ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

স্বল্প পোষাকের জন্য জরিমানার প্রস্তাব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৫৬ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ক্যাম্বোডিয়ায় ১৮-বছর বয়সী মলিকা টান যখন প্রথম জানতে পারলেন যে নারীরা কী ধরনের পোশাক পরবেন এবং পরতে পারবেন না সেবিষয়ে সরকার একটি আইনের খসড়া তৈরি করছে তখন তিনি এতোটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন যে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে তিনি একটি অনলাইন পিটিশন শুরু করে দিলেন।

প্রস্তাবিত ওই আইনে কোন নারী শরীর দেখা যায় এরকম পোশাক পরলে তাকে জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। জন-শৃঙ্খলা জনিত এই খসড়া আইনে নারীদের "খুব বেশি খাটো অথবা খুব বেশি খোলামেলা" পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আইনটিতে পুরুষের খালি গায়ে থাকা নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সরকার বলছে, দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক মান মর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিলটি আনা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ জানাজানি হওয়ার পর সেটা ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়েছে।

মলিকা মনে করেন, এধরনের একটি আইন করার উদ্যোগ নারীদের ওপর আক্রমণ। ক্যাম্বোডিয়ার একজন তরুণী হিসেবে ঘরের বাইরে বের হলে আমি নিজেকে নিরাপদ বোধ করতে চাই, যে পোশাক পরতে আমার ভালো লাগবে আমি সেই জামা কাপড় পরতে চাই। আমি আমার পরিহিত পোশাকের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করতে চাই, এবং আমি চাই না সরকার এখানে কোন সীমা বেঁধে দিক।

তিনি বলেন, আমি মনে করি নারীদের খাটো স্কার্ট পরা বন্ধ করার জন্য আইন বাস্তবায়ন করা ছাড়াও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার আরো অনেক উপায় আছে।

মলিকা টানের অনলাইন পিটিশন শুরু হয়েছে অগাস্ট মাসে এবং এর মধ্যেই ২১ হাজারের বেশি মানুষ তাতে সই করেছেন। আরো অনেক নারী তার এই অবস্থানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সোশাল মিডিয়াতে নিজেদের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন: "এই জামা পরার জন্য কি আমার জরিমানা হবে?"

তার পর সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে সোশাল মিডিয়াতে #mybodymychoice এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে।

"সব সময় আশা করা হয় আমরা যেন পুরুষের অনুগত দাস হয়ে থাকি এবং তাদের ইচ্ছে অনুসারে কাজ করি," বলেন মলিকা। তিনি মনে করেন বহু বছর ধরে প্রচলিত রীতি নীতি থেকে এসব আচরণ তৈরি হয়। সমাজ ধরেই যে নারীরা হবে নম্র এবং তারা কোন প্রতিবাদ করবে না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারীরা খোলামেলা বা শরীর দেখা যায় এমন পোশাক পরলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, 'যথাযথ' পোশাক না পরলে গানের শিল্পী ও অভিনেত্রীদের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এপ্রিল মাসে একজন নারীকে পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে সোশাল মিডিয়াতে জামা কাপড় বিক্রি করার সময় তিনি শরীর দেখা যায় এরকম 'অশোভন' ও 'উস্কানিমূলক' পোশাক পরেছিলেন।

সে সময় প্রধানমন্ত্রী হুন সেন অনলাইনে নারীদের এধরনের লাইভ স্ট্রিমিংকে "আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লঙ্ঘন" বলে উল্লেখ করেছিলেন। বলেছিলেন, এসবের কারণে নারীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

প্রস্তাবিত এই আইনটির প্রতিবাদে প্রচারণায় যোগ দেন ১৮-বছর বয়সী আরেকজন নারী আয়লান লিম। তিনি বলেছেন, ক্যাম্বোডিয়াতে সহিংসতার শিকার নারীকেই এর জন্য দোষারোপ করা হয়। এই সংস্কৃতির ওপরেই তিনি জোর দিতে চান।

"এটি যদি পাস হয়ে আইনে পরিণত হয় তাহলে এই বিশ্বাসটাই আরো জোরালো হবে যে যৌন অপরাধ করেও অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে এবং মনে হতে পারে যে এটা তাদের কোন দোষ নয়," বলেন তিনি।

"ক্যাম্বোডিয়ায় বেড়ে ওঠার সময় আমাকে সবসময় বলা হয়েছে আমাকে রাত আটটার মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য, খুব বেশি শরীর দেখাতেও না করা হয়েছে।"

প্রস্তাবিত এই আইনটিতে মূলত নারীর পোশাকের ব্যাপারে যেসব বিধি-নিষেধের কথা বলা হয়েছে, সোশাল মিডিয়াতে সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও, অনেকে বিলটির অন্যান্য বিষয় নিয়েও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।

খসড়া আইনটিতে যারা 'মানসিক প্রতিবন্ধী' তাদের 'জনসমক্ষে অবাধ' হাঁটাচলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করতে বলা হয়েছে সব ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি। এছাড়াও কোন একটি জায়গায় জড়ো হওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন ক্যাম্বোডিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক চাক সোপিপ বলেছেন, বিলটি পাস হলে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে।

ক্যাম্বোডিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক চাক সোপিপ বলেছেন প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, "এর ফলে দারিদ্র ও অসাম্য আরো বেড়ে যেতে পারে।"

সরকারের মন্ত্রীরা এবং জাতীয় পরিষদে বিলটি অনুমোদিত হলে এটি কার্যকর হবে আগামী বছর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী ওক কিমলেখ এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, "এটি এখন খসড়া পর্যায়ে আছে।"

তবে মানবাধিকার আন্দোলনের একজন নেতা চাক সোপিপের আশঙ্কা হচ্ছে জনগণের দিক থেকে চাপ দেওয়া না হলে কোন ধরনের যাচাই বাছাই ছাড়াই হয়তো বিলটি পাস হয়ে যেতে পারে।

"ক্যাম্বোডিয়াতে প্রায়শই খুব তাড়াহুড়ো করে আইন পাস হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে এনিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়," বলেন তিনি।

মলিকা আশাবাদী যে তার পিটিশনের ফলে লোকজনের মধ্যে এমন সচেতনতা তৈরি হবে যে শেষ পর্যন্ত সরকার প্রস্তাবিত আইনটি পরিবর্তন করবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি