ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

গাংনীতে জীবিতকে মৃত ও কৃষককে হুমকি দেয়ার অভিযোগ

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৫:৪২ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার

মেহেরপুরের গাংনীতে জীবিতকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া, কৃষককে বেঁধে রাখার হুমকি ও সেবা প্রত্যাশীদের হয়রানি করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ কার্যালয়ের আউটসোর্সিং কম্পিউটার অপারেটরদের বিরুদ্ধে।

কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির রেশ কাটতে না কাটতে গাংনী নির্বাচন অফিসে এসব কেলেঙ্কারীর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সচেতনমহল নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের উদাসীনতকে দায়ী করছেন।

তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের শিলিল পাড়ার মৃত দিদার শিলিলের ছেলে প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম জানান, ‘ব্যক্তিগত একটি কাজ করতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে জানতে পারি নির্বাচন কমিশনের ওয়েব পোর্টালে আমার কোন তথ্য নেই। আমি বেঁচে নেই -এ কারণে ভোটার তালিকা থেকে আমার নামসহ সকল তথ্য অপসারণ করা হয়েছে। আমার প্রয়োজন বিধায় বিষয়টি যাচাই করতে নির্বাচন অফিসে গেলে ভোটার তালিকায় নাম নেই বলে নির্বাচন অফিস নিশ্চিত করে। পরে এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন নিয়ে তালিকাভুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেওয়ার জন্য গাংনী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ লিখিত আবেদন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার জাতীয় পরিচয় পত্র নং ৫৭১৪৭৯৪৩৫১৮৯৪। আমার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকলেও মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। কি কারণে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে জানি না। তবে এ ঘটনার সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কবির উদ্দীন, আউট সোর্সিং কম্পিউটার অপারেটর তরিকুল ও মাহফুজুর রহমান জড়িত বলে ধারণা করছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধও জানিয়েছি।’ 

প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলামকে এনআইডি ফিরে পেতে সহায়তাকারী তার জামাতার ভাই নুর আহাম্মেদ বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি করে সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়া কিংবা অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ওয়েব পোর্টাল থেকে তার নামসহ সকল তথ্য বাদ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। নির্বাচন অফিসের অসাধু ব্যক্তিদের খামখেয়ালিতে জীবিত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করে দেওয়া চরম অন্যায়। এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সেবা প্রত্যাশিদের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নজরুল ইসলামকে পুনঃরায় ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি প্রত্যায়ন দেয়া হয়েছে।’

এদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্মার্টকার্ড নিতে গেলে আকসেদ আলী নামের এক কৃষককে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেন গাংনী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা কবির উদ্দীন। হুমকি পাওয়া কৃষক আকসেদ আলী পৌর শহরের পূর্ব মালসাদহ গ্রামের আনসার আলী মাষ্টারের ছেলে। 

কৃষক আকসেদ আলী জানান, ‘স্মার্টকার্ড নেয়ার জন্য কিছুদিন আগে নির্বাচন অফিসে যাই। সে সময় করোনার অজুহাত দেখিয়ে কয়েকদিন পরে যেতে বলেন নির্বাচন অফিসের লোকজন। পরে ৮ সেপ্টেম্বর আমি আবার স্মার্টকার্ড নিতে নির্বাচন অফিসে যাই। আমার স্মার্টকার্ড নেওয়ার আবেদনের বিষটি নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। নির্বাচন কর্মকর্তা কবির উদ্দীন তার সহকর্মীদের নির্দেশ দেন আমাকে ধরে বেঁধে রাখতে।’

কৃষক আকসেদ বলেন, ‘আমি চোর না ডাকাত আমাকে ধরে বেঁধে রাখবে? দেশে কি কোন আইন-বিচার নেই। এদিকে কৃষককে বেঁধে রাখার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে সেবা না দিয়ে কৃষককে বেঁধে রাখার নির্দেশ অমানবিক দাবি সচেতন মহলের। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা কবির উদ্দীন, কম্পিউটার অপারেটর তরিকুল ও মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’

ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা কবির উদ্দীন বলেন, ‘কৃষক আকসেদ আলীর সাথে সামান্য ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা ঠিক হয়ে গেছে।’ তবে কৃষককে কি কারণে বেঁধে রাখতে চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

একইসঙ্গে জীবিতকে মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কারণ জানতে চাইলে কোন জবাব না দিয়ে বলেন, ‘আবেদন পেয়েছি, বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মেহেরপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী এ ব্যাপারে বলেন, ‘ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহকারী সুপারভাইজাররা ভুলটি করেছে। সংশোধনের জন্য আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদনটি যথাযথ উপায়ে সংশোধনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। করোনার কারণে একটু সময় লাগবে। তবে ঠিক করে দেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কর্তৃক কৃষক আকসেদ আলীকে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেওয়া বিষয়ে বলেন, ‘এ রকম ঘটনা শুনিনি। অভিযোগ পেলে ওই কর্মকর্তার নিকট ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’

এআই/এনএস/