মাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১৩০টি সেবা ডিজিটাইজেশনের উদ্বোধন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪১ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার
সরকারের মাইগভ প্ল্যাটফর্মের আওতায় র্যাপিড ডিজিটাইজেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ অনলাইনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ১৩০টি সেবা ডিজিটাইজেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে মাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রূপান্তরিত ডিজিটাল সেবাসমূহের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এর সভাপতিত্বে এটুআই-এর চীফ টেকনোলজি অফিসার মোহাম্মদ আরফে এলাহী ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সেবাসমূহকে মাইগভের আওতায় র্যাপিড ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম সম্পর্কিত’ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক।
শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে করোনার মতো একটি কঠিন সময়ে দেশের সকল কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়তো। পুরো বিশ্ব যখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ঠিক তখনও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ফলে আমরা নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে জনগণের সেবা প্রাপ্তির অধিকার এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি জনগণের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, মাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ মাউশি’র সাথে সম্পর্কযুক্ত সকলের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং সহজ হবে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহবান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে নাগরিক সেবাকে আরো সহজ করা হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে ১৭৮টি সেবা নিয়ে মাইগভ প্ল্যাটফর্মটি উদ্বোধন করেন। ধীরে ধীরে সকল মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সার্ভিসগুলোকে মাইগভ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে, যাতে জনগণ সরকারের সকল সেবা সবসময় একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে গ্রহণ করতে পারেন। মাউশি’র সার্ভিস ডিজিটাইজেশনের ফলে সারাদেশের শিক্ষা পরিবারের সেবাগ্রহীতাগণ হয়রানিমুক্ত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। যেকোন ধরনের ডকুমেন্ট ও পেমেন্ট অনলাইনেই প্রদান করাও এর মাধ্যমে সম্ভব।
এইসব সেবাগুলোর সাথে ‘পরিচয়’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন এবং অথেন্টিকেশন করার সেবাও প্রদান করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, গত ১১ বছরে প্রযুক্তির অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন হয়েছে তেমনি ৩৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল সংযুক্ত করা হয়েছে, ১৮ হাজার সরকারি দপ্তরকে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির আওতায় আনা হয়েছে এবং ই-নথিও কিন্তু ৮ হাজারের অধিক অফিসে চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শুধুমাত্র জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং জনগণের হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দেওয়া। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগপোযোগী নীতিগত সিদ্ধান্তের ফলে ১৫৪টি ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের উপর আমদানি শুল্ক কমানোর কারণে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি বিক্রিত মোবাইল ফোনের মধ্যে ২ কোটি মোবাইল ফোন বাংলাদেশে অ্যাসেম্বেল করা হয়েছে। বর্তমানে অনেক মোবাইল কোম্পানি বাংলাদেশেই মোবাইল উৎপাদন করছে এবং বিদেশেও রপ্তানি করছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, মাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মাউশি’র সেবাগুলোকে ইন্টিগ্রেটেড পদ্ধতিতে একটি একক পয়েন্টের মাধ্যমে জনগণের হাতে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা পরিবারের এখন এক জায়গা থেকে ডিজিটাইজ সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারবে এবং জনগণের হয়রানি কমে আসবে বলে দাবি করেন উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান।
মাইগভের মাধ্যমে মাউশি’র সেবাগুলো ডিজিটাইজেশনের ফলে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সেবাগ্রহীতাগণ যেমন: শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মচারী’সহ সকলে খুব সহজেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেবার আবেদন, সেবা সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট, সেবার অগ্রগতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম সেবাগ্রহীতা মাইগভ ওয়েব, মাইগভ অ্যাপ, ৩৩৩ কলসেন্টারে কল করে অথবা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সম্পাদন করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে জনগণ সকল সেবার সকল ধরনের তথ্য পাবেন এবং উক্ত সেবার আবেদনও ট্র্যাক করতে পারবেন। অপরদিকে সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তাগণও একক জায়গা থেকে সকল সেবা প্রদান করতে পারবেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষক-কর্মচারীগণ মাতৃকালীন ছুটি, বৈদেশিক মাস্টার্স প্রভৃতি সেবা এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খুব সহজেই অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবেন। আবেদনের জন্য অফিসে না গিয়েও আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় সংযুক্তিগুলোর স্ক্যানকপি আপলোড দিয়ে কম সময়ে ঝামেলাহীন উপায়ে সম্পন্ন করতে পারবেন। এর ফলে সেবাগ্রহীতা ও প্রদানকারী উভয়ের সময় ও অর্থের অপচয় কমে আসবে, যা শুধুমাত্র শিক্ষা খাত নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার পথে এক যুগান্তকারী মাইলফলক। ‘মাইগভ’-এর মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ১১৫টি সেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সিস্টেমকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে আরও ১৫টি সেবাসহ সর্বমোট ১৩০টি সেবা ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা হয়েছে।
‘মাইগভ’ নামক ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবাসমূহকে দ্রুততম সময়ে ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর করা সম্ভব। সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে প্রচলিত ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি র্যাপিড ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের এটুআই প্রোগ্রাম বিদ্যমান সিস্টেমসমূহ যেমন: পরিচয়, ই-নথি, একসেবা, বিএনডিএ, একপে ইত্যাদির সমন্বয়ে মাইগভ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। যা ব্যবহার করে র্যাপিড ডিজিটাইজেশনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রাম জনগণের দোরগোড়ায় সকল প্রকার সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘মাইগভ’ প্ল্যাটফর্মটি চালু করেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী-এর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. আব্দুল মান্নান, এটুআই-এর যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (ই-গভর্নেন্স) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, এটুআই-এর যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) সেলিনা পারভেজ, এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী’সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরকে//