ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সিনহা হত্যা: ফের র‌্যাব হেফাজতে ৪ পুলিশ সদস্য 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৪ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্যের দ্বিতীয় দফায় আরও ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে তাদেরকে র‌্যাব-১৫ এর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। 

এর আগে কারাগার থেকে বের করে সদর হাসপাতালে নিয়ে তাদের শরীর পরীক্ষা করা হয়। জেলা কারাগারের সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম জানান, ‘অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৪ আগস্ট এই পুলিশ সদস্যদের দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত চার দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামিদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে।’

এর আগে পুলিশের অপর তিন সদস্য ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকত ও এএসআই নন্দদুলালকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের মধ্যে প্রদীপকে চার দফায় ১৫ দিন এবং লিয়াকত ও নন্দদুলাল রক্ষিতকে তিন দফায় ১৪ দিন করে রিমান্ডে নেয়া হয়।

লিয়াকত ও নন্দদুলাল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও প্রদীপ রাজি হননি। তারা সবাই এখন কারাগারে রয়েছেন। এপিবিএনের তিন সদস্যসহ এ পর্যন্ত আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি ১২টি সুপারিশ সম্বলিত ৮০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৭ সেপ্টেম্বর জমা দেবে। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। 

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার উৎস সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার যাতে অবতারণা না ঘটে সে ব্যাপারেও সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

ব্রিফিংয়ে কমিটির সদস্য লে. কর্নেল সাজ্জাদ জানান, ‘মেজর অব. সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনা সবার বিবেককে ব্যথিত করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, পেশাদারিত্ব ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকে পরিণত না হই। আমাদের উপর সরকার অস্ত্র দিয়ে যে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে তা যেন অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করতে পারি। সরকারি অস্ত্র যেন মানব থেকে দানবে পরিণত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জমা দেয়ার জন্য  সব ধরণের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন কমিটির সদস্যরা। এর মধ্যদিয়ে চার দফা সময় নিয়ে ৩৫ দিনের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা জানালেন কমিটির প্রধান মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ তৈরি হয়েছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে সম্মলিত এই প্রতিবেদনটি প্রায় ৮০ পৃষ্টা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের সাথে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরণের ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। দুটিই স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেওয়া হবে।’

গত ৩১ আগস্ট টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় গত ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলিকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে সদস্য করা হয়েছিল, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি। 

কিন্তু পরদিনই (৩ আগস্ট) তদন্ত কমিটি ৪ সদস্য বিশিষ্ট করে পুনর্গঠন করা হয়। এতে কমিটির প্রধান করা হয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির আলোকে এতে সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদকে।

গত ৩ আগস্ট তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেছিল। এ সময় কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সরকার ৭ কর্মদিবস সময় নির্ধারণ করে দিলেও এ নিয়ে তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে আরও ৭ দিনের সময় চায় এবং তা বাড়ানো হয় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। 

এআই//এমবি