সংযোগ সড়ক না থাকায় দুই বছরেও চালু হয়নি ব্রিজ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার
চুয়াডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা নদীর হাজরাহাটি-শিয়ালমারী পয়েন্টে ৬ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই বছর আগে নির্মিত হয় ব্রিজ। কিন্তু সংযোগ সড়ক তৈরি না হওয়ায় দুই বছরেও চালু করা যায়নি ব্রিজটি। এতে দুপাশের ২০টি গ্রামের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
সংযোগ সড়কের জন্য সরকারি জমির ওপর অবৈধ স্থাপনা অপসারণ অতি জরুরি। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিলেও তা সরানো হচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের দাবি, ‘যে কোনো মূল্যে জনস্বার্থে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে ব্রিজটি চালু করা হোক।’
চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি-আলমডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালমারী পয়েন্টে ৯৬ মিটার লম্বা একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ছয় কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ হয়। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই বছর। তারপরও ব্রিজটি চালু করা সম্ভব হয়নি।
ব্রিজ চালু না হওয়া প্রসঙ্গে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রিজের হাজরাহাটি গ্রামের অংশে সরকারি জমিতে রয়েছে অবৈধ স্থাপনা। কয়েকটি দোকানঘর ও একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। এগুলো অপসারণ করা না হলে সংযোগ সড়ক তৈরি করা যাচ্ছে না। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য দখলকারীদের পত্র দেওয়া হয়েছে। সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য আরও ৫১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার হাজরাহাটি-শিয়ালমারী পয়েন্টে ব্রিজ নির্মাণ করেছে। কিন্ত, রাস্তার জমি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও সংযোগ সড়ক তৈরি না হওয়ায় ব্রিজটি কাজে আসছে না। ফলে, অতিরিক্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ ঘুরে এলাকাবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীর স্কুল-কলেজে যাতায়াত, কৃষকের পণ্য পরিবহনসহ এলাকাবাসীর প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে একজন পল্লী চিকিৎসক সেতুতে ওঠার সময় পা ভেঙে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।
অবৈধ স্থাপনার মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এসিল্যান্ড ও এলজিইডি অফিস থেকে আগে আমাদের স্থাপনার চারফুট ভেঙে নিতে বললে তা ভেঙে ফেলা হয়। নতুন করে দিন পনেরো আগে মৌখিকভাবে আরও দুইফুট ভেঙে নিতে বলছে। কিন্ত, লিখিত কোনো ডকুমেন্ট দেওয়া হয়নি। অফিসিয়াল ডকুমেন্ট পেলে সরিয়ে নেব।’
এলাকাবাসী জানান, যেখানে ব্রিজ তৈরি হয়েছে সেখানে আগে কখনো নৌকা কখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা ছিল। দুপাশের গ্রামবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে আসছিলেন। সেই দাবি পূরণ হলেও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় ব্রিজটি জনগণের কোনো উপকারে আসছে না। সংযোগ সড়ক তৈরির জন্য বিভিন্ন মালামাল ব্রিজের পাশে খোলা আকাশের নিচে রেখে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
নদীর দুপাড়ের গ্রামবাসীরা আরও জানান, শিয়ালমারি, বটিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের এই ব্রিজ পার হয়ে চুয়াডাঙ্গা কিংবা মেহেরপুরের দিকে যেতে হয়। ব্রিজ চালু না হওয়ায় অন্তত ৩০ কিলোমিটার ঘুরে অনেককে বিকল্প পথে চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা কিংবা মেহেরপুর যেতে হয়।
ব্রিজের দুপাশ রয়েছে ঝুকিপূর্ণ। কাজ অসমাপ্ত থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পায়ে হেটে যাতায়াতেও ঝুঁকি নিতে হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
চুয়াডাঙ্গা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ সানা বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণ শেষ হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। যা নিয়ে গত রোববার জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।’
এআই//এমবি