মিন্নির মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে যা বলা হলো আদালতে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১৩ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার
বাবার বাইকে চড়ে আদালতে আসেন মিন্নি
বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির মৃত্যুদণ্ড হলেও শুরুতে তিনি ছিলেন ওই মামলার এক নম্বর সাক্ষী। কিন্তু পুলিশের তদন্তের পর মামলার চার্জশিটে মিন্নির নাম যুক্ত করা হয় অভিযুক্তের তালিকায়।
তদন্তের এক পর্যায়ে গত বছরের ১৭ জুলাই আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি প্রায় দেড় মাস জেলে ছিলেন। পরে তিনি হাইকোর্টের আদেশে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত ছিলেন।
আজ বুধবার সকালেই মিন্নি বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়েছিলেন তার বাবার সাথে, মোটরসাইকেলে করে। তবে মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ার পর তাকে আদালত থেকে কড়া পুলিশী পাহারায় কারাগারে নেয়া হয়।
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের বাবা যে মামলা করেছিলেন, সেখানে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ছিলেন এক নম্বর সাক্ষী। তবে পুলিশের তদন্তের পর, স্বামীর হত্যা মামলার সাক্ষী থেকে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে চার্জশিটে ৭ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়।
এখন তার মৃত্যুদণ্ড হলো। বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। মিন্নি ছাড়াও এই মামলায় আরো পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তবে বাদি এবং বিবাদি- দুই পক্ষের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রায় নিয়ে যে সব প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে- সেখানেও আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির প্রসঙ্গই প্রাধান্য পেয়েছে।
তার মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে আদালত রায়ে কি বলেছেন- তা নিয়েও বক্তব্য তুলে ধরেছেন দুই পক্ষের আইনজীবীরা। মামলায় সরকারি আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর ভুবন চন্দ্র হাওলাদার জানিয়েছেন- আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তার স্বামীকে হত্যার 'ষড়যন্ত্র' এবং 'পরিকল্পনায়' যুক্ত ছিলেন, সেটা প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন- মিন্নি ছিলেন ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী- এটি আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।
বিপরীতে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহবুব বারী আসলাম বলেছেন, "মিন্নির মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যাপারে আদালত বলেছে- হত্যার ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলে যখন তার স্বামী রিফাত শরীফ উঠছিল, তখন মিন্নি মোটরসাইকেলে না উঠে পিছনের দিকে যায়। সে সময় রিফাত শরীফ তার পিছনে পিছনে দৌড়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য আসামিরা রিফাত শরীফকে ধরে নিয়ে আসে টানাহেঁচড়া করতে করতে। তখন মিন্নি স্বাভাবিকভাবেই হাঁটছিল। এরপরে চূড়ান্ত ঘটনাটি ঘটে।"
মাহবুব বারী আসলাম আরও বলেছেন, হামলার মুখে তার স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি- যা ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল এবং তা তখন ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সে বিষয়টি কতটা বিবেচনা করা হয়েছে, তা নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।
পনের মাস আগে গত বছরের ২৬ জুন বরগুনার কলেজ রোডে প্রকাশ্য দিবালোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে। এর প্রধান আসামি ছিলেন- সাব্বির আহমেদ নয়ন, যিনি নয়ন বণ্ড নামে পরিচিত। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, তার মেয়ে এই মামলায় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এবং হাইকোর্টে আপিল করবেন বলেও জানান।
তবে সরকারি আইনজীবী ভুবন চন্দ্র হাওলাদার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, মামলার তদন্তসহ সব প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবেই হয়েছে। সূত্র- বিবিসি।
এনএস/