ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

দাদা-দাদীকে পিটিয়ে বের করে দিলো সম্রাট

ফেনী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:০৬ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ বুধবার

সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন ও তার দাদা-দাদী।

সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন ও তার দাদা-দাদী।

অর্থ ও সম্পত্তি দখলে নিতে নির্যাতন, হামলা ও মারধর করে বৃদ্ধ দাদা-দাদী ও চাচা-চাচীকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন নামে এক যুবক। সম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর গ্রামে আব্দুল মজিদ মজুমদার বাড়িতে।

জানা যায়, বিগত চার পাঁচ মাস যাবৎ নাতি সম্রাট আকবর মজুমদার ওরফে পাপন তার সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে দাদা-দাদীর ওপর নির্মম নির্যাতন করে যাচ্ছেন, ছাড়ছেন না চাচা-চাচীকেও। তার পিতার নির্দেশনা অনুযায়ী দাদা-দাদীকে ঘর থেকে বের করার জন্য করেছেন শারীরিক নির্যাতন। এসব ঘটনায় দাদা-দাদীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। পাপনের মারধর ও নির্যাতনে বর্তমানে তার দাদী অনেকটা অচল অবস্থায়, স্ট্রোক করেছেন বেশ কয়েকবার। এসব নিয়ে দাদা-দাদী অনেকের কাছে ধর্ণা দিলেও সমস্যার মেলেনি কোনও সমাধান।
 
এমনকি নাতি পাপনের নির্যাতন ও মারধর থেকে বাঁচতে দাদা আবদুল মজিদ মজুমদার ফুলগাজী থানায় দুবার অভিযোগ করেও পাননি কোনো সাহায্য। 

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার উত্তর আনন্দপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ মজুমদার চার ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে কোন রকম জীবনযাপন করছেন। সংসারের অভাব মোচনে জমি বিক্রি করে বড় ছেলে মোশারফ হোসেন শাহাবুদ্দিনকে সৌদি আরব পাঠান তিনি। পরে বড় ছেলের পাঠানো টাকা ও অপর ছেলের রোজগারের টাকা দিয়ে ২০১৫ সালে ১২ ডিসিমল জায়গার ওপর থাকার জন্য ৮ রুমের বিল্ডিং নির্মাণ করেন। স্ত্রীসহ নিজে এবং অন্য ছেলেদের থাকার জন্য দ্রুত কাজ শেষ করেন। 

পরে গত চার মাস ধরে বড় ছেলে শাহাবুদ্দিন সংসারে ঝামেলা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি বিদেশ ফিরে যাওয়ার পর তার ছেলে সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন তার বাবার টাকায় বাড়ি করা হয়েছে- বলে দাবি করলে দাদা আবদুল মজিদ মজুমদার শাহাবুদ্দিনের নামে ৪০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। তার কয়েকদিন পর থেকে আরো টাকা পাওয়ার অভিযোগ তুলে দাদা-দাদী ও চাচা-চাচীকে গালমন্দ, হুমকি-ধমকির একপর্যায়ে পাপন সবাইকে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য চাপ প্রদান করে। বিষয়টি তার বাবা শাহাবুদ্দিনকে জানালে তিনিও সবাইকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ছেলেকে নির্দেশ দেন। 

সর্বশেষ, গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার আব্দুল মজিদের ছোট ছেলে আব্দুল কাইয়ুম বাড়িতে আসলে ভাতিজা পাপন তাকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয়। এ সময় দাদা আবদুল মজিদ ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এগিয়ে আসলে তাদের উপর হামলা ও মারধর করে গুরুতর আহত করে পাপন। এ সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।

ওই ঘটনায় আব্দুল মজিদের চাচাতো ভাই মাহমুদুর রহমান ও তার স্ত্রী কল্পনা আক্তার এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও চড়াও হয় পাপন। ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী এনে কল্পনা আক্তারের ঘরে হামলা করার চেষ্টা চালান পাপন। বাধা দিলে তার ছেলেকেও তুলে নেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কল্পনা আক্তার বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ভূইয়াকে জানালে তিনি নিজে কিছুই করতে পারবেন না বলে জানান এবং থানায় মামলা করার পরামর্শ দেন।

স্থানীয় মোশারফ হোসেন জানান, পাপন মাদকাসক্ত ছেলে। এলাকায় তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। স্থানীয় চেয়ারম্যানের আত্মীয় হওয়ায় তার ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলে না। 

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুল মান্নান জানান, আমার মা-বাবা দুজনেই অসুস্থ। আমি তাদের সেবা করি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে- আমার বড় ভাইয়ের ছেলে পাপনের নিষ্ঠুর নির্যাতনের আমার মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে রক্তাক্ত করেছে। বিষয়টি সমাধান করার জন্য আমার মামা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে জানালে তিনি কোনো বিচার করেননি। তার আপন বড় বোনের জামাইকে মারধর করলো তাদের নাতি, তবুও মামা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 

আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি। বর্তমান আমরা ঘরছাড়া এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ভূইয়া জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। তারা আমার আত্মীয়। পাপন ছেলেটির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতাও রয়েছে। আমি এসব ঘটনা কিছুদিন যাবত পর্যবেক্ষণ করছি। তবে খুব শীঘ্রই সমাজের মুরুব্বিদের নিয়ে এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করবো, অন্যথায় প্রশাসনের সহযোগিতা নিবো। 

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত সম্রাট আকবর মজুমদার পাপন'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবার টাকায় ঘর করা হয়েছে। খরচের কিছু অংশ বাবদ জমি দিলেও বাকি টাকা এখনও পরিশোধ করেননি আমার দাদা এবং চাচারা। এ নিয়ে গত বেশ কয়েক মাস আমাদের পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ চলছে। দাদীর শরীরে মারধর বা জখমের যে আঘাত আপনাদেরকে দেখিয়েছে সেটা অন্য কোথাও পড়ে গিয়ে হয়েছে। দাদা-দাদীকে আমি মারধর করেছি- এই অভিযোগ মিথ্যা। আমার বন্ধুবান্ধব এসেছিল দাদা-দাদীর সঙ্গে কথা বলেছে, কিন্তু কেউই তাদের গায়ে হাত তোলেনি। আমার দাদা-দাদীকে ঘর থেকে বের হতে আমি কোনদিনই বলিনি। আমার দাদাই প্রথম আমাদেরকে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন এবং আমার মায়ের গায়ে হাত তুলতে গিয়েছিলেন। তবে ঘরের সামনের দরজা আমি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছি- সেটা কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।

ঘরের একাধিক দরজা ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে পাপন বলেন, আমার বাবার টাকায় করা ঘর আমি ভাঙলে কারো কিছু যায় আসে না। তার দাদার সঙ্গে ঝগড়া বিবাদে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে বন্ধু-বান্ধবসহ তাদেরকে তুলে নেয়ার হুমকির কথাও স্বীকার করেন পাপন।

এ বিষয়ে ফুলগাজী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কুতুব উদ্দিন জানান, আব্দুল মজিদের আভিযোগের কপি কোর্টে পাঠানো হয়েছে। কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এনএস/