ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক!

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

প্রকাশিত : ০৪:৫৯ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৫:১২ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার

গিরগিটির মতো আমরা দ্রুত রং পাল্টাই। সুবিধায় পাল্টাই, অসুবিধায় পাল্টাই। অনেকদিনের চেনা মানুষকে স্বার্থের জন্য মুর্হূতে না চেনার ভান করি। যাকে পছন্দ করি না তাকে দেখাই তার জন্যই জীবনবাজি! জানবাজি! তাকে দেখাই তাকে ছাড়া আমার একদিনও চলে না। আহারে উহুরে বলে তার জন্য মায়াকান্না কাঁদি! আবার কিছু পরে বাইরে গিয়ে তাকেই গালি দেই। 

প্রতিদিন আমাদের রং পাল্টানোর এই ক্ষমতা দেখে অবাক করোনা ভাইরাস। ও অবাক হয়ে সবার চরিত্র দেখে। ভাবে, বাহ! দারুণ ক্যারেক্টার তো। এরা ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়। এদের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে মাথা ঘোরে ওর। কত দেশ ঘুরলো অথচ এমন চরিত্র কোথাও দেখেনি করোনা। মনে পরে ওর ওকে ধ্বংস করতে আমেরিকা, ইতালি, চায়না, রাশিয়া সবাই কত কাজ করছে। অথচ এদেশে ওকে রক্ষা করতে ওর বংশ বিস্তার করতে এগিয়ে এসেছে এদেশের মানুষেরাই। সাহেদ, সাবরিনার প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি আসে ওর। আহা আরও যদি ভুল রিপোর্ট দেয়ার সময় পেত ওরা তাহলে কত মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পরতে পারতো। ঘরে ঘরে আশ্রয় মিলতো ওদের। আরাম আয়েশে দিন কাটতো। তা.. না কোন এক সাংবাদিক নিউজ করলো আর ধরা পড়ে গেল ওদের বন্ধু। এটা কি ঠিক কাজ হলো? গজগজ করে করোনা। 

কী সুন্দর বিক্রি হচ্ছিলো নকল স্যানিটাইজার, মাস্ক। ফলে দ্রুত বংশ বিস্তার করতে সুবিধা হচ্ছিলো ওদের। আহা কী চরিত্র মানুষের। ইতিহাস ঘেটে দেখে সেই ১৭৫৭ সাল থেকে চরিত্র পাল্টাচ্ছে দেশের কিছু মানুষ। দেশ স্বার্থ না দেখে, ব্যাক্তি স্বার্থ দেখতে গিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশের সাথে, মানুষের সাথে। হাসে ও,  না পাল্টাতে হবে। এদেশ থেকে চলে যাওয়া যাবে না। এখানেই থাকতে হবে। পাল্টালেই তেলাপোকার মতো টিকে থাকা যায়। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতে হবে নিজেকে। মৃদু হেসে দ্রুত খোলস পাল্টে ফেলে ও। এমন সুযোগ ছাড়া যাবে না। ছড়িয়ে পড়তে হবে সারাদেশ। 

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের দ্রুত গতির পরির্বতনে অবাক বিজ্ঞানীরা। বিশ্বে করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের হার যেখানে ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ বলে জানান বিসিএসআইআর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির একদল গবেষক। গবেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে সে বাহককে আক্রমণ করে। করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিডের পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যের কারণে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। 

এ নমুনা ৭ মে ২০২০ থেকে ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়। গবেষকরা বলছেন, অন্য যেকোনও দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে তার রূপ পরিবর্তন করছে। এদেশের করোনায় স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিউক্লিউটাইড মিউটেশনের মধ্যে ৫৩টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন ঘটে, যার মধ্যে ৫টি স্বতন্ত্র, যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি। 

কী খুশীর খবর, দিনদিন আমাদের করোনা আধুনিক হচ্ছে। জটিল হচ্ছে। কুটিল হচ্ছে। কিন্তু আমরা সাবধান হচ্ছি না।  সামনে আরো সে কি রুপ দেখায় কে জানে! আমিও কি জানি, কালকে আমার, আপনার চরিত্র কি হবে! চরিত্র পালটে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে তো শুধু ঘুরছি আমরা। 

সর্তক বার্তা: সুপ্রিয় বন্ধুরা! লেখাটা পড়ার সময় নিজের ক্যারেক্টার ঠিক আছে, অন্যেরটা নেই এ ভেবে কিন্তু পড়তে হবে! নিজেকে ভাবতে হবে সাধু, অন্যকে ভণ্ড। মন ও মুখের আসল চেহারা ঢাকতে পরতে হবে মাস্ক। তাহলে নিজের ও করোনার চরিত্রের কোনো সমস্যা হবে না। 

লেখক: সাংবাদিক

এমবি//