বেনাপোল বন্দরে বোমা বিস্ফোরণ
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি:
প্রকাশিত : ০৬:১৫ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার
বেনাপোল স্থলবন্দরের ২৩ নাম্বার শেডের পাশে একটি শক্তিশালী হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। বুধবার দুপুরে হঠাৎ করে বিকট শব্দে বোমাটি বিস্ফোরন ঘটে। এ সময় বন্দরে কর্মরত কাস্টমস, বন্দর, সিএন্ডএফ ও লেবাররা আতংকিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। সচল বন্দর অচল করতে ক্ষমতাসীন দলের দুইটি পক্ষ একের পর এক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ বন্দর ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীরা। তারাই অংশ বোমার বিস্ফোরণ।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরের ২৩ নাম্বার শেডের মধ্যে রাখা মোটর পার্টসের কাঠের কার্টুনের ফাঁকে হঠাৎ করে একটি হাত বোমা বিস্ফোরিত হয়। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে আলামত সংগ্রহ করেন।
বেনাপোল পোর্ট থানার ডিউটি অফিসার এএসআই মুরাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, দলীয় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সম্প্রতি এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। যখন যার দলীয় অবস্থান শক্ত হয় তাদের সমর্থকরা একে অন্যের কাছ থেকে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ দখলে নেয়।
এর আগে বেনাপোল বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন মেয়র সমর্থক নগর আলী ও সম্পাদক পৌর কমিশনার রাশেদ আলী। বর্তমানে বন্দরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমপি সমর্থক বেনাপোল বন্দরের ৯২৫ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু আহম্মেদ এবং সম্পাদক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য অহিদুজ্জামান অহিদ।
গত মে মাসে বন্দরের সাধারণ শ্রমিকদের রক্ত, ঘাম ঝরানো অর্থ এক কোটি ৩২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বন্দরের ৮৯১ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নকি মোল্যাকে বন্দরের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বন্দরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দ্বন্দ্বের কারণে আবারো বিভক্ত হয়ে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়।
অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন কারণে বন্দরের নেতৃত্ব থেকে বিদায় নেওয়া সাবেক শ্রমিক নেতাদের কয়েকজন একত্রিত হয়ে তাদের অবস্থান ফিরে পেতে বন্দরের শ্রমিক নেতৃত্ব দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন অভিযোগে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে গত ১২ আগস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয় বন্দর এলাকায়। বন্দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে বন্দরের বর্তমান কমিটি বিক্ষোভ মিছিলও করে বন্দর এলাকায়।
৯২৫ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক অহিদুজ্জামান অহিদ জানান, বর্তমানে শ্রমিকরা বন্দরে শান্তির সাথে কাজ করে আসছে। কিন্তু একটি পক্ষ তা ভালভাবে না নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বন্দরের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।
বেনাপোল বন্দরের ৮২৫ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কলিম উদ্দীন বলেন, যারা বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাৎ করে বিতাড়িত হয়েছেন তারাই নেতৃত্ব দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
সাবেক বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের মেয়র সমর্থক কয়েকজন নেতা পাল্টা অভিযোগ তুলে জানান, বর্তমানে যারা দায়িত্বে রয়েছে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদেরকে বন্দরের কাজ থেকে বাদ দিয়েছে। শত্রুতামূলক তাদের নামে বিভিন্ন অভিযোগও তুলছেন। তবে অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য কোন ষড়যন্ত্রের সাথে নেই। জনপ্রিয়তা থাকলে সাধারণ শ্রমিকরা তাদেরকে আবার নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনবেন বলে মন্তব্য করেন তারা।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন খান জানান, দেশের সবচেয়ে বড় বেনাপোল বন্দরে কোন অস্থিতিশীল বরদাস্ত করা হবে না। দুই পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বন্দর চলবে বন্দরের মত। আমদানি-রফতানিসহ বন্দরে বিঘ্নকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
আরকে//