বুদ্ধের শিক্ষা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:২৭ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০২:২০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার
গৌতম বুদ্ধ হলেন বৌদ্ধধর্মের প্রবক্তা। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা তাকে সেই বোধিপ্রাপ্ত বা দিব্য (অলৌকিক) শিক্ষক মনে করেন, যিনি সম্পূর্ণ বুদ্ধত্ব অর্জন করেছেন এবং নিজের অন্তর্দৃষ্টির কথা সকলকে জানিয়ে চেতন সত্ত্বাদের পুনর্জন্ম ও দুঃখের সমাপ্তি ঘটাতে সাহায্য করেছেন। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা বিশ্বাস করেন, গৌতম বুদ্ধের জীবনকাহিনী, কথোপকথনের বিবরণ, সন্ন্যাস নিয়মাবলি তার মৃত্যুর পর হতে সঙ্গায়নের মাধ্যমে বুদ্ধের বাণী সংরক্ষণ করে রাখতেন।
এক দিন রাজগৃহে অধিষ্ঠান করছিলেন বুদ্ধ। সে সময় এক আগন্তুক এলেন বুদ্ধের কাছে। প্রণাম করে প্রশ্ন করলেন, আমার একটি জিজ্ঞাস্য আছে। যদি অনুমতি করেন তো প্রকাশ করি। বুদ্ধ স্মিত হেসে বললেন, বলো তোমার যা জিজ্ঞাস্য আছে।
আগন্তুক বললেন, আপনি কখনই উগ্র হয়ে যান না, ক্ষিপ্ত হয়ে কাউকে কোনদিন কটু বাক্য অব্দি বলেন না। এমনকি যখন কেউ আপনাকে উত্ত্যক্ত করার মারাত্মক ভুল করে, তাকেও আপনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন। এই নম্র, শান্ত স্বভাব কিভাবে আপনি রপ্ত করেছেন যদি অনুগ্রহ করে বলেন।
বুদ্ধ সবটা মন দিয়ে শুনলেন। শেষে আগন্তুককে কাছে ডেকে বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি আর সাত দিন পরে তুমি মারা যাবে। তাই এই সব জিজ্ঞাসা ছেড়ে শেষ কটা দিন নিজের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কাটাও।
বুদ্ধের মুখে এই কথা শুনে আগন্তুক স্তম্ভিত হয়ে গেল। বিষন্ন মনে বুদ্ধকে প্রণাম করে সেখান থেকে বিদায় নিল। পরের সাত দিন সে ভীষণ নিচু স্বরে নম্রভাবে সবার সঙ্গে শেষ দেখা সারলো। জেনে না জেনে বিভিন্ন ভুলের জন্য সবার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিল।
৭ দিন পর আগন্তুক আবার রাজগৃহে এসে বুদ্ধের পায়ে প্রণাম করে বললেন, আমার এই জীবনের আজ শেষ দিন। আপনার দর্শন এবং আশীর্বাদে জীবন শেষ হবে এই আশা নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।
বুদ্ধ হেসে বললেন, বিগত সাত দিনে তোমার আচরণ কেমন ছিল? আগন্তুক বললেন, ভীষণ শান্ত এবং নম্র। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেছি আমি একটু একটু করে শেষের দিকে যাচ্ছি। তাই রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, অভিমান করে এই অবশিষ্ট সামান্য সময়টুকু অপচয় করতে চাইনি। যার সঙ্গেই মিশেছি, নম্রভাবে, শান্তভাবে কথা বলেছি।
বুদ্ধ বললেন, তুমি বোধ হয় তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো। আমি তোমায় সরাসরি উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু তাহলে তুমি শুধু শুনতে, উপলব্ধি করতে পারতে না। এই জগতে আমরা সবাই ক্রমশ ফুরিয়ে আসছি। কেউ জানে না কবে সে থেমে যাবে। তাই যতটুকু সময় বেঁচে আছি, ভালোবাসা, শান্তি আর ক্রোধহীনভাবে থাকাই বাঞ্ছনীয়। আর হ্যাঁ, তুমি যাতে নিজে তা উপলব্ধি করো সেই কারণে তোমায় বলেছিলাম তুমি সাত দিন পরেই মারা যাবে। তুমি মারা যাচ্ছো না। নিশ্চিন্ত থাক।
ছলছল চোখে আগন্তুক বললেন, ধন্য তুমি! তুমি আমার চোখ খুলে দিলে।
এমএস/