মসজিদে বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:১৮ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার | আপডেট: ১১:১৯ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার
নারায়ণগঞ্জে মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধদের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে আজ রোববার সকালেই দুইজনের মৃত্যু হলো। এতে করে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। বাকি ১৪ জনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। যাদের বেশিরভাগের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৯০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গুরুতর দগ্ধ আরও ১৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
মারা যাওয়া ২৩ জন হলেন- মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার (৪৮), ইব্রাহিম (৪৩), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), সাব্বির (২১), হুমায়ুন কবির (৭০), মোস্তফা কামাল (৩৪), রিফাত (১৮), জুবায়ের (১৮), জয়নাল (৫০), মাইনুদ্দিন (১২), জুয়েল (৭), মো. রাসেল (৩৪), নয়ন (২৭), কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), রাসেল (৩৪) ও জয়নাল, মসজিদের ইমাম আব্দুল মালেক (৬০), বাহার উদ্দিন (৫৫), সাংবাদিক নাদিম ও জুলহাস উদ্দিন (৩০)।
চিকিৎসাধীন রয়েছেন- ফরিদ (৫৫), শেখ ফরিদ (২১), মনির (৩০), মো. রাশেদ (৩০), আবুল বাশার মোল্লা (৫১), শামীম হাসান (৪৫), মো. আলী মাস্টার (৫৫), মো. কেনান (২৪), নজরুল ইসলাম (৫০), রিফাত (১৮), আব্দুল আজিজ (৪০), মিজান (৪০), হান্নান (৫০), আব্দুস সাত্তার (৪০), আমজাদ (৩৭) ও মামুন (২৩)।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বাইতুস সালাম জামে মসজিদে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
মসজিদে বিস্ফোরণ এসি নয়, গ্যাস লাইন থেকে ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন। শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ কথা জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, মসজিদের নিচ দিয়ে (মেঝেতে) একটি গ্যাস পাইপ রয়েছে। আর এ পাইপের লিকেজ দিয়ে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা হয়। মসজিদে এসি চলার কারণে দরজা জানালা সব বন্ধ রাখা হয়। আলো বাতাস বের হতে পারে না। ফলে নির্গত গ্যাস বের হতে পারেনি। বিস্ফোরণের আগে বিদ্যুতের কোনো কিছু জালানোর সময় স্পার্কিং করে। আর সেই স্পার্কিং থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মসজিদের মেঝেতে থাকা পানিতে গ্যাসের বুদবুদ ওঠায় সন্দেহ হয়। পরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের অনেকগুলো লাইন গেছে। আর পাইপগুলোর প্রতিটিতে একাধিক লিকেজ রয়েছে। সেই লিকেজের গ্যাস সব সময় মসজিদে ওঠতো। আর নামাজের আগে থেকে মসজিদের দরজা জানালা বন্ধ করে এসি চালু করার ফলে পুরো রুমে এসি ও গ্যাস মিশে যায়। আর তাতে করে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণ ঘটে। এসি বিস্ফোরণ হওয়ার কারণ হলো এসিতে গ্যাস ছিল।
এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫, ফায়ার ব্রিগেড ৪ এবং তিতাস ১০ সদস্যের আলাদা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই এ কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে নানা দিক ক্ষতিয়ে দেখেন।
জানা যায়, শনিবার সকালেই কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলোর প্রাথমিক ধারণা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট ও জমে থাকা গ্যাসের কারণেই এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
তবে এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘গ্যাস লিকেজ ঠিক করতে তিতাস কর্তৃপক্ষকে বারবার অবগত করা হয়েছে। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। মূলত গ্যাস লিকেজ ঠিক করতে কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল, কিন্তু না দেওয়ায় মেরামত করেনি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসী আর কিছু বলেনি তাদের। ফলাফল স্বরূপ তিতাসের গাফিলতির কারণে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল মামুন বলেন, ‘গতকাল রাতে টিভিতে খবর প্রচারের পর জানতে পেরে আমার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে এ রকম কোন আবেদন আমরা পাইনি। তারপরও ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট এলাকার জিএমকে সাথে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদেরকে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। টাকার দাবির কথা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আর ফায়ার ব্রিগেডের উপ পরিচালক নূর হোসেন আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যা বুঝা যাচ্ছে, এখানে এসি বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেনি। নামাজ পড়ায় এসি চালু ছিল। ফলে, মসজিদ পুরো আবদ্ধ ছিল। ফলে, মর্মান্তিক এ ঘটনায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসকে আমরা প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছি।’
এআই//এমবি