ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ

প্রকাশিত : ০৯:২৪ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:৩০ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতি-রাষ্ট্রের একটি ফ্রান্স। পশ্চিম ইউরোপের এ দেশটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। উন্নত জীবনযাত্রা, শক্তিশালী অর্থনীতি ও মানসম্মত সময়োপযোগী শিক্ষার পরিবেশ থাকায় ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা আগ্রহী। ফ্রান্সের শিক্ষার মান খুবই উন্নত এবং এর ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ফ্রান্সের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‌্যাকিং এ এগিয়ে রয়েছে। 

কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের অনেকেই বেছে নিচ্ছেন ইউরোপের এ দেশকে। তাই প্রতি বছর প্রচুর বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে যান ফ্রান্সে। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবে উন্নত ফ্রান্সে শিক্ষা গ্রহণের পর আছে বিশ্বব্যাপী ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ। অনেক বছর ধরেই ফ্রান্স গণিতশাস্ত্র, জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, জেনেটিকস, পদার্থবিদ্যা এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের জন্য বিখ্যাত।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে আরও পড়তে পারেন-

উচ্চশিক্ষার জন্য বেলজিয়াম যেভাবে যাবেন

পিএইচডি’র জন্য বৃত্তি দিচ্ছে সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়

বৃত্তি নিয়ে কানাডায় উচ্চশিক্ষা

ফ্রান্সে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার জন্য আছে বিখ্যাত অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। যেমন, কলেজ অব ফ্রান্স, ইকোল নরম্যাল সুপার, ইকোল পলিটেকনিক, ইউনিভার্সিটি অব বোর্দো ওয়ান, ইউনিভার্সিটি অব গ্রেনোবল ওয়ান, ইউনিভার্সিটি অব লিয়ঁ ওয়ান, ইউনিভার্সিটি অব মন্টপেলার টু, ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস ফোর, ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস সিক্স, ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস সেভেন, ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস ইলেভেন, ইউনিভার্সিটি অভ স্ট্রাসবোর্গ ওয়ান, ইউনিভার্সিটি অব টুলোঁ থ্রিসহ আরও অনেক। 

উচ্চশিক্ষার জন্য দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কোর্স, পিএইচডিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কোর্স পদ্ধতি চালু রয়েছে। তাছাড়া এমবিএ, মেডিসিন ইত্যাদি বিষয়ও পড়তে পারবেন ফ্রান্সে। সাধারণত ব্যাচেলর কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর, মাস্টার্স কোর্সের মেয়াদ ১ বছর ও অন্যান্য কোর্স বিভিন্ন মেয়াদে পরিচালিত হয়। উচ্চশিক্ষায় দেশটির নাগরিক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা প্রায় সমান। এখানে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে এবং শেষ হয় মে-জুনে। এখানে তিন সেমিস্টারে কোর্স পড়ানো হয়। প্রথম সেমিস্টার সেপ্টেম্বর/অক্টোবর, দ্বিতীয় সেমিস্টার জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় সেমিস্টার মে/জুন মাসে। 

যেসব বিষয়ে অধ্যয়ন করা যায়: ইকোনমিক্স, সোস্যাল এডমিনিস্ট্রেশন, আর্টস, হিস্ট্রি, জিওগ্রাফি, হেরিটেজ অ্যান্ড ট্যুরিজম, ল’, কম্পিউটার সায়েন্স, জিওলজি, বায়োলজি, ফিজিক্স, লিটারেচার, মেডিক্যাল সায়েন্স, ফার্মেসি, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সায়েন্স, ইনফরমেশন সায়েন্স, ফিলোসফি, মিউজিক, আরবান প্ল্যানিং, বিজনেস স্টাডিজ, ইলেকট্রনিক্স, এনাটমি, রেডিওলজি, ফার্মাকোলজি, ভিডিও অ্যান্ড মিডিয়া, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আরও অনেক বিষয়ে এদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ রয়েছে।

ফ্রান্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত ফ্রেঞ্চ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয়। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে শিক্ষালাভের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস বা টোফেল করা থাকতে হবে। আন্ডার গ্রাজুয়েটের জন্য ৫.০ থেকে ৫.৫ আইইএলটিএস এবং ৫৫০ টোফেল স্কোর এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের জন্য সাধারণত ৬.০ আইইএলটিএস এবং ৬০০ টোফেল স্কোর থাকতে হবে। 

ফ্রান্সে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর বার্ষিক ফি বাবদ ৩/৪ লাখ টাকা দিতে হয়। সাধারণত থাকা-খাওয়া বাবদ একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় মাসিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ভিসার জন্য শিক্ষার্থীর প্রথম রক্তের সম্পর্কের অভিভাবক স্পন্সর হলে ভিসা পাওয়া অনেকটা সহজ হয়। তবে শিক্ষার্থীর অন্য যে কোন অভিভাবক স্পন্সর করতে পারবেন। তবে আপনার যদি পর্যাপ্ত টাকা থাকে তাহলে আপনি নিজের নামেও ব্যাংক হিসাবে টাকা দেখাতে পারেন। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে আপনাকে ১০০০০-১৫০০০ হাজার ইউরো দেখাতে হবে। টাকাটা অফার লেটার পাওয়ার পর ব্যাংকে রেখে দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দিতে হবে। ভিসা হলে আপনি টাকা তুলে নিতে পারবেন। আর ফ্রান্সে প্রবেশকালে ইমিগ্রেশন যদি জানতে চায় আপনার কাছে পর্যাপ্ত ব্যাংক, ব্যাল্যান্স আছে কি না তাদের দেশে পড়াশুনা করার মত তাহলে অবশ্যই আপনার ব্যাংক সলভেন্সির নমুনা দেখাতে হবে।

ফ্রান্সের আইন অনুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থীরা বছরে সর্বোচ্চ ৯৬৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। ফুলটাইম কোর্সের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারবে। তবে ছুটি ও অবসরকালীন সময় ফুলটাইম কাজ করা যায়। মাসে প্রায় ৮০০-১০০০ ইউরো আয় করা যায়। পড়াশোনা শেষে জব খোঁজার জন্য আপনি ১ বছরের ভিসা পাবেন। ফ্রান্সে থাকা-খাওয়া বাবদ খরচ হবে প্রায় ৪০০/ ৬০০ ইউরো। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় ফ্রান্সে টিউশন ফি অনেক কম। সাধারণত টিউশন ফি নির্ভর করে কোর্স এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর। বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে হোস্টেল রয়েছে। তবে কেউ ইচ্ছা করলে ভাড়া বাড়িতে বা পেয়িং গেষ্ট হিসেবেও থাকতে পারবেন। 

পাসপোর্ট ট্যালেন্ট এর উদ্দেশ্য পল্লনিনিয়াল রেসিডেন্স কার্ড (পাসেসপোর্ট ট্যালেন্ট) আন্তর্জাতিক প্রতিভাগুলির ফ্রান্সে প্রবেশের সুবিধা প্রদান করা। এটি বিশেষ করে তরুন গ্র্যাজুয়েট যারা গবেষক, কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বা ইনোভেটিভ ইকোনমিক প্রোজেক্ট এর ডিজাইনার, ফ্রেঞ্চ টেক প্রোগ্রাম এর অং গ্রহণকারী, আর্টিস্ট, উচ্চ পর্যায়ের অ্যাথলেটদের ইস্যু করা হয়।
এই কার্ডটি আপনি এবং আপনার পরিবারকে ৪ বছরের ভিসা দেয়। এই সময়ের মধ্যে জব করার অধিকার আছে। একটানা ৫ বছর বৈধভাবে থাকার পর স্থায়ী বসবাসের (পিআর) জন্যে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে আরও কিছু শর্ত রয়েছে।

ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস হতে হবে। এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত সেপ্টেম্বরের দিকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ ও ভর্তির আবেদন করতে হবে। আবেদনকারী যোগ্য বলে বিবেচিত হলে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেয়। তবে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে সেশন শুরুর কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ পূর্বে আবেদন করতে হয়। 

ফ্রান্সে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে সেগুলো হল ১.শিক্ষার্থীর বৈধ পাসপোর্ট, ২. ফ্রান্সের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র, ৩. শিক্ষাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় খরচাপাতির সামর্থ্যের প্রমাণপত্র (স্পন্সর), ৪. সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের ফটোকপি এবং ভিসা আবেদন অন্যান্য যে কাগজপত্র সব সময়ই প্রয়োজন হয়। 

এমএস/