সুপেয় পানির সঙ্কট দূরীকরণে উদ্যোগ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৫২ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১০:২৭ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার
পানির সঙ্গে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন সম্পৃক্ত। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব বলে বোঝানোর নয়। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তাই বিশুদ্ধ পানি বড়ই প্রয়োজনীয়। পানির বিভিন্ন উৎস রয়েছে। যেমন: নদী, পুকুর, টিউবওয়েল ও বৃষ্টি। কিন্তু, বৃষ্টি ছাড়া বাকি উৎসগুলোর পানি বিভিন্ন কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী। বাংলাদেশের এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে সুপেয় পানির অভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিশেষ করে, সুপেয় পানির অভাব প্রকটভাবে বিরাজমান রয়েছে দেশের প্রত্যন্ত জনপদগুলোতে। সুপেয় পানি না থাকায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে এ জনপদের মানুষের জনজীবন। এর প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্যও। দেশের এ রকমই এক জনপদ দাকোপ। খুলনা জেলায় এর অবস্থান।
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদগুলোর মতো দাকোপেও উচ্চ লবণাক্ততার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী। এ অঞ্চলের মানুষ সুপেয় পানির জন্য কিছু উৎসের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে রয়েছে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং (আরডব্লিউএইচ), পন্ড স্যান্ড ফিল্টার্স (পিএসএফ), রিভার্স অসমোসিস (আরও), গভীর নলকূপ ও পুকুরের পানি। প্রযুক্তির উচ্চমূল্যের কারণে এ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী পানির এ প্রযুক্তিগত উৎসগুলো ব্যবহার করতে পারে না। তাই, তারা স্থানীয় উৎস থেকে বেশিরভাগ সময়ই দূষিত পানি পান করে। ফলে, এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, শিশু মৃত্যুর পাঁচটি কারণের মধ্যে চারটিই দূষিত পানির কারণে হয়ে থাকে। এছাড়াও, সুপেয় পানির অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। সর্বোপরি, মানুষের সামগ্রিক জীবনেই এর প্রভাব পড়ছে।
এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও এর প্রভাবগুলো সম্পর্কে সচেতন নন। উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষ ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে। জনগোষ্ঠী, অংশীদার ও সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে 'ভালো থাকুন ভালো রাখুন প্রতিপাদ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে জি-গ্যাস প্রতিনিয়ত কাজ করছে। সেই ভাবনা থেকেই দেশের সর্বদক্ষিণের প্রত্যন্ত এলাকা দাকোপে জি-গ্যাসের প্ল্যান্ট সংলগ্ন এলাকায় পান করলে নিরাপদ পানি, ভালো থাকবে আগামী' স্লোগানে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছে নিরাপদ মিষ্টি পানি সরবরাহ করার পয়েন্ট। এছাড়াও লবণাক্ত পানির স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপারে সচেতন করছে এলাকাবাসীকে।
২০১৭ সালে নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগটি শুরু করে জি-গ্যাস। ইতিমধ্যে, এ প্রকল্পে ১৫ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পানি সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ২ টি ১০০০ ফিট গভীর নলকূপ হতে প্রতিটি ৭.৫ হর্স পাওয়ারের ২টি সাবমার্সিবল পানির পাম্প ব্যবহার করছে। পাম্প থেকে সরাসরি ৪টি উচ্চ চাপের ট্যপ ব্যবহার করে পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। পানির ট্যাপের জন্য ভিত্তি এলাকা প্রায় ১০০০ বর্গফুট। প্রায় দুইশত পরিবার প্রতিদিন এখান থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকে। নলকূপগুলো দুই দফায় দশ হাজার লিটারেরও বেশি পানি সরবরাহ করে থাকে। সরবরাহ প্রক্রিয়া ও পানির গুণাগুণ তদারকির জন্য নিয়োজিত রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব হেলথ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সেফটি (এইচইএস) বিভাগ। পানি সরবরাহ সংক্রান্ত পাম্পগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও যেকোন সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানটির রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ ও এইচইএস বিভাগ যৌথভাবে কাজ করে।
সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য শরীর সুস্থ থাকা চাই। আর সুস্থ শরীরের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি। লবণাক্ততার জন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুপেয় পানির সমস্যা দূরীকরণে জি-গ্যাসের এ উদ্যোগগুলো নিঃসন্দেহে প্রদশংসনীয়। এ উদ্যোগের ফলে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দূর হবে।
আরকে//