ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

জয়ার কুকুর প্রেম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪০ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার

তারকাদের পশু প্রেম নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে বিড়াল, কুকুর পোষ্য প্রাণীদের সঙ্গে চলনবলন তাদের বৈচিত্র্যের এটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য তারকাদের মত দেশের জনপ্রিয় তারকা জয়া আহসানও একজন পশু প্রেমী মানুষ। সম্প্রতি ঢাকার কুকুর নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিলেন এই তারকা।

কুকুর নিয়ে একটি লেখা নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার দিয়েছেন তিনি। যদিও লেখাটি তিনি সংগ্রহ করেছেন, তবে এর সঙ্গে তার সহমত রয়েছে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন। পাঠকদের জন্য সেই লেখাটি প্রকাশ করা হলো-

‘মানব সভ্যতার কিছুটা আগের ইতিহাসের দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন মানুষের মানুষ হয়ে উঠার পিছনে ও কুকুরের কুকুর হয়ে ওঠার পেছনে খাদ্যশৃঙ্খলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাহিরে এসে একে অপরের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ অবস্থানের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

আজকের এইদিনে মানুষ ও কুকুর তাঁদের বিবর্তনের যেই স্তরে আছে, তাঁর পুরোটাই একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতা ও সহযোগিতার ফলাফল।

কুকুর সম্ভবত অর্থনীতি বোঝে না, মানুষ বোঝে, এবং অর্থনীতির জায়গা থেকে যদি দেখি তবে পরস্পর সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিবর্তনের এই ফলাফল মানুষের জন্য যতটা লাভজনক হয়েছে, কুকুরের জন্য হয়েছে দিনে দিনে ততটাই ক্ষতিকর।

মানুষের সাথে মিশে মিশে খাদ্য জোগানের ক্ষেত্রে আধুনিক কুকুরের প্রায় সকল প্রজাতি বা গোষ্ঠীই তাঁদের পূর্বসূরিদের আত্মনির্ভরশীল শিকারের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য হারিয়ে হয়েছে মানুষের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল, এবং অপর দিকে কুকুর'কে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করতে করতে আধুনিক মানুষ দিনে দিনে তাঁদের বাস্তুসংস্থানের ও কৃষিভিত্তিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে হয়েছে কুকুরের বিশেষ কোনো প্রয়োজনীয়তাহীন ভাবেই প্রায় আত্মনির্ভরশীল। আর কুকুর থেকে গেছে অধিপত্যের এই মানব সভ্যতায় পুরোপুরি নিরুপায়। কালক্রমে হয়েছে প্রভুভক্ত প্রাণী।

এইযে কুকুর প্রভুভক্ত প্রাণী, এই কথাটা আদতে সত্য। তবে এই সত্য আধ্যাত্মিক কোনো সত্য নয়, বিজ্ঞানসম্মত সত্য।

কুকুরের প্রভুভক্ত হতে হয়েছে কারণ কুকুরের জীবন তাঁর প্রভুর (মানুষ) দয়া বা দায় ছাড়া মোটামুটি কষ্টসাধ্য একটা জীবন, এবং কালক্রমে কুকুর যতটা পেরেছে চেষ্টা করেছে নিজের প্রভুদের নিকটে থাকার, এবং এই নিকটে থাকার অভ্যস্ততা এবং প্রয়োজনীয়তা কুকুরের জীবনে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে যে - মানুষ যখন তাঁর প্রিয়, ভালোবাসার, শ্রদ্ধার বা স্নেহের কারো সংস্পর্শে আসার ফলে মানুষের দেহ থেকে তখন যে হরমনাল প্রতিক্রিয়ার ফলে অক্সিটোসিন নির্গত হয়, একই ভাবে কুকুর'দের অক্সিটোসিন নির্গত হয় তাঁদের প্রিয় প্রাণ মানুষের সংস্পর্শে আসলে।

লেখার প্রথমে মানব সভ্যতার আগের ইতিহাসের দিকে তাকাতে বলেছিলাম, এবার মানব সভ্যতার পরের ইতিহাসের দিকে যদি তাকাই তবে দেখবো মানুষ মূলত সবসময়ই আজকের মতো অর্থনীতি আর নগরায়নের নামে নেমকহারাম প্রাণী ছিল না।

প্রাচীন সভ্যতার পৃথিবীর বহু জনপদে বহু ধর্মে কুকুর উপকারী দেবতা হিসেবে পূজিত হয়েছে, বহু ধর্মে পেয়েছে বিশেষ বন্ধুর সর্বোচ্চ সম্মান। মেক্সিকোর অ্যাজটেক, চায়নার ঐতিহ্যগত নানান মিথোলজি, আদি খৃষ্টান ধর্ম, প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম, গ্রিক মিথোলজি, হিন্দু ধর্ম, মেসোপোটেমিয়া, প্যালেস্টাইন ও জরাথ্রুস্টিয়ান ধর্ম এবং লোকালয়ে কুকুরের উপকারী বন্ধু হিসেবে সম্মান এবং পূজিত হওয়া বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু হটাৎ কুকুর নিয়ে আমি এতো কথা বলছি কেন?

বলছি কারণ হটাৎ আমাদের নগরকর্তারা কুকুর নামের এই উপকারী বন্ধু নির্মূলের এক ভয়াবহ উদ্যোগ নিয়েছে। যেই উদ্যোগ প্রত্যেক বছরই একবার নিয়ে থাকা তাঁরা, এইবার নিয়েছে একটু বড়সড় আয়োজন করে।

এমন হাবভাব, যেন এই শহরে কুকুরের বসবাসই প্রধানতম সমস্যা, এর বাহিরে তাঁদের নগরকর্তৃত্ব দেখানোর মতো আর কিছু নেই। যেন কুকুর মুক্ত করতে পারলেই রাতারাতি ঢাকা হারিয়ে যাওয়া নগর এলডোরাডোতে পরিণত হবে। অথচ এই শহরের প্রধান সমস্যা গুলো থেকে প্রতিকার নিয়ে তাঁদের কোনো আলাপ নেই, পদক্ষেপ নেই। যেমনটা র‍্যাগিং কালচার, গেস্টরুম কালচার থেকে প্রতিকার নিয়ে পদক্ষেপ নেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর, উল্টো ডিপার্ট্মেন্টের নানান ব্যাচের শীক্ষার্থীদের বিদায়ী উৎসব র‍্যাগ ডে নিষিদ্ধকরণেই উঠে পড়ে লেগেছে তাঁরা। যেন র‍্যাগ ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় না হয়ে ওঠার জন্য প্রধানতম বাঁধা।

এইসব প্রতিষ্ঠান এমন সব বিষয় সমাধানে ব্যস্ত, যা আদতে কোনো সমস্যা'ই নয়, ক্ষেত্রে বিশেষে প্রয়োজনীয়ই বটে। যেগুলো আসলে সমস্যা, তা দূর করার ক্ষমতা বা স্বদিচ্ছা যেহেতু নেই, আর পদে বসে কিছু কাজ যেহেতু করতেই হয়, তাই অকাজ করার পেছনেই সময় ঢালার কোনো বিকল্প পাচ্ছে না তাঁরা।

একটা স্বাভাবিক বিষয় আগে বোঝেন, এই পৃথিবীটা কেবল মানুষের নয়, মানুষ আসার আগেও এই পৃথিবীতে মিলিয়ন ট্রিলিয়ন প্রজাতি থেকে গেছে, মানুষের সাথেও থাকে, সম্ভবত থাকবে সেদিন'ও যেদিন মানুষ থাকবে না। মানুষরে এই পৃথিবীর মালিকানা লিখে দেয় নাই কেউ, এই পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি জমিতে মানুষের অধিকার যতটুকু, ততটুকুই অধিকার অন্য যেকোনো প্রাণীর, এবং যখন ঐ এক ইঞ্চি জমি নিয়েও কতিপয় প্রাণীর মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসে, সেইটার সমাধান'ও আসে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে দিয়েই।

কিন্তু সেই অর্থেও কুকুর মোটেও কোনোভাবেই মানুষের বাস্তুসংস্থানের প্রতিদ্বন্দ্বী না। যতদূর জানি মোটাদাগে মানুষ চায়'ও না কুকুর নিধন।

কিন্তু মানুষের মধ্যে যারা নিজেরাই নিজেদের এই শহরের কতৃপক্ষ বানিয়ে রেখেছে, যারা কুকুর নিধন চায়, তাঁরা কেন চায় আসলে ?
তাঁরা কেন নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে কুকুরদের?

কারণ কী এই যে- জনসাধারণ কোনোভাবেই তাঁদের বিশ্বাস করতে, তাঁদের উপর আস্থা রাখতে ইচ্ছুক না, বরং তাঁদের চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাস করতে সাহস পায় পথের একটা কুকুর'কে, চোখ বন্ধ করে রাত তিনটার সময়'ও আস্থা রাখে যে একটা কুকুর তাঁর জানমালের নিরাপত্তা দেবে, যেইটা দিতে এই কথিত কতৃপক্ষ'রা ব্যর্থ!
ঠিক এই জায়তেই কী কতৃপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী কুকুর?

আর এই কারণেই কী শহর থেকে কুকুর হাটায়ে, নিধন করে নিজেদের সার্ভাইভাল অফ দ্যা ফিটেস্ট প্রমাণ করতে চায় কথিত নগরনেতারা(!)?

আমি ঠিক জানি না।

তবে এইটুকু জানি, এই শহরে কুকুর থাকবে, একসাথেই থাকবে, বন্ধুর জীবন ভাগ করে দেবে সহযোগীতার মধ্য দিয়ে যেমনটা নিয়েছে বহুযুগ ধরে, মানুষ কুকুরের সাথে নেমকহারামী করবে না যেমনটা কোনো রাতে কুকুর করে নাই কোনোদিন। মানুষের আধুনিক মানুষ হবার পেছনে, চালাক শিকারী হবার পেছনে কুকুরের সহযোগীতা অপরিসীম, আজ কুকুরের উপর চাপিয়ে দেওয়া দুর্দিনে প্রতিদান দিতে হবে সেইসব সহযোগিতার।

কুকুর নিধন রুখে দিন।

নিধন করতে হলে তাঁদের করুন যারা কুকুরের মতো বিশ্বস্ত হতে পারে নাই, যারা কুকুর'রে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে প্রতিবেলা, প্রতিদিন। সেই সব অমানুষ ও অকুকুরদের নিধন করুন।’
(জয়া আহসানের ফেসবুক থেকে সংগ্রহ)
এসএ/