অক্সিজেন সংকটে মারা গেল ১২ কোটি টাকার মাছ
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:৫১ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার
পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় রাজশাহীতে প্রায় ৬১৬ মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। গত মঙ্গল ও বুধবার জেলার বিভিন্ন পুকুরে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, হঠাৎ করেই পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে এ অবস্থা হয়েছে। যা গত ২০-৩০ বছরে চাষিরা এই অবস্থা দেখেননি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, ‘এ জেলায় ৬১৬ মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ১১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। জেলার ৪ হাজার ৯৩০ জন চাষির মাছের ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পবা উপজেলার চাষিরা।’
তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার সারাদিন আবহাওয়া গুমোট ছিল। পরেই আবার বৃষ্টি হয়। এসব কারণে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেসব পুকুরে অক্সিজেন বাড়ানোর জন্য ‘অ্যারেটর’ যন্ত্র রয়েছে, সেসব পুকুরে মাছের ক্ষতি হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়া ঠিক হয়ে যায়। রাজশাহীর আশপাশের জেলার অনেক পুকুরে একইভাবে বহু পুকুরের মাছ মারা গেছে।’
অলক কুমার বলেন, ‘যেসব পুকুরে কাতল ও সিলভার কার্প জাতীয় মাছ বেশি চাষ করা হয়েছে, সেই সব পুকুরের বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারণ, এই দুই জাতের মাছ পানির ওপরের স্তরের খাবার খায়। এই স্তরে উদ্ভিদ প্লাংটন সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে। এই দুই জাতের মাছ উদ্ভিদ প্লাংটন খেয়ে ফেলে। এতে অক্সিজেন তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।’
পবা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘পবায় ৩০৭ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা। ২০-৩০ বছর ধরে যেসব চাষি মাছ চাষ করছেন তারা বলছেন, এ রকম অবস্থা তারা কখনো দেখেননি।’
মোহনপুরের চাষি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলায় তার নয়টি পুকুর রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি পুকুরের পাহারাদার খবর পাঠান পুকুরে মাছ লাফালাফি করছে। পুকুর পাড়ে ছুটে গিয়ে দেখি পুকুরে মাছ তোলপাড় করছে। রাত ৩টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। এরপর মাছ ভেসে উঠে পুকুর সাদা হয়ে আছে। ৯টি পুকুরের একই অবস্থা। তিনি কিছুই করতে পারিনি। বাসায় ১০ কেজি অক্সিজেন ট্যাবলেট ছিল, তা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।’
পবা উপজেলার মাহেন্দ্রা গ্রামের চাষি ইব্রাহিমের ১০টি পুকুর রয়েছে। তার ৭টি পুকুরের প্রায় ৬০ মণ মাছ মারা গেছে। তিনি চেষ্টা করেও মাছ বাঁচাতে পারেননি বলে জানান। আবার সেই মাছ বাজারে নিয়ে বিক্রিও করতে পারেননি। কিছু মাছ ২০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। বাকিগুলো পুতে ফেলা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক এম মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘পানিতে অক্সিজেনের প্রধান উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। যার সাহায্যে পানির উদ্ভিদ প্লাংটন সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় পানিতে অক্সিজেন তৈরি করে। গুমোট আবহাওয়ায় সূর্যের আলো না পেলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে মাছ মারা যায়। এমনটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার দিনে।’
তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি হলে পানিতে সাঁতার কেটে বা প্যাডেল হুইলার ব্যবহার করে বাতাসের অক্সিজেন পানিতে মিশিয়ে দিতে হয়। তাতে মাছের অক্সিজেন পেতে সুবিধা হয়। যারা এ কাজ করেছেন তাদের পুকুরের মাছ রক্ষা পেয়েছে।’
এআই//আরকে