ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নাটোরে প্লাবিত হচ্ছে ধান সবজি ও ডালের জমি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৩৬ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

উজান থেকে ভেসে আসা পানিতে নাটোরে আবারও বন্যার পদধ্বনিতে শংকিত হয়ে উঠছেন কৃষকরা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও প্রথম দফা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে জেলার কৃষকরা তাদের জমিতে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন। তাদের জন্য কৃষি বিভাগের প্রণোদনাও ছিল। রোপা আমন ধান ও মাসকালাই ডাল রোপণ কার্যক্রমের আবাদি জমি ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। সবজি এবং ডাল ফসলেও অগ্রগামী ছিলেন কৃষকরা। কিন্তু ধান, সবজি আর ডালের আবাদি জমি প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬৭ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। প্রথম দফার বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কৃষি বিভাগ বিল এলাকার কৃষকদের জন্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১০০টি বীজতলা তৈরী করে দিয়েছিল। সরকারী এ সহায়তা কৃষকদের জন্য সহায়ক হয়েছে। রোপা আমনের আবাদি জমি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।

মাসকালাই ডাল চাষে কৃষি বিভাগ জেলার ৫০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে তাদের এক বিঘা করে জমি চাষে প্রয়োজনীয় সার ও বীজ প্রদান করে। প্রায় চার লাখ টাকার এ প্রণোদনার প্রতিদান জেলার কৃষকরা প্রদান করেছেন। ১৮৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাসকালাই ডাল চাষ হয়েছে ২৫৫ হেক্টরে।

নাটোর জেলা বরাবরই সবজি চাষে অগ্রগামী। তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে সরকার। সবজি চাষে জেলার দুই হাজার ৬০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে কৃষি বিভাগ ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রদান করতে শুরু করেছে ১৩ প্রকার শাক-সবজি বীজ। চলমান সবজি চাষের আবাদি জমি বর্তমানে ৩ হাজার ৭২৫ হেক্টর।

আজ বৃহস্পতিবার চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা গতকাল ছিল ৫২ সেন্টিমিটার। উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং গত তিনদিনে ২০ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বিলে ঢুকে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চলনবিল ও হালতি বিলের আবাদি জমি প্লাবিত হওয়ার পরিধি ক্রমশ বাড়ছে।

চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত সিংড়া, গুরুদাসপুর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১ হাজার ২৭৪ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, ৩৪ হেক্টর জমির শাক-সবজি এবং ২ হেক্টর জমির মাসকালাই ডালের আবাদ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার নিমজ্জিত হওয়ার পরিধি আরও বেড়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিধি আরও বাড়বে বলে কৃষি বিভাগ ধারণা করছে।

হালতি বিলের বাঁশিলা এলাকার কৃষক মো. শাজাহান মোল্লা জানান, সাতদিন ধরে আমার দুই বিঘা জমির ধান পানির নীচে। বিলের তুলনামূলক উঁচু এলাকাতে ধান আবাদ করলেও তা তলিয়ে গেছে।

আট বিঘা জমির ধান হারিয়ে চলনবিল এলাকার কালিগঞ্জ কৃষি ব্লকের রামনগর গ্রামের দিশেহারা কৃষক চাঁন আলী বলেন, ‘প্রথম দফা বন্যার পরে আমরা অনেক কষ্টে জমিতে স্বপ্ন বুনেছিলাম, আমাদের স্বপ্নগুলো চোখের সামনে মারা যাচ্ছে।’ একই অভিব্যক্তি শালমারা গ্রামের মোখলেছুর রহমান এবং বড়গাঁও গ্রামের আবু তালেবের।

সিংড়া উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, গতকাল উপজেলায় নিমজ্জিত জমির পরিমাণ ছিল ৯৭০ হেক্টর, আজ বৃহস্পতিবার তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩২০ হেক্টর। অর্থাৎ ক্ষয়ক্ষতির পরিধি বেড়েছে সাড়ে তিনশত হেক্টর। আজ বৃহস্পতিবার এখন পর্যন্ত বৃষ্টি নেই, উজানের পানি বৃদ্ধি না পেলে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আমরা আশাবাদী।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আল আসাদ বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিংড়া পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত পানি বেড়েছে, তবে আজ থেকে পানি বৃদ্ধির প্রবণতা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ তাদের পাশে আছে। কৃষি বিভাগ সব সময় পরিস্থিতি মনিটরিং করছে। পানি বৃদ্ধির প্রবণতা কমে গিয়ে অবস্থার উত্তরণ হবে বলে আমরা আশা করছি।’ (বাসস)

এমএস/