার পর তাদের কাউকেই তিনি পাননি। মুঠোফোনে সুরুজের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সে সম্রাটের কথা বলে। এরপর সেখানে থানা পুলিশ  এসে তাকে ইউপি সদস্য হেলানার জিম্মায় ছেড়ে দেন।

মল্লিকা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, পরদিন শনিবার থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। রোববার থানার একজন এসআই এসে আমার সঙ্গে কথা বলে চলে যান। এরপর আমার স্বামী সুরুজ তার বন্ধু সম্রাট ও লিটন এসে আমাকে গালিগালাজ করে চলে যান। সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছে না। স্বামীকে দেওয়া টাকা ফেরত না পেলে বাবার বাড়িতেও যেতে পারছি না। আমার জন্য ইউপি সদস্য হেলেনা বেওয়া অপদস্ত হচ্ছেন। থানা পুলিশও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এখন আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। 

এ বিষয়ে গোপীনাথপুর ইউপির সংরক্ষিত সদস্য হেলেনা বেওয়া বলেন, সুরুজ মিয়ার বাড়ি পাশের জোয়ালমাঠা গ্রামে। সুরুজের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। মল্লিকা রাতে এসে কোথাও যেতে পারছিল না, এ কারণে থানা টহল পুলিশ আমাকে ডেকে আমার জিম্মায় দিয়েছে। তিন দিন ধরে আমার কাছে রয়েছে সে। মল্লিকাকে আশ্রয় দেওয়ায় সুরুজ, সম্রাট ও লিটন বাড়িতে এসে আমাকে গালিগালাজ করছে। আমি আর মল্লিকাকে রাখতে চাচ্ছি না। সোমবার মল্লিকাকে নিয়ে থানা গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করেছি। ওসি সাহেব মল্লিকাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন।

এদিকে অভিযুক্ত সুরুজ মিয়া ও সম্রাটকে এলাকায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। তাদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, মল্লিকার অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে।  যেহেতু এখানে তার কেউ নেই তাই বাবার বাড়িতে যেতে বলেছি।

এনএস/