ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৬ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার

আজ বুধবার ৯ সেপ্টেম্বর সাবেক সফল শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মরহুম এ.এস.এইচ.কে সাদেক-এর ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। 

মরহুম এ.এস.এইচ.কে সাদেক ১৯৩৪ সালের ৩০ এপ্রিল যশোরের কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ইয়াহিয়া সাদেক (যুগ্ম কমিশনার), মাতা আসগারুন্নিসা সাদেক। ৭ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সাদেক ৩য়। 

তিনি ১৯৪৯ সালে হেয়ার স্কুল, কলকাতা থেকে এস.এস.সি, ১৯৫১ সালে এইচ.এস.সি ও ১৯৫৪ সালে বি.এ (সম্মান) অর্থনীতি, ১৯৫৫ সালে (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) এম.এ (অর্থনীতি) সাফল্যের সাথে পাস করেন। এছাড়া ১৯৭০-৭১ সালে যুক্তরাজ্যের নাফিল্ড ফাউন্ডেশন ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেলোশিপ লাভ করেন। 

১৯৫৬ সালে তিনি সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সি.এস.পি) ক্যাডারে যোগদান করেন। ১৯৫৯-৬১ পর্যন্ত মহাকুমা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সচিব হন, তিনি প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। 

এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধম প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহমদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বাধীনতার সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সহযোগীতাসহ দেশে, বিদেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সর্বশেষ দেশের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ স্বেচ্ছায় চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। 

কর্মজীবনে রাষ্ট্র তথা আন্তর্জাতিক ভাবে নানা স্বীকৃতে তিনি ভুষিত হন। কর্মক্ষেত্রে স্বমাহিমায় উদ্ভাসিত সকল প্রকার লোভ লালসার উর্দ্ধে থেকে এক কর্মযোগী মানুষ ছিলেন এ.এস.এইচ.কে সাদেক। তিনি অন্তরে যা লালন করতেন, বিশ্বাস করতেন, ব্যক্তিজীবনে তা বাস্তবে প্রতিফলনের চেষ্টা করতেন। তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার প্রয়াসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্ভাসিত হয়ে একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৯২ সালে বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মনোনিত হন। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দলীয় রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে যশোর- ৬, জাতীয়- ৯০ কেশবপুর আসন থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেন এবং তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এ আসন থেকে জয় লাভ করেন। 

৯৬ সালের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষাক্ষেত্রে এক আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপদ্ধতির সাথে সমন্বয় রেখে দেশের সকল ফলাফলে ‘জিপিএ’ সিস্টেম চালু করার পাশাপাশি সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল আকাশ ছোঁয়া। পশ্চাতপদ কেশবপুর উপজেলার সকল ক্ষেত্রে তাঁর হাত দিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়।

তিনি ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে স্বীকৃতি আদায় এবং সুন্দরবনকে ইউনেস্কোর অধীনে অন্তর্ভুক্ত করতে সফল হয়েছিলেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০১০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।

ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অমায়িক, নম্র, ভদ্র এবং কখনো পরনিন্দা করতেন না। কখনো অন্যের গালমন্দ করে নিজেকে হাইলাইট করেননি। তিনি কাজে বিশ্বাসী ছিলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিশ্বাসী ছিলেন। নিজের এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করার জন্য সবসময় সোচ্চার থাকতেন।

দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে তিনি সবসময় খুব কঠোর ছিলেন। অবৈধ কোনো নিয়মনীতি তিনি কখনো মেনে নেননি বা প্রশ্রয় দেননি। তাই কিছু লোভী বা স্বার্থান্বেষী মানুষ তাঁর প্রতি ছিল বিদ্বেষ মনোভাবাপন্ন। তবে পরবর্তীতে তিনি তা বুঝতে পেরে তাদেরকে এড়িয়ে চলেছেন। আসলে তাঁর মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শচেতনা ও দৃঢ় মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিত্ব যেটা একজন আদর্শ নেতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা উচ্চমানের বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়।

২০০১ সালে সারাদেশে আওয়ামী লীগের পরাজয় হলেও তিনি এমপি হয়েছিলেন কারণ তাঁর কাজ-কর্ম ও উন্নয়ন ছিল কেশবপুরবাসীর কাছে অভূতপূর্ব। পরবর্তীতে ১/১১ ধরপাকড়ের সময় তাঁর সাবেক কর্মকান্ডের হিসাব-নিকাশে শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাঁর গায়ে কোনো কলঙ্ক লেপন করতে পারেনি কেউ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ২০০৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এ মহান নেতার আকস্মিক মৃত্যুতে কেশবপুরবাসী বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

অপরদিকে তাঁর স্ত্রী বেগম ইসমাত আরা সাদেক যশোর-৬ (কেশবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

এমবি//