সানেম ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স ২০২০ শুরু
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:২৪ পিএম, ২ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর উদ্যোগে সানেম ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স ২০২০ গতকাল পয়লা অক্টোবর বাংলাদেশ সময়ে বিকাল ৫টায় শুরু হয়েছে। এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য “কোভিড-১৯ এবং উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ”। অনলাইনে ওয়েব কনফারেন্স অ্যাপ জুম এর মাধ্যমে এই সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। সানেম এর ফেসবুক পাতা এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকেও সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
সম্মেলনে গতকালকে দুইটি সেশন আয়োজিত হয়। একটি সেশন “শ্রম বাজার” নিয়ে, আরেকটি সেশনে সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট-এর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির ফোর্ড ফাউন্ডেশন অধ্যাপক ড্যানি রডরিক।
“শ্রম বাজার”-এর ওপর আয়োজিত সেশনটিতে সভাপতিত্ব করেন ভারতের জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন রবি এস. শ্রীবাস্তব। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএলও-র এমপ্লয়মেন্ট, লেবার মার্কেট এন্ড ইয়ুথ ব্রাঞ্চের হেড অফ এমপ্লয়মেন্ট স্ট্র্যাটেজিস ইউনিট, ড. শের ভেরিক।
সূচনা বক্তব্যে অধ্যাপক শ্রীবাস্তব কোভিড-১৯ মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন যে, অর্থনৈতিক সংকট মহামারির প্রত্যক্ষ ফলাফল না, বরং, স্বাস্থ্য সংকট সামাল দিতে নেয়া ব্যবস্থার ফলাফল।
সেশনটিতে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। “দ্য লেবার মার্কেট এণ্ড পোভার্টি ইমপ্যাক্টস অফ কভিড নাইনটিন ইন সাউথ আফ্রিকা” শীর্ষক সেশনের প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন রনক জেইন, যিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্রম বাজারের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচী ও দারিদ্র্যসহ নানা আঙ্গিক প্রবন্ধটিতে আলোচিত হয়েছে।
এর পরে “লং টার্ম কনসুকুয়েন্সেস অফ কভিড নাইনটিন অন লেবার মার্কেট আউটকামস: লেসনস ফ্রম পাস্ট ইকোনমিক ক্রাইসিস” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর সোশাল প্রটেকশন মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন এক্সপার্ট এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী দিয়া প্রিতাদ্রাজাতি। ইন্দোনেশিয়ার অতীত অর্থনৈতিক সংকটের নানা অভিজ্ঞতা এবং কোভিড-১৯ সংকট মোকাবিলায় তার প্রাসঙ্গিকতা প্রবন্ধটিতে উপস্থাপিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম-এর গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা, “অকুপেশন বেজড পোভার্টি এন্ড ভালনারেবিলিটি ইন বাংলাদেশ: ইনসাইটস ফ্রম কোভিড নাইনটিন” শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধটিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস, বিপরীত অভিবাসন এবং মানব সম্পদ হ্রাস নিয়ে আলোচনা করা হয়। সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন যারা তারা মূলত অনানুষ্ঠিক খাতে কাজ করেন, কিন্তু, অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসাগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত না বলে প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।
“গার্মেন্ট ওয়ার্কার ওয়েজ ডিজিটাইজেশন: ইমপ্লিকেশন্স ফর দা ফিউচার অফ দা বাংলাদেশ ইকোনমি” শীর্ষক সেশনের সর্বশেষ প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফিন্যান্স অপরচুনিটিজ এর নির্বাহী পরিচালক ড. গাই স্টুয়ার্ট। বাংলাদেশের প্রায় ১৩০০ জন গার্মেন্ট শ্রমিকের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রবন্ধটি রচনা করা হয়েছে। প্রবন্ধে ডিজিটাল মজুরি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
গবেষণা প্রবন্ধগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ড. শের ভেরিক বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য তথ্য-উপাত্তের অপ্রতুলতার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে উদ্ভাবনী পদ্ধতি অনুসরণের ওপর জোর দেন। তিনি বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান হ্রাসের ওপরও আলোকপাত করেন। তার বক্তব্যের পরে প্রবন্ধ উপস্থাপনকারীরা সেশনের অংশগ্রহণকারীদের নানা প্রশ্ন ও মন্তব্যের নিয়ে আলোচনা করেন।
এর পরের সেশনে সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড্যানি রডরিক। সেশনটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। অধ্যাপক রডরিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোভিড-১৯ মহামারির নানা প্রভাবের বিশ্লেষণ তার প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, অতীতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যে কৌশলগুলো সফল হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলো আর কার্যকরী হবে না। কোভিড-১৯ এর ফলে উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে বিশ্বায়ন ও উন্নয়নের বিকল্প মডেলের ওপর তিনি জোর দেন।
অধ্যাপক রডরিক মন্তব্য করেন যে বিশ্বায়ন ও উন্নয়নের বর্তমান মডেলগুলো টেকসই না এবং হাইপার-গ্লোবালাইজেশন বা উচ্চ মাত্রায় বিশ্বায়ন বিভিন্ন দেশে অভ্যন্তরীন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তার বক্তব্যে তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প খাত, সেবা খাত এবং প্রযুক্তির মধ্যকার সম্পর্ক বিন্যাস নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, উন্নততর বা অগ্রসর খাতগুলো শ্রম ঘন নয়। তিনি আরো বলেন যে, উন্নত দেশগুলো শ্রম-বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করলেও, উন্নয়নশীল দেশগুলো যেই উৎপাদন প্রযুক্তি চায় সেটি তারা পাবে না।
শ্রম বাজারের নানা আঙ্গিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নীতিগুলোকে যে আরো বেশি উৎপাদনমুখী হতে হবে এবং শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে হবে, সে ব্যাপারে জোর দেন।
বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তিন রকম পরিণতি হতে পারে বলে ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক রডরিক: সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরিজ্জীবিত হবে এবং একটি ভালো অবস্থানে থাকবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে বিশ্ব বাণিজ্য ভেঙে পড়বে। আর সবচেয়ে খারাপ হলে, আরো বাণিজ্য যুদ্ধ হবে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও তিনি তার বক্তব্যে আলোচনা করেন।
সেশনটিতে অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং ড. জায়েদী সাত্তারের মত স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদরাও যোগ দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে অধ্যাপক রডরিক সেশনে অংশগ্রহণকারীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
সম্মেলনে গতকাল জুম-এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রায় দেড়শ জন অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক, সাংবাদিক, উন্নয়ন কর্মী এবং শিক্ষার্থী যোগ দেন।
সম্মেলনটি আজকে এবং আগামীকাল চলবে, উভয়দিনই বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটার সময় সম্মেলনটি শুরু হবে। সানেম-এর ফেসবুক পাতা এবং ইউটিউব চ্যানেল থেকে সম্মেলনটি সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
কনফারেন্সে কোভিড-১৯ মহামারির সাথে সম্পর্কের সূত্র ধরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জনস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, শ্রম বাজার, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স, অভিবাসন, দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং সামাজিক সুরক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ২৪টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান এই সম্মেলনের আহ্বায়ক।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) একটি অ-বাণিজ্যিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সরকারী সংস্থা এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাথে সানেম বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে কাজ করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।
আরকে//