ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কোন বেলা খাই, কোন বেলা জোডে না...!

বাউফল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৫৬ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার

আব্দুল হাওলাদার

আব্দুল হাওলাদার

‘শ্রমিকগো মেসে রান্নাবান্না করতাম। সবাই ৫শ’ কইরগ্যা দিতে। থাকইক্কা খাইয়া হাজার চাইরেক অইতে। অইয়াই বাড়িতে দিতাম। করোনায় মেস বন্ধ অওনে বাড়িতে আইয়া আর কোন কাজ-কাম নাই। স্ত্রী-সন্তান লইয়া কোন বেলা খাই, কোন বেলা জোডে না।’

দীর্ঘদিন থেকে রাজধানী পুরান ঢাকার মালিটোলা ক্লাব সংলগ্ন মসজিদ এলাকার জনৈক রিয়াজ নামে একজনের বাড়িতে অবস্থান করে সেখানকার দিনমজুর শ্রমিকদের মেসের বাবুর্চীর কাজের উপার্জনে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার পরিচালনা করে আসছিলেন পটুয়াখালীর বাউফলের ধানদী গ্রামের আব্দুল হাওলাদার। তবে করোনায় কর্মহীন হয়ে এভাবেই বললেন তার খেয়ে না খেয়ে চলা নিদারুন দূরাবস্থার কথা।

হতদরিদ্র পরিবারে ছোটবেলা থেকে খেয়ে না খেয়ে বেড়ে ওঠার দু:খ-কষ্ট ভুলতে প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকায় পাড়ি জমানো সহজ-সরল প্রকৃতির গ্রামের মৃত. ধলু হাওলাদারে ছেলে পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল হাওলাদার জানান, গ্রামে থাকতে স্থানীয়দের অনেকেরই ফুট-ফরমাশ খেটেছেন তিনি। এখন সমাজে ভালো অবস্থানে আছেন এমন অনেকেরই উপকার করেছেন নানাভাবে। থানা সদরে পরীক্ষার হল হওয়ায় গ্রাম থেকে সেখানে অবস্থান করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেক ছাত্রছাত্রীর (উচ্চ শিক্ষিত হয়ে বর্তমানে সমাজে নানাভাবে নেতৃত্ব ও ভূমিকা রাখা) জন্য কর্দমাক্ত রাস্তা হেটে টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত টেনে খাইয়েছেন। জীবনে রক্ত-ঘাম ঝরিয়েছেন বিভিন্ন জনের কাজে গিয়ে বিপদে-আপদে। 

কিন্তু এখন করোনা মহামারীতে বিপাকে পড়ে কর্মহীন হয়ে পড়ায় দু’বেলা ভাত জোটে না তার। বড় মেয়ে সালমার বিয়ে দিয়েছেন কয়েকজনের সহোগোগিতায়। দরিদ্রতার কারণে পড়াশোনা এগোয়নি বড় ছেলের। এসময় ঠিকমতো খাবারদাবার না জুটলে স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলেটাকে নিয়ে যায় তার নানা বাড়ির লোকজন। ঢাকায় থাকাকালীন কোনমতে চললেও স্ত্রী, সন্তান নিয়ে পাঁচ জনের সংসার এখন আর চলছে না তার। লকডাউনে শ্রমিকরা মেস ছেড়ে দেয়ায় বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরতে হয়েছে তাকে। খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছেন, মেসে এখনও শ্রমিকরা ওঠেননি। পরিচিত কারো মাধ্যমে অন্য কোথাও মিলছে না অন্য কাজের সন্ধান। শারীরিক গঠনের কারণে কঠিন পরিশ্রমের কোন কাজে যুক্ত হওয়া সম্ভব না হলেও মিলছেনা তাও।

তিনি আরো জানান, করোনায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে তার মতো নিম্ন আয়ের লোকজনের জীবন-জীবিকায়। স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর দৃষ্টি আকর্ষণ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে একবার ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মাধ্যমে একবার সরকারি ত্রাণ সাহায্য পেলেও তা যথেষ্ট নয়। অনেকটা সহজ-সরল প্রকৃতির হওয়ায় ধার-দেনা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কোনমতে দু’বেলা খেয়েপরে বেঁচে থাকাই অনেকটা দায় হয়েছে। দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকার কারণে বিজিডি, ভিজিএফের মতো স্থায়ী কোন সরকারি সাহায্য তালিকাতেও নাম নেই তার।

আব্দুল হাওলাদার বলেন, ‘কোন বেলা খাই, কোন বেলা জোডে না। মাইনষের কাছে আত (হাত) পাইত্যা চাইয়া চলছি। আর পারি না।’

এনএস/