ওহ, আমার জন্য হেলিকপ্টার!
নাসিম হোসেন
প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:৪২ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার
২৬ মার্চ ১৯৯১ সাল। চৈত্রের দাবদাহে রাঙ্গামাটির পাহাড়গুলো সব পুড়ছে। রোদে ধূসর বিবর্ণ হওয়া পাহাড়গুলি জুমচাষের প্রস্তুতি পর্বের আগুনে জ্বলছে। আগুনের লেলিহান শিখার লাল গোলক লাফিয়ে লাফিয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সন্ধ্যায় বামে লংগদু ক্যাম্পের হেলিপ্যাডে বসে দূর-পাহাড়ের এই দাবানল দেখছিলাম অনেকটা সতর্কতার সাথে। সবাই সজাগ কখন বাতাসের দিক পরিবর্তনে ঐ দাবানল না আবার আমাদের ক্যাম্পের দিকে চলে আসে।
আজ বিকালেই ফিরেছি নানিয়ারচরের সাথে একটা লিংক পেট্রোল শেষ করে। না, লিংক বা সরাসরি স্বাক্ষাত সেভাবে হয়নি বেশ কিছুটা পথ না হেটেই শেষ করতে হয়েছে। কারণটা ঐ পাহাড়ের দাবানল। নানিয়ারচরের ৮ম ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের পেট্রোলের সাথে লংগদু জোনের বামে লংগদু ক্যাম্পের সংযোগ হবে এই পেট্রোলের মাধ্যমে। রমজান শুরু হয়েছে এই চৈত্রের খরার মধ্যেও অনেকে রোজা আছে।
নানিয়ারচর যেতে আমরা অর্ধসমাপ্ত সিএন্ডবি সড়ক ছেড়ে ক্রশ-কান্ট্রি রুট পথ বেছে নেই। আর তাতেই বাধে বিপত্তি। পাহাড়ের উপরে এসে সম্মুখীন হই জুমের আগুনের। জ্বলন্ত পাহাড়কে পেছনে রেখে ঢাল বেয়ে নীচে নামছি। কিছুক্ষণ পরে দেখি আমাদের পেছনে আগুন। চৈত্রের এলোমেলো বাতাসে পাহাড়ের নল খাগড়ায় আর বাঁশের শুকনো পাতায় পড়ে আগুন হঠাৎ গোলাকার বলের মতো গড়িয়ে আমাদের পিছু নিয়েছে ক্ষেপা কুকুরের মতো।
প্রায় ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌঁড়ে নিচের দিকে নামছি। গরমে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে রমজানের সংযম গেল টুটে। পানির জন্য পুরো দলের মধ্যেই তখন হাহাকার। সবাই একটা ছড়া খুঁজছি পানির জন্য। কিন্তু চৈত্র মাসে পানির দেখা মেলা কঠিন। গলা শুকিয়ে কাঠ শুকনো ছড়ার মতো। আমি এই প্রথম চোখে মরীচিকা দেখছিলাম। শুকনো পাথরের উপর রোদের চিকচিক আলোকে পানি বলে ভ্রম হচ্ছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি বোধহয় জ্ঞান হারাবো। এটাকেই বোধহয় বলে ‘Delirium’।
হঠাৎ একটা ছড়ার পাথরের ফাটলে একটু পানির দেখা মিললো। অনেক দিনের জমানো পানিটা কালচে রং ধারণ করেছে। কারবালার হযরত ইমাম হোসেনের তৃষ্ণাতুর সৈনিকের মতো সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লাম ঐ পানির ওপর। পচাপাতা আর পোঁকার আস্তরণ সরিয়ে দুহাতের অঞ্জলি ভরে তা পান করলাম হামদর্দের রুহু আফজা মনে করে। তবে তা সত্যি সত্যি কী ছিল তা বোঝা গেছিলো সন্ধ্যার পরে। তৃষ্ণা কী জিনিস তা কয়েক ঘণ্টা আগে বুঝেছি। তবে ম্যালেরিয়া কী জিনিস তা বুঝতে শুরু করলাম কিছুক্ষণের মধ্যে।
হেলিপ্যাডের খোলা জায়গায় বসে কেমন শীত শীত অনুভূতি হতে লাগলো। তাই আমার তাবুর দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। অনুভব করলাম হাঁটুতে ব্যাথা, -‘সারাদিন হেঁটেছি তাই বোধ হয়’ - এমন ধারণা মিথ্যা হলো যখন সারা শরীরের জয়েন্ট গুলিতে ব্যাথা শুরু হলো। এরপর রিখটার স্কেলে আট মাত্রার কম্পন তুলে শরীরটা ঝাঁকি দিতে লাগলো।
আমার দাঁতের পাটিগুলো নিয়ন্ত্রণবিহীনভাবে কাঁপতে লাগলো। এরপরে মাউন্ট জাভার উদগীরনের মতো পেটের ভিতরে থাকা রুহু আফজাসহ তাবৎ দ্রব্যাদি মুখ দিয়ে বের হতে থাকলো।
তো লাভা উদগীরনের শব্দ শুনে পাশের তাবুতে থাকা আমার ক্যাম্প কমান্ডার ক্যাপ্টেন ইকবাল (১৪ লং, এখন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল) ছুটে এলেন।
তার ডাক চিৎকারে হাজির হলো মেডিক সার্জেন্ট মাহবুবসহ কয়েক সৈনিক। দুটো কম্বলের মধ্যে ব্যান্ডেজ হয়ে থাকা শরীরের শীত যেন কমে না। মেডিক মাহবুব ১০৩ ডিগ্রি জ্বর মাপার মধ্য দিয়ে আমাকে ঘোষণা করলো বামে লংগদু ক্যাম্পের ৭৪ তম আক্রান্ত হিসাবে।
বামে লংগদু ক্যাম্প প্রাণঘাতী ম্যালেরিয়ার অন্যতম হটস্পট হিসাবে ইতিমধ্যে ২৪ পদাতিক ডিভিশনে ‘চায়নার ইউহান’ খ্যাতি লাভ করেছে।
শান্তি বাহিনীর ক্ষুদ্রাস্তের আঘাত থেকে বাঁচতে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় হাজার ফুট উঁচুতে স্থাপন করা এই নয়নাভিরাম ক্যাম্পটিকে মাইনীর লেক থেকে মনে হয় পাহাড়ের কোলে এক ঝু্লন্ত বাবুই পাখির বাসা।
শান্তিবাহিনীর গুলি থেকে আপাতত শান্তি মিললেও মিলেনি এনালেক্স গ্রুপের স্ত্রী প্রজাতির ছয় পেয়ে দু-ডানা বিশিষ্ট এই ইতর কীটের একতরফা প্রেমের অত্যাচার থেকে। দীর্ঘদিন স্ত্রী-সংস্রব বর্জিত সৈনিকের রক্ত এদের খুব পছন্দ। দিনে রাতে এদের নিঃশব্দ চুম্বনে আক্রান্ত হতো সৈনিকের খোলা মুখ, ললাট, কব্জির উন্মুক্ত অংশ এবং টয়লেটরত সৈনিকের নিতম্ব।
আপাদমস্তক হিজাবে থাকা, মশানিরোধক তৈলের প্রলেপে ত্বককে আদ্র রাখা, ব্যারাকে সারাক্ষণ ধূপের ধোঁয়া, মশারির নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে ঘুমানো, ক্যাম্পের চারপাশের জঙ্গল সাফ, প্রতি সপ্তাহের কুইনাইন ডোজ-কোন কিছুতেই এদের আক্রমণ কমানো যাচ্ছিলো না।
তা নিজের বংশগত জিনের প্রতিরোধ ক্ষমতাই অনেক সময় জীবন মৃত্যুর পার্থক্য করে দিতো।
তবে কোন কুলক্ষণে যদি সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার মতো কোন রাজপ্রজাতির মশার চুম্বন কারো কপালে জুটে তবে মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে ফেরত আসা নিতান্তই ভাগ্য।
চারটি জেসোকুইন আর দুটি প্যারাসিটামল গেলার মধ্য দিয়ে শুরু হলো আমার ব্যাটেল এগেইনস্ট ম্যালারিয়া।
তীব্র জ্বরের পারদ নীচে নামাতে শুরু হলো স্পনজিং, মাথায় পানি ঢালা। আমাকে প্রায় দিগম্বর করে নিয়ে শোয়ানো হলো ক্যাম্পের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্থাপিত ম্যালেরিয়া বেঞ্চ নামে পরিচিত বাঁশের তৈরি মঞ্চে। এখানেই ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীকে শুইয়ে পানি ঢালা হয়। কিন্তু বামে লংগদু ক্যাম্পের হাজার ফুট উঁচুতে পানি এক মহার্ঘ বস্তু।
প্রায় ৭৫০ ফুট নীচের একটি ক্ষীণ জলাধার ক্যাম্পের লাইফ লাইন। অন্ধকারে টর্চ হাতে নেমে গেল ৭/৮ জন।
বেঘোর জ্বরের মাঝেও অনুভব করছিলাম মেডিক মাহবুব আমার থার্মোমিটারের রিডিং নিচ্ছে, কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখছে। সারারাতই কাটলো অসহ্য মাথা ব্যাথা নিয়ে। ভোর বেলায় ভীষণ ঘাম দিয়ে জ্বর কোথায় বিলিন হয়ে গেল।
দুদিন পার হয়ে গেল জ্বর ১০৩ এ এসে স্থিত হলো। কাহিল হতে থাকলাম। কিন্তু আমার চেয়েও খারাপ অবস্থায় পরলো সৈনিক ফণীন্দ্র। ১০৫ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে কী সব প্রলাপ বকতো। ৩০ মার্চ এসে খুব খারাপ রোগির সংখ্যা এসে দাঁড়ালো দশে। ইকবাল স্যার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন একটা স্পেশাল হেলি সর্টির জন্য। কিন্তু রোগির অবস্থা খুব খারাপ না হলে তো হেলিসর্টি হয় না। অতএব অপেক্ষা করতে হবে রুটিন হেলিসর্টি অর্থাৎ যেদিন রেশন নিয়ে আসবে সে দিনটার জন্য। বামে লংগদু দুর্গমতার কারণে সকল ধরনের প্রশাসনিক সহায়তা পায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে।
রেশন সর্টি মাসে দুটির বেশি হয় না। মাসের প্রথম দিকে একবার, মাঝামাঝি আরেকবার। অতএব সিএমএইচ’র নরম বিছানার দেখা পেতে আরো ১/২ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
এপ্রিলের ২ তারিখে হেলি ইভাকুয়েশনের সিদ্ধান্ত আসলো। সৈনিক ফণীন্দ্রের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। আমার অবস্থা ওর মতো না, তবুও ইকবাল স্যার রিস্ক নিলেন না। ১০৩ ডিগ্রি ধারী সকলেই সিএমএইচ এ স্থানান্তরিত হবে। কারণ বামে লংগদু থেকে কোন রোগীকে জল পথে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। কারণ ক্যাম্প থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটলে তবেই দেখা মিলবে স্পীডবোটের। কিন্তু একজন ম্যালেরিয়া রোগীর পক্ষে অতদূর হাঁটা সম্ভব নয়।
সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে হেলিকপ্টারের পাখার ‘দপ, দপ, দপ আওয়াজ ক্ষীণ থেকে স্পষ্টতর হতে লাগলো। নীল আকাশের দক্ষিণ-পূর্ব কোনে একটা কালো মতো গুবরে পোঁকা আস্তে আস্তে বড় হতে হতে একটি চার রঙ্গা বিশাল বাজপাখির আদল নিলো। আমার মনে একটা উত্তেজনা ছড়িয়ে দিলো। এই পাখিটা আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে সিএমএইচের একটি সফেদ বিছানায়। মুক্তি মিলবে মশা আর হাতিপোকার যৌথ আক্রমণ থেকে। আজ নিজেকে ‘লর্ড জীম’ মনে হচ্ছে: ওহ! আমার জন্য হেলিকপ্টার!
এতদিনে দেখে এসেছি তারকাখচিত সেনাধিকারীরা এসব বাহনে এসে আমাদের ক্যাম্প ভিজিট করেন। তবে দশজনের জ্বরজনিত দুর্গতি আমাদেরকেও আজ তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছে।
হেলিকপ্টারটি মাথার উপর এক চক্কর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে থেকে একটা ধূলিঝড় উড়িয়ে হেলিপ্যাডের ‘H’র উপর ল্যান্ড করলো। রাশিয়ার তৈরি এম আই-৮ হেলিকপ্টারের ক্রদের ইশারা পেয়ে অপেক্ষমান সৈনিকেরা দ্রুত ছুটে গেল চপারের দরজায় ত্রস্ত হাতে নামিয়ে নিলো রেশন, চিঠির প্যাকেট, পুরানো সংবাদপত্রের বান্ডিল, আরও কত কী।
চারজন সৈনিক চ্যাং দোলা করে আমাকে ঢুকিয়ে দিলো এম আই-৮ এর পেটে। বাকীরাও একইভাবে ঢুকে গেল, সব শেষে স্ট্রেচারে ফণীন্দ্র প্রায় অচেতন। না, ফণীন্দ্রের পরও ঢুকলো পাইলটের জন্য ক্যাম্পে লাগানো গাছ পাকা পেঁপে: বাঙ্গালি আতিথিয়তা বলে কথা।
৫/৭ মিনিটের এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবার উড়াল দিলো বাজপাখি। ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকলো আর ছোট হয়ে আসতে থাকলো ক্যাম্পের স্থাপনাগুলি। নতুন স্থাপিত ক্যাম্পের ব্যারাক গুলি এখনও অসম্পূর্ণ। দ্রুত ডান দিকে বাঁক নিয়ে মাইনি লেকের উপর দিয়ে উড়তে থাকলো। এ প্রথম পাহাড় লেকের দৃষ্টিনন্দন রুপের এরিয়াল ভিউ দেখে জ্বরের যন্ত্রণার কথা বেমালুম ভুলে গেলাম। কী স্বচ্ছ নীল জল রাশি! মনে হলো ঘন কাজলে আঁকা চোখ। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ঐ স্বপ্ন নীল জলে একটা ডুব দেই। দুই পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে সবুজ ধানের ক্ষেত যেন ঠাঁস বুননের এক জামদানি। ইস! এতো সুন্দর আমাদের পার্বত্যভূমি? এতো উপর থেকে তো মনে হয় না এই নিশ্চল পাহাড়ে বাঁকে বাঁকে মানুষের এতো হানাহানি।
তবে পার্বত্য চট্রগ্রামে শান্তিবাহিনীর সাথে সংঘাতে যত লোক মরেছে তার চেয়ে কম মরেনি এই ক্ষুদ্রাকৃতি মশার কারণে। আজ দশজন এক ক্যাম্প থেকেই যাচ্ছি সিএমএইচ এ বলা যায় না সবাই আবার সুস্থ হয়ে ফিরবে কিনা।
কেউ ফেরে কেউ ফেরে না।
২০০৬ সালে পানছড়ি জোনের রেজামনি ক্যাম্পের সৈনিক মহিউদ্দীন না ফেরার দেশে চলে গেছে প্রাণঘাতী সেরিব্রাল ম্যালারিয়ার এক দংশনে। ২৪ বছরের এই তরুণ সৈনিক হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরে। দ্রুতই তাকে আনা হয় ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে। আরএমও সহ সবাই ছুটে যাই এম আই রুমে। সুঠামদেহী এক তরুণ। অচেতন, চোখ দুটো নিশ্চল, কিন্তু ভয়ংকর রকম লাল। মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছে। ডাক্তার ক্যাপ্টেন সাখাওয়াত প্রাণপণ চেষ্টা করছে ওর হৃদ-স্পন্দন খুঁজে পেতে। অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল নাঈম (এখন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল) গলদঘর্ম। সিগনাল রুমে বসে ডিভিশন হেড কোয়ার্টারকে চাপ দিচ্ছেন দ্রুত হেলিকপ্টার পাঠাতে। এটা স্বাভাবিক ম্যালেরিয়া নয় এ আশংকা তীব্র হচ্ছে- হঠাৎ জ্বর থেকে অচেতন হওয়া অশুভ কিছুর লক্ষণ। সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া মস্তিষ্কের স্নায়ুতে আঘাত হানে। এর মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। যদি কেউ বেঁচেও যায় তবে পঙ্গুত্ব অবধারিত।
দিনের আলো শেষ হতে আর মাত্র দেড়- দুঘণ্টা বাকি। ওকে দ্রুতই পাঠাতে হবে চট্রগ্রামে। তা হেলিকপ্টারেও সময় নিবে চল্লিশ মিনিট। চারটা দশ মিনিটে হেলিকপ্টারের পাখার আওয়াজ আমাদের হৃদ-স্পন্দনের গতিকে স্বস্তি দেয়।
কিন্তু চূড়ান্ত স্বস্তি আমাদের দেয়নি। পাঁচদিন ICU-তে জীবন-মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে হার মানে সাতক্ষীরার প্রান্তিক এক গ্রাম থেকে আসা মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান।
২০০৫ সালে লেফটেনেন্ট কর্নেল ইকবালের সঙ্গে লেখক নাসিম হোসেন
মহিউদ্দীন দ্বিতীয়বার হেলিকপ্টারে চড়ে কফিনে শুয়ে বাড়ি যায়। তার কফিনের সাথে দেওয়ার জন্য তার ব্যাক্তিগত জিনিস খুঁজতে গিয়ে পাওয়া যায় তার নিজ হাতে লেখা বিবাহের অনুমতির জন্য কোম্পানি অধিনায়ক বরাবর দরখাস্ত ও হবু বধূর রঙিন একটি ছবি।
ধানক্ষেতের আইলে নীল-সাদা স্কুল ড্রেস পরা এক ১৬/১৭ বছরের এক কিশোরীর ছবি।
সাদামাটা এক মৌলিক স্বপ্ন: বিয়ে। অপূর্ণই থেকে গেল।
সেবার আমি হেলিকপ্টারে চড়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি আমার মৌলিক স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা নিয়ে।
একটি হেলিকপ্টার ভ্রমণ আমার ও মহিউদ্দীনের মধ্যে দু’রকম প্রেক্ষিত তৈরি করেছে; আমি বেঁচে গেছি, মহিউদ্দীন বেঁচে নেই, আর সে জন্যই আমি আজ লিখছি।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা
এমবি//