একজন খলনায়কের বিদায়
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:২০ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার
গুণী অভিনয়শিল্পী সাদেক বাচ্চু। না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। কিছুদিন আগেও ক্যামেরার সামনে ছিলেন তিনি। একটা সময় চুটিয়ে কাজ করেছেন। মঞ্চে, বেতারে, টিভিতে, সিনেমায়, সর্বত্র দাপুটে বিচরণ ছিল তাঁর। পাঁচ দশকের লম্বা ক্যারিয়ার বাচ্চুর। তবে নব্বই দশকে এহতেশামের ‘চাঁদনী’ সিনেমাতে অভিনয়ের পর জনপ্রিয়তা পান খলনায়ক হিসেবে। এই পরিচয়েই দেশজুড়ে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সাদেক বাচ্চুর।
ভিলেন ছাড়াও নানামুখী চরিত্রে বলিষ্ঠ অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ একটু দেরিতেই পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০১৮ সালে ‘একটি সিনেমার গল্প’–এর জন্য পুরস্কার পান।
রেডিও, টেলিভিশনে যাওয়ার আগে মঞ্চে ওঠেন সাদেক বাচ্চু। শিশুকাল থেকে মঞ্চের সঙ্গে তাঁর বন্ধন। মতিঝিল থিয়েটার তাঁর নাট্যদল। দলের সভাপতি ছিলেন তিনি। নিজেই নাটক রচনা করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন।
মহিলা সমিতিতে এক নাটকে তাঁর অভিনয় দেখেন তখনকার প্রভাবশালী টিভি প্রযোজক আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। তিনি সাদেক বাচ্চুকে নিয়ে যান টিভিতে। তিনি অভিনয় করেন ‘প্রথম অঙ্গীকার’ নাটকে। চুয়াত্তর সালের ঘটনা এটি। তাঁর অভিনীত নাটকের সংখ্যা হাজারের ওপর। প্রথম অভিনীত সিনেমা শহীদুল আমিন পরিচালিত ‘রামের সুমতি’।
‘সাদেক বাচ্চু’ নামটি তিনি পান এহতেশামের কাছ থেকে। তাঁর আসল নাম মাহবুব আহমেদ। ‘চাঁদনী’ সিনেমা থেকে তাঁর নাম বদলে যায়। বদলে যায় তাঁর খ্যাতির ধরনও। সাদেক বাচ্চু অভিনীত সিনেমার সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
অবসরে সাদেক বাচ্চু পুরোনো দিনের সিনেমা দেখতেন। বই পড়ে সময় কাটাতেন এই অভিনেতা। ২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ডাকঘরের চাকরি থেকে অবসর নেন। ১৯৭০ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে চাকরিতে ঢোকেন। তাঁর বাবা ছিলেন ডাকঘরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁর মৃত্যুর পর সাদেক বাচ্চুকে চাকরি দেওয়া হয়। পাঁচ বোন, তিন ভাই, বিধবা দাদি, বিধবা মাকে নিয়ে ছিল তাঁর বিশাল সংসার। সেই সংসারের দায়িত্ব তাঁকে বহন করতে হয়।
সংসারের সব দায়িত্ব শেষ করে সাদেক বাচ্চু বিয়ে করেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পারিবারিকভাবে সুখী ছিলেন সাদেক বাচ্চু। তবে জীবনের লম্বা সময় চাকরি, অভিনয়, সংসার নিয়ে সংগ্রামে কেটেছে তাঁর।
চাকরি করেও এত নাটক, সিনেমাতে কীভাবে কাজ করা সম্ভব হলো? এ বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে সাদেক বাচ্চু জানিয়েছিলেন, একসময় তাঁর অফিস ছুটি হতো দুইটায়। ডে-শিফট ধরতেন দুইটার পর। নাইট শিফটে তাঁর অফিস নেই। শুক্র, শনি দুদিন অফিস বন্ধ। পরিচালকরা তাঁকে সহযোগিতা করতেন। ছাড় দিতেন অভিনয়শিল্পীরাও। সবার সহায়তায় এত কাজ করা সম্ভব হয়েছে।
সাদেক বাচ্চুর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- জোর করে ভালোবাসা হয় না (২০১৩), জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার (২০১৩), জীবন নদীর তীরে (২০১৩), তোমার মাঝে আমি (২০১৩), ঢাকা টু বোম্বে (২০১৩), ভালোবাসা জিন্দাবাদ (২০১৩), এক জবান (২০১০), আমার স্বপ্ন আমার সংসার (২০১০), মন বসে না পড়ার টেবিলে (২০০৯), বধূবরণ (২০০৮), ময়দান (২০০৭), আমার প্রাণের স্বামী (২০০৭), আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭), প্রিয়জন (১৯৯৬), সুজন সখি (১৯৯৪)।
এসএ/