ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন

প্রকাশিত : ১০:০২ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সোমবার

"A true leader has the confidence to stand alone, the courage to make tough decisions, and the compassion to listen to the needs of others. He does not set out to be a leader, but becomes one by the equality of his actions and the integrity of his intent." --Douglas MacArthur তার এই উক্তির মাধ্যমে খুব সহজ এবং সাবলীল ভাবে একজন আদর্শ নেতার গুণাবলীর বর্ণনা করেছেন । একজন আদর্শ নেতার সব পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের এবং তার বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকা আবশ্যক । তিনি আরও বলেন যে একজন আদর্শ নেতা অন্যের চাহিদা এবং প্রয়োজন বুঝে নেয়ার ক্ষমতা রাখে ।

একজন মানুষ নিজেকে নিজেই নেতা বললেই নেতা হতে পারেনা । একজন নেতা শুধু তিনিই হতে পারেন যার কথা এবং কাজে একজন নেতার গুণাবলী প্রকাশ পায় । তার চিন্তা ধারা সব সময় তার মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকে । একটু লক্ষ্য্ করলেই এই সকল গুণাবলী আমাদের রাষ্ট্র নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে দেখতে পাওয়া যায় । তিনি একজন মহান নেতা তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা । তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং দূরদর্শিতার জন্য দেশ আজ উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে ।

বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তরিত করেছেন আমদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । নেতৃত্ব তার রক্তে বহমান কারণ তিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা । বঙ্গবন্ধু আমাদের সাথে নেই কিন্তু তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তারই কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । বঙ্গবন্ধুর পর যদি কেউ বাংলাদেশের আদর্শ রাষ্ট্র নেতা থেকে থাকেন তিনি শেখ হাসিনা এটা বললে একটুও ভুল হবেনা ।

শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন ২৮শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গি পাড়া গ্রামে । পাঁচ ভাইবোনের মাঝে শেখ হাসিনা সবার বড় । তার তিন ভাই শেখ কামাল,শেখ জামাল এবং ছোট্ট শেখ রাসেল এবং বোন শেখ রেহানা । ১৯৬৮ সালে তিনি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. এম . এ . ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজন সুযোগ্য সন্তানের জননী । তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ।

বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য । তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ তিনি মানুষিক স্বাস্থ্য এবং অটিজম নিয়ে কাজ করছেন । তিনি World Health Organization এর মানুষিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ২৫ সংখ্যা বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের একজন সদস্য । এরা বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করতে এখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন ।

শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে ১৯৬০ এর শেষের দিক থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন । তিনি তার পিতার যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । ১৯৭১ সালে দেশ মুক্তির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার দায়ে শেখ হাসিনা তার পরিবারের সকল সদস্য সহ পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী দ্বারা সীমিত সময়ের জন্য অবরুদ্ধ হন । বঙ্গবন্ধুকে সস্ত্রীক তিন পুত্রসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নিজ বাড়িতে কিছু বিপথগামী সামরিক অফিসার দ্বারা নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সেই সময়ে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন আর সেকারণেই প্রাণে বেঁচে যান । সেই দুঃখ আজও ভোলা হয়ত সম্ভব হয়নি তার । তারপরই শেখ হাসিনাকে ছয় বছরের জন্য ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়। 

পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যে ১৯৮০ সালে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা করেন। এই নির্বাসিত অবস্থাতেই শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের মুখ্য নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন । তিনি ১৯৮১ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী ছয় বছরের নির্বাসন শেষে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন । দেশে ফিরেই তিনি তার পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু করেন । একারণেই তাকে ১৯৮৪ সালে এবং ১৯৮৫ সালে কিছু সময়ের জন্য গৃহ বন্দি করে রাখা হয় । ১৯৮৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা তিনটি আসন লাভ করে। তিনি সে সময়ে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন । শেখ হাসিনা ১৯৯০ এ গণআন্দোলনের সূচনা করেন এবং সংবিধানের ৫১ এবং ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শান্তি পূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারের আন্দোলন শুরু করেন। 

তিনি প্রয়াত সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মোহাম্মাদ এরশাদ এর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন । এরশাদের শাসনামলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা ছিলনা এবং যারাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত তাদের গ্রেফতার করা হত নয়ত নির্বাসিত করা হত । হত্যাও করা হত সরকার বিরোধী কথা বলার কারণে । শেখ হাসিনার অদম্য সাহস এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে অবশেষে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আইন প্রণয়ন করা হয় ।

১৯৯১ সালের নির্বাচনেও শেখ হাসিনা প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রীর ভূমিকা পালন করেন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ব্যাপারে উদবুদ্ধ করেন । তিনি জনগণের মাঝে নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করান এবং তত্তাবাধয়ক সরকার গঠনে জোর দান করেন । ১৯৯৬ সালের তার ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে তত্তাবাধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । তিনি এই আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন লাভ করেন। 

১২ই জুন ১৯৯৬ এর নির্বাচনে শেখ হাসিনা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন এবং ১৯৯৬ সালের ২৩শে জুন তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন । প্রধানমন্ত্রী হবার পর পরই তিনি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন । এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে জন সংহতি সমিতির সঙ্গে শান্তি চুক্তি এবং ১৯৯৮ সালের জুনের বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন ।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গুরুত্ব আরোপ করার পাশাপাশি এই সময়টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে । বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন, হরতাল এবং সংসদ অধিবেশন বয়কট করে না না ভাবে সরকারী কার্যক্রমে বাধা প্রদান করেছে । এরপরও শেখ হাসিনার সরকার পাঁচ বছরের পূর্ণ সময়কালের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছিল । তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হন। তার বিরোধীদলীয় দল বিএনপি ক্ষমতা লাভ করে । শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী নেতাগণ সেই নির্বাচনের ফলাফলের বিরোধীতা ও করে কারণ তাদের দাবি ছিল যে নির্বাচন নিরপেক্ষ ছিল না। 

এর মাঝেও আমাদের জন নেত্রী শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন । কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনা এক নির্মম গ্রেনেড হামলার শিকার হন এবং ভাগ্যক্রমে খুব বড় ক্ষতি থেকে বেঁচে যান । তবে তার দলের বহু মানুষ এতে গুরুতর ভাবে আহত হন এবং ২৪ জন নিষ্ঠাবান দলীয় সদস্য মৃত্যু বরন করেন । সেই হত্যাকাণ্ডের চেষ্টা সত্যই খুবই অবিশ্বাস্য ছিল । কারণ স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে কোন রাজনৈতিক সমাবেশে এভাবে আক্রমণ করা আদৌ সম্ভব ছিল কিনা এটাই কেউ আজ অবধি বুঝে উঠতে পারেনি । পরবর্তীতে একটি সামরিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপে সকল সংসদীয় নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং জরুরি অবস্থা জারি করা হয় । শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। 

শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের জুন মাসে মুক্তি লাভ করেন । সেই বছরের ২৯ শে ডিসেম্বর আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । সেবার শেখ হাসিনা মহাজোট এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে একজোট হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ এর জানুয়ারীতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তবে তার মাস চারেক পরই তার স্বামী ডঃ এম . এ .ওয়াজেদ মিয়া মৃত্যুবরণ করেন । এবার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার সরকারের শাসনামল চলে ২০১৪ পর্যন্ত । ২০১৪ সালে আবার শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন এবং এখনও তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব খুব সুচারুরূপে পালন করে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ইউনেস্কোর মহা পরিচালক Irina Bokava ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরষ্কার লাভ করেন ২০১৪ সালে । এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন । এখানে উল্লেখ্য যে বর্তমানে প্রায় ১১, ১৮৫৭৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে । মায়ানমার সরকার দ্বারা নির্মম ভাবে বিতাড়িত এইসব অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পেরেছেন একটু নিরাপদ আবাস দিতে । একারণেই একটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যানেল "channel 4" ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'Mother of the Humanity ' খেতাবে ভূষিত করে ।

এছাড়াও 'Agent of Change Award ' , "Planet 50-50 Champion by UN Women এবং আরও কিছু উল্লেখযোগ্য খেতাব তিনি পেয়েছেন যার মাঝে উল্লেখযোগ্য খেতাব হচ্ছে বিশ্বের ৫৯ তম ক্ষমতাধর নারীর খেতাব । ২০১৫ সালের ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য মতে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ক্ষমতাধর নারীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান ৫৯ তম । তাঁর লিখিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে " Democracy in Distress Demanded Humanity " , "আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি " , "The Quest For Vision -2021 " বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম " ইত্যাদি ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন থেকে একটা বিষয়ই পরিলক্ষিত হয় তা হল জীবনে সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করে জিততে কিভাবে হয় । তার জীবনে অনেক বড় বড় আঘাত এসেছে কিন্তু তিনি ভেঙ্গে পড়েন নি । আজ বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা আছেন যিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে প্রতিনিয়ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন ।

একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সুসম্পর্ক ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাঁকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির সকল আশা-ভরসার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর শুভ জন্মদিনে আমাদের প্রার্থনা তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করেন এবং বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে পারেন।

লেখকঃ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন(ইউজিসি) এবং পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)

এমবি//