হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী যারীনের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প
হাবিপ্রবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০৩:০৮ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার
করোনায় জনসমাগম নিষিদ্ধ ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা থাকায় ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না অনেকেই। ফলে দিন দিন অনলাইন বিজনেসে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। আর করোনার সংক্রমণ এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইন ভিত্তিক নানা রকম ব্যবসায় জড়িয়েছেন অনেক শিক্ষার্থীই, হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা।
শুধু ছেলেরাই যে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন তা নয়। চ্যালেঞ্জিং এই জায়গায় নারীরাও যে আর পিছিয়ে নেই তা আজ দৃশ্যমান। অনেক নারীই এখন অন্যান্যদের দেখাদেখি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পুঁজি নিয়ে কিংবা নিজের তৈরি পণ্য নিয়ে ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা। শত বাঁধা উপেক্ষা করে এই প্রয়াস সবসময় প্রশংসনীয়।
আজ শোনাবো তেমনি একজন নারী শিক্ষার্থীর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। যিনি শত বাঁধা উপেক্ষা করে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করায় ব্রতী।
যারীন শাইমা শ্যামা। জন্মস্থান রংপুরেই বেড়ে উঠা, পড়াশোনা। জন্মসূত্রে দাদা ও বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন নানা গুণের অধিকারিনী হওয়ার সুযোগ। নাচ, গান, আবৃত্তি, বিতর্ক, অভিনয়, হস্ত শিল্প বা কারুকার্যের মতো এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তার পদাচারণা নেই। রঙ তুলিতে আঁকা ছবিগুলো দেখলে মনে হবে বাস্তব কোন দৃশ্য। আর আরবী অক্ষরে করা ক্যালিগ্রাফিগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে যেকোন ব্যক্তিরই।
বর্তমান সমাজে যেকোন পরিবারে বাবা-মাতা চায় তার সন্তান বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিয়ার হবে। দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। এসব কারণে নাচ-গান, অভিনয়, আর্ট, ক্যালিগ্রাফির মতো কাজে দক্ষতা থাকলেও শ্যামা তার নানুর ও পরিবারের ইচ্ছায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তবে তার মা-বাবা কখনও তাকে কোনো কিছুর জন্য চাপ দেননি বরং সবসময় তার সকল কাজে সমর্থন দিয়ে গেছেন।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও ছোট থেকেই মনের অভ্যন্তরে লালিত বাসনা ছিল বড় হয়ে আঁকাআঁকি নিয়ে কিছু একটা করবেন। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েনি শ্যামা। তবে মানুষের ডাক্তার হওয়ার সুযোগ না হলেও অবুঝ বৃক্ষরাজির ডাক্তার হওয়ার সুযোগ মেলে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কৃষি বিভাগে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে। বর্তমানে শ্যামা লেভেল-২ সেমিস্টার-২ তে অধ্যয়ন করছেন।
অধ্যয়নরত অবস্থায়ই হঠাৎ করেই বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের আগমন ঘটায় গাছের ডাক্তার হওয়ার সেই স্বপ্নও মাঝপথে থমকে গেছে। করোনার সংক্রমণ এবং বিস্তাররোধে প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তাই সারাদিন চার দেয়ালে আটকা জীবন হয়ে উঠেছিল অতিষ্ঠ। কিন্তু তার আঁকাআঁকি থেমে থাকেনি কখনো। সেই প্রয়াসে কিছু মানুষের সহযোগিতায় আর অনুপ্রেরণায় শুরু করেন নতুনভাবে যুদ্ধ।
ছোট বেলার মনের ভেতর সুপ্ত থাকা আঁকাআঁকি নিয়ে কিছু করার প্রয়াস থেকে দাদার নামে ইয়াসিন আর্টস এন্ড ক্যালিগ্রাফি নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ খুলেন। এরপর সেই গ্রুপে নিজের আঁকা চিত্রকর্ম ও ক্যালিগ্রাফি পোস্ট দিয়ে শুরু করেন অনলাইন বিজনেস। খুব দ্রুত তার এই কারুকার্য সকলের মাঝে সাড়া ফেলতে শুরু করে। তাছাড়া গ্রুপে গিয়ে ইচ্ছে মতো যেকোন আর্ট, স্কেচ বা ক্যালিগ্রাফি বানিয়ে নেয়ার জন্য অর্ডার করার সুযোগ থাকায় ক্রেতা যেমন বাড়ছে তেমনি মনের সুপ্ত বাসনা পুরনের লক্ষ্যও এগিয়ে যাচ্ছে শ্যামা।
শ্যামা জানান, ‘আমার এই উদ্যোগ নেয়ার দুই মাস হলো। গত ২৫ জুন হুট করেই পেজটা খোলা হয়েছে। শুরুতে অনেক ভয়ে ছিলাম। যদি সাড়া না পাই তেমন, বা সবাই কি এই শিল্পটার মূল্য দিবে? আলহামদুলিল্লাহ সবাইকে পাশে পেয়েছি। পেজটা খোলার দুই দিনের মাথায় ফার্স্ট অর্ডারটা আমার স্কুলের খুব প্রিয় একজন শিক্ষক আর আমার এক বান্ধবী সঞ্চিতা করে। আমি ঐদিন যে কি পরিমানে খুশি হয়েছিলাম তা অবর্ণনীয়। স্যার একটা ক্যালিগ্রাফি ও দুইটা আর্ট অর্ডার করেন, আর আমার বান্ধবী একটা ক্যালিগ্রাফি অর্ডার করেছিল। তখনো ফ্রেমিং করা হয়নি আমার ছবিগুলো, এদিকে লকডাউন কিভাবে কি করবো, পরে একাই ফুল প্রটেকশন নিয়ে বের হই। বাধাই এর দোকানে গিয়ে বাধাই করাই ও এক সপ্তাহ পর সব ছবি হাতে পাই।’
এ শিক্ষার্থী জানান, ‘নিজের চিত্রকর্ম এভাবে বাধাই করা দেখতেই খুব শান্তি লাগছিল। তারপর ডেলিভারিও একাই করে আসি, যদিও স্যার বাসায় এসেছিলেন। আমি আবার ক্রাফট বানাই, সব ডেলিভারি করার সময় কিছু না কিছু বানিয়ে উপহার দেই। স্যার বাসায় গিয়ে জানান তার খুব পছন্দ হয়েছে এবং আমার পেজে সেটার রিভিউও দিয়েছেন তিনি। এর মাঝে আরও দুটো অর্ডার পাই। এখন পর্যন্ত ১৫টা অর্ডার পেয়েছি। আপাতত পেজে ক্যালিগ্রাফি, আর্ট-ক্রাফট, হ্যান্ড পেইন্টিং এর কাজ করছি।’
এআই/এসএ/