ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৩৫ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার
করোনা মহামারির প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেশিরভাগ দেশেরই মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে ভয়াবহ ধস নেমেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জিডিপি কমেছে ১০ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটাই বিপরীত। করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা হোঁচট খেলেও সরকারি নীতিসহায়তা ও উদ্যোক্তাদের সাহসি প্রচেষ্টায় দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুমাস জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৬৮৭ কোটি ডলারের। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। আর রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি হওয়ায় কমেছে বাণিজ্য ঘাটতিও। জুলাইয়ে বাণিজ্য ঘাটতি নেমে আসে ৮ কোটি ৬ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময় যা ছিল ১০৬ কোটি ডলার।
পাশাপাশি আমদানি ৯৪ কোটি ডলার কমে নেমে এসেছে ৩৯১ কোটি ডলারে। তবে কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির চাহিদা বাড়লে আমদানিতে গতি আসবে বলে আশা ব্যবসায়ী নেতাদের।
জানতে চাইলে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনায় দীর্ঘ একমাস রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সে সময়টা অনেকেই আতঙ্কে ছিল। পরে কারখানাগুলো খুলে দেয়ার নির্দেশ দিলে সকল নিয়মনীতি মেনে খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে, রপ্তানি আয় বেড়েছে।’
বর্তমানে রপ্তানির তুলনায় আমদানি কম, পাশাপাশি জুলাই-আগস্টে রেমিটেন্স এসেছে ৪৫৬ কোটি ডলার। ফলে জুলাইয়ে চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত ছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময় ঘাটতি ছিল ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। একই সময়ে বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত ১১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘করোনাকে ঘিরে রপ্তানি ও রেমিটেন্স নিয়ে যে আশঙ্কাগুলো করা হয়েছিল মার্চ-এপ্রিলের দিকে, তা আমরা বাস্তব রূপ দেখেছি। তবে জুন-জুলাইয়ে এসে রপ্তানিতে কিছুটা সুখবর মিলেছে। এতে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ওপরে ওঠে।’
এদিকে বিপর্যয় এড়াতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির বড় শক্তিগুলো। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটি বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৬৩ বিলিয়ন ডলার। বাজেট ঘাটতি ৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
লকডাউন তুলে নেয়ার পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর বলছে, গেল মাসে যুক্তরাজ্যের জিডিপি পুনরুদ্ধার হয়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। যদিও পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে এখনও ১২ শতাংশ কম।
এপ্রিল-জুন প্রথম প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি কমেছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এ বছর দেশটির অর্থনীতি ১০ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরো অঞ্চলের জিডিপি কমেছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে জার্মানির ১০ দশমিক ১, ইতালি ১৪ দশমিক ৪, ফ্রান্স ১৩ দশমিক ৮ এবং স্পেনের কমেছে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখছে করোনার উৎস দেশ চীন। যদিও প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি কমে যায় ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আর বছর শেষে চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো থাকলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হতে আরো কিছু দিন লাগবে। তখন আরও স্পষ্ট হবে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র।
আগামীতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।
আর বিনিয়োগ যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে প্রবৃদ্ধিকে বেগবান করা খুব কঠিন হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
ফলে রপ্তানি ও রেমিটেন্স আয় ধরে রেখে কর্মসংস্থানের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এআই/এমবি