ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

গ্রামবাসীর জন্য কলেজ ছাত্রদের কাঠের সেতু তৈরি 

হিলি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:৩৯ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার

করোনায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় দিনাজপুরের হিলিতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছাত্ররা। এমন অবস্থায় নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ও গ্রামের মানুষের সহযোগীতায় গ্রামবাসীর জন্য ২৫০ফিট লম্বা একটি কাঁঠের সেতু তৈরি করেছেন ছাত্ররা। সেতু হওয়ায় নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারায় কয়েক গ্রামের মানুষ খুশি। স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণের দাবী ছাত্র ও গ্রামবাসীদের।

হিলির আলিহাট ইউনিয়নের কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে তুলশিগঙ্গা নদীর উপরে ছাত্ররা এই কাঠের সেতু নির্মাণ করেন। হিলির আলিহাট ইউনিয়নের শেষ প্রান্তের গ্রাম কাশিয়াডাঙ্গা। পার্শ্বেই রয়েছে একই ইউনিয়নের বাশমুড়ি গ্রাম। দুই গ্রামের মাঝে সংযোগ স্থলে রয়েছে তুলশিগঙ্গা নদী যেখানে দীর্ঘদিনেও ব্রীজ নির্মাণ না হওয়ায় দুটি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষজনকে পানি কাদা ভেঙ্গে কিংবা অনেক দুর দিয়ে ঘুরে বিপরীত সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করতে হতো। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো মানুষকে। 

কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের প্রবীন ব্যাক্তি আব্দুল করিম বলেন, সেই দাদার আমল থেকে শুনে আসছি এখানে ব্রীজ হবে হবে। ব্রীজ হতে হতে ৭০ থেকে ৮০ থেকে দাদারা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এর পর আমার বাবারা আসলো উনিও বললো ব্রীজ হবে এখানে এই এমপি না হয় ওই এমপি এটা করতে করতে বহুদিন এযাবৎ আসছে আর যাচ্ছে এমন কথা শুনতে শুনতে বাবাও চলে গেলো। এর পর আমরাও শুনে আসছি কিন্তু আজো এখানে ব্রীজ হচ্ছেনা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী কষ্টভোগ করছি, ব্রিটিশ আমলে কাঠের সেতু দিলেও সেটিও নষ্ট হয়ে যায় যার কারনে বহুত কষ্ট। কখনও চাড়িত করে পার হয়, কখনও কলার গাছের ভোর দিয়েসহ বিভিন্নভাবে পার হয়ে খুব কষ্ট করে চলাচল করি যা আজো করতেই আছি।  

স্থানীয় এলাকাবাসী সিদ্দিক হোসেন ও রহিমা বিবি বলেন, আগে নদী ভরা ছিলো, কোন নৌকা ছিলনা, মানুষের অনেক অসুবিধা হচ্ছিল, নদী পারাপার হতে পারছিলনা যারকারনে তাদের যাতায়াতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। একইভাবে পার্শ্বের গ্রামে স্কুল মাদ্রাসা থাকায় বন্যা হলে ছেলে মেয়েদের স্কুল মাদ্রাসায় যেতে খুব সমস্যা হতো। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি কোন লোকজন এখানে আসেনা কোন ব্রীজ হয়না। কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে যে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবো তাও সম্ভব হচ্ছিলনা। এখন কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের ছেলেরা যারা বিভিন্ন স্থানে পড়ালেখা করতো তারা উদ্যোগ নিয়ে গ্রামের মানুষের সহযোগীতায় সেখানে একটি কাঠের সেতু নির্মান করেছে এতে করে অত্র অঞ্চলের রোগী নিয়ে যাওয়াসহ জনগনের যাতায়াতের অনেক সুবিধা হয়েছে। এছাড়া আগে আমরা খুব বিপদগ্রস্থ অবস্থার মধ্যে ছিলাম, এখনও যে ব্রীজের দুই পার্শ্বে সড়কে কাঁদা রয়েছে চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ তা দেখেনা। 

ব্রীজ নির্মানের উদ্যোক্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত নাসির উদ্দিন, নাসির উল্লাহ  ও চীনে অধ্যায়নরত আনাছ আহমেদ জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে দীর্ঘ ৬মাসের মতো সময় ধরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। যার কারনে আমরা যারা এই গ্রামের ছেলেরা বাহিরে পড়ালেখা করতাম সকলেই ছুটি পেয়ে বাড়িতে বসে ছিলাম। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম আমাদের এই গ্রামের তুলশিগঙ্গা নদীর উপরে ব্রীজ নির্মান হবে হচ্ছে কিন্তু তারপরেও হয়না। এমন অবস্থায় আমরা উদ্যোগ নেয় এখানে একটি ব্রীজ নির্মান করতে পারলে আমাদের এলাকাবাসীর অনেক উপকার হবে। আমরা শুরুতেই গ্রামবাসী বিত্তবান থেকে শুরু করে সকলের কাছে গিয়েছি সহযোগীতা চেয়েছি। তারা আমাদের অর্থ দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে গাছ দিয়ে সহযোগীতা করেছে। এই ব্রীজটি নির্মান করতে আমাদের ২৫০টির মতো গাছের গুড়ি লেগেছে, এর সাথে কাঠ দিয়ে আমরা দীর্ঘ ৪৫দিন ধরে কাজ করে সেখানে একটি কাঠের ব্রীজ নির্মান করতে সক্ষম হয়। তবে এই ব্রীজটি যেহেতু ক্ষনস্থায়ী তাই উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের নিকট দাবী এখানে যেন একটি স্থায়ী ব্রীজ নির্মান করা হয়।

হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, হিলির কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামে যে নদী রয়েছে সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই ব্রীজ নেই। যার কারনে মানুষজন অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতো। কিন্তুু করোনা ভাইরাসের কারনে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় ওই এলাকার ছেলেরা নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন মানুষজনের সহযোগীতায় একটি কাঠের সেতু নির্মান করেছেন। এটি আসলেই একটি সুন্দর উদ্যোগ, এমন উদ্যোগকে সাধুবাধ জানাই।  উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সেই সকল যুবকদের ও ব্রীজ করতে যারা সহযোগীতা করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে অতিসত্বর এমপি মহোদয় আমাদের কথা দিয়েছেন ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে, আমরা আশা করছি অচিরেই সেখানে একটি স্থায়ী ব্রীজ স্থাপন করা হবে এলজিইডির মাধ্যমে।

আরকে//