ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ইডেনছাত্রীর আত্মহত্যা, প্রেমিকসহ ৩ জনের নামে অভিযোগ গঠন

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:৪৩ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার

প্রেমিক ও সুইসাইড নোটসহ আত্মঘাতী মেঘা

প্রেমিক ও সুইসাইড নোটসহ আত্মঘাতী মেঘা

ইডেন কলেজ ছাত্রী ঝালকাঠির মেয়ে আলোচিত সায়মা কালাম মেঘার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মাহীবি হাসানসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের অব্যহতির আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত। 

ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার গত ৯ সেপ্টেম্বর তিন আসামি মাহীবি হাসান, তার মা সেলিনা নাফিস ও বোন নওরিন বন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য্য করেছেন।

বাদি পক্ষের আইনজীবী জানান, সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি, ভিকটিমের স্যুইসাইড নোট, সুরতহাল, ভিসারা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এই অভিযোগ গঠন করা হয়। 

অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার আবুল কালামের মেয়ে সায়মা কালাম মেঘার সঙ্গে ভিআইপি সড়কের মৃত নফিস উদ্দিনের ছেলে মাহীবি হাসানের প্রেম প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেঘাকে বিবাহের প্রস্তাব মাহীবি অস্বীকার করায় গত ২১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ বিকেল ৫টায় সায়মা কালাম মেঘা ঢাকার ধানমন্ডির একটি ভাড়া বাসায় মাহীবির সঙ্গে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করে।

এ ব্যাপারে মেঘার মা রুবিনা বেগম বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামি করে ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত করে গত ২০/০৯/২০১৯ তারিখ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত প্রধান আসামি মাহীবি হাসানকে কারাগারে পাঠিয়ে অপর দুজনের জামিন মঞ্জুর করেন। দীর্ঘ ছয় মাস পর মাহীবি জামিন লাভ করে।

এদিকে, ইডেন কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সায়মা কালাম মেঘা মৃত্যুর আগে চিরকুটে লেখেন, ‘আমি বাঁচতে চাইছিলাম। কিন্তু মাহীবি আর ওর মা আমাকে বাঁচতে দেয় নাই। আমি বারবার মাহীবির কাছে কুত্তার মতো যাই আর ও দিনের পর দিন আমারে পায়ে ঠেলে।’ 

২২ লাইনের একটি সুইসাইড নোটে মেঘা আরো লেখেন, ‘আব্বু-আম্মু আমারে মাফ কইরা দিও। আমার লাশের আশপাশেও যেন মাহীবি আসতে না পারে। আল্লাহ মানুষকে মেয়ে দেয়। কিন্তু সবাইকে মেয়ে দেয়া উচিত নয়। যাদের অনেক টাকা-পয়সা দেয়, শুধু যেন তাদেরই মেয়ে দেয়। তাহলে আমার মতো গরিবের মাইয়া নিয়া ওরা খেলতে পারবে না।’

মায়ের উদ্দেশে মেঘা লেখেন, ‘আম্মু আমি জানি আমি ছাড়া তোমার আর কেউ নেই। কিন্তু আমি নিরুপায়। তুমি মুক্তা চাচির কাছে জিজ্ঞেস কইরা দেইখো আমার পিঠ দেয়ালে ঠেইকা গেছে। তাই আজকে আমি মইরা গেলাম। আমার ভাইটারে মানুষ বানাইয়ো। যেন আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারে। আর আব্বুরে সামলাইও। আব্বুকে বুঝাইও, আমি নিরুপায় হইয়া মরছি।- মেঘা।’

অন্যদিকে, লাইভ ভিডিওতে মেঘার করুণ মৃত্যু দেখেও মন গলেনি প্রেমিক মাহীবির। মৃত্যর পর মেঘার সহপাঠী আফরিন জাহান আনিকা ও মেঘার মা রুবিনা আজাদকে ফোন দিয়ে বিষয়টি মাহীবি নিজেই জানান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করার পর মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দেন মাহীবি ও তার পরিবার।

এনএস/