উচ্চশিক্ষায় বেছে নিতে পারেন আয়ারল্যান্ড
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ
প্রকাশিত : ০৮:০৯ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার
ডাবলিন সিটি ইউনির্ভাসিটি’র প্রবেশ দ্বারে এ ফলকের দেখা পাবেন- সংগৃহীত
উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমিয়ে থাকেন উন্নত দেশসমূহের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের খরচ বেশি হওয়ায় বৃত্তি নিয়েও যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। তবে এক্ষেত্রে সহজলভ্যতা ও কম খরচের বিষয়টাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জটিলতা ও শর্ত পূরণ করতে না পেরে সটকে পড়েন অনেকে। তবে উচ্চশিক্ষার জন্য আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ইউরোপের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ সহজই বলা যায়।
আটলান্টিক মহাসাগর বেষ্টিত দ্বীপ রাষ্ট্রটি উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য যারা আয়ারল্যান্ডে যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি। যেসব ডিগ্রি অর্জন করা যেতে পারে- ব্যাচেলর ডিগ্রি, হায়ার ডিগ্রি, মাস্টার ডিগ্রি এবং ডক্টরাল বা পিএইচডি ডিগ্রি। ব্যাচেলর ডিগ্রি তিন থেকে চার বছরের হয়ে থাকে। তবে ভেটেরিনারি মেডিসিন, আর্কিটেকচার, ডেন্টিস্ট এবং মেডিসিনের ক্ষেত্রে ছয় বছর লাগে। মাস্টার ডিগ্রি এক থেকে তিন এবং ডক্টরাল কিংবা পিএইচডি ডিগ্রি তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি।
উচ্চশিক্ষা নিয়ে আরও পড়তে পারেন-
উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিতে পারেন রাশিয়া
উচ্চশিক্ষার জন্য বেলজিয়াম যেভাবে যাবেন
পিএইচডি’র জন্য বৃত্তি দিচ্ছে সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়
বৃত্তি নিয়ে কানাডায় উচ্চশিক্ষা
বছরে একবারই ভর্তি হওয়া যায় আয়ারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আবার কিছু কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুবারও ভর্তির সুযোগ দেয়। ভর্তির সময়টা হলো- ফেব্রুয়ারি ও মার্চ। বছরে সাধারণত দুটি সেমিস্টার হয়ে থাকে। ফল সেমিস্টার: আগস্ট থেকে ডিসেম্বর, স্প্রিং সেমিস্টার: জানুয়ারি থেকে মে। কিছু সংস্থা দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সুযোগ করে দিচ্ছে। আবার ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বৃত্তিও দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি অব আয়ারল্যান্ড’র একটি ভবন- সংগৃহীত
অ্যাকাউন্টিং, অ্যাগ্রিকালচার, অ্যানাটমি, অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স, আর্কিটেকচার, ডিজাইন, আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, অডিও ইঞ্জিনিয়ারিং, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং, এভিয়েশন স্টাডিজ, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স, বায়োমেডিকেল সায়েন্স, বায়োটেকনোলজি, সিরামিকস, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া, ডান্স, ড্রামা, ই-কর্মাস, ইকোনমিকস, একাউনট্যান্সি, এবরোজিনাল এন্ড ইনডিজিনাস স্টাডি, অলটারনেটিভ মেডিসিন, এনথ্রপলজি, অ্যাপায়েড ম্যাথমেটিকস, একুয়াকালচার, কেমিষ্ট্রি, এনভায়রোনমেন্টাল স্টাডিজ, বিজনেস এন্ড ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করা যায়।
আয়ারল্যান্ডে ব্যাচেলর ডিগ্রির ক্ষেত্রে বছরে ১০ হাজার ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ১৫০ ইউরো এবং মাস্টার ডিগ্রির ক্ষেত্রে সাত হাজার ৪০০ থেকে ১৫ হাজার ৭২০ ইউরো টিউশন ফি লাগে। তবে কলেজে পড়াশোনা করতে প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ কম হয়। প্রতি মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরো দিয়েই অনায়াসে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ মেটাতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
টিরিনিটি কলেজ ডাবলিন ক্যাম্পস- সংগৃহীত
আয়ারল্যান্ডে সাধারণত ইউরোপের বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য অনুমোদন নিতে হয়। ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা এবং ছুটির দিনে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। বিদেশি শিক্ষার্থীরা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি পান বলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে তিন মাস ‘ফুল টাইম’ কাজ করা যায়। রেস্টুরেন্ট, দোকান, শপিং মলে কাজ করে ঘণ্টায় সাত থেকে ১২ ইউরো পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। এক ইউরো বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯০ টাকার ওপরে।
ভর্তির যোগ্যতায় ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ১২ বছরের শিক্ষাজীবন অর্থাৎ এইচএসসি পাস হতে হবে। IELTS-G ৫.৫ থেকে ৬.০ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL’র CBT-তে ২১৩ বা IBT-তে ৭৯ থেকে ৮০ পয়েন্ট হতে হবে। অন্যদিকে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ১৬ বছরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন হতে হবে। IELTS-এ ৬.০ থেকে ৬.৫ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL’র CBT তে ২১৩ থেকে ২৩৭ বা IBT তে ৭৯ থেকে ৯৩ পয়েন্ট হতে হবে।
আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপত্র পেতে চাইলে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করবেন। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। অবশ্য কোনও কোনও ইউনিভার্সিটির অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া নির্ধারিত অফিস থেকেও আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। কাগজপত্রসহ যথাযথ আবেদন করার পর ভিসা পেতে বছরখানেক সময় লাগে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ছয় থেকে আট মাসের মধ্যেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাদের মতামত জানিয়ে দেয়।
সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনপত্র সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে শিক্ষাগত কাগজপত্রসহ নম্বরপত্র, আবেদনপত্রের ফি পরিশোধের রসিদ, IELTS বা TOEFL ’র ফল, পাসপোর্টের অনুলিপি, স্পন্সরের কাছ থেকে পাওয়া আর্থিক দায়দায়িত্বের চিঠি এবং পাসপোর্ট আকারের ছবি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই ইংরেজিতে হতে হবে। ক্রেডিট ট্রান্সফার শিক্ষার্থীরা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কিংবা পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ক্ষেত্রে ক্রেডিট ট্রান্সফার করতে পারবেন। তবে কোর্স ৫০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যাবে না। অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের অফিশিয়াল কপি জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স সম্পন্ন করা হয়েছে সেখানকার কাগজপত্র দিতে হয়। আয়ারল্যান্ডের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ‘বি’ গ্রেড পর্যন্ত নেওয়া হয়।
ইউনির্ভাসিটি কলেজ ডাবলিন- সংগৃহীত
দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভর্তি শাখা’ বরাবর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিসহ আবেদন করতে হয়। আবেদন ফি বাবদ ৪৫ থেকে ৯০ ইউরো পাঠাতে হয়। আবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ যোগ্য শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় ‘অফার লেটার’ প্রেরণ করে। অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের কোন দূতাবাস না থাকায় ভারতের নয়া দিল্লির আইরিশ দূতাবাসে আবেদন পাঠাতে হবে।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব ঠিকানা:
Dublin City University
www.dcu.ie
University Of Limerick
www.ul.ie
University Of Dublin
www.tcd.ie
National University Of Ireland
www.nui.ie
University Of Ulster
www.ulster.ac.uk
Queen's university
www.qua.ac.uk
Schiller International University
www.schilla.edu
দূতাবাসের ঠিকানা:
The Embassy Of Ireland
230 Jor Bagh, New Delhi-3, India
Tel: 011-24626733/ 741/ 714/743
Visa Office Fax: 011-2460 3335
e-mail: ireland@ndf.vsnl.net.in
Web: www.irelandinindia.com
আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট:
https://www.educationinireland.com/en/
এমএস/এনএস/