সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত ট্রাম্প
তাচ্ছিল্য করে করোনাকে খেপিয়ে তুলেছিলেন ট্রাম্প?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৯ এএম, ৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১১:১৯ এএম, ৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রী ফাস্টলেডি মিলানিয়া ট্রাম্প- ডব্লিউ ম্যাগাজিন
প্রথম থেকে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনার ভয়াবহতা তিনি মানতেই চান না। মহামারির সঙ্গে সারাবিশ্ব যখন প্রাণপণে লড়াই করে যাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র যখন ভাইরাসে জর্জরিত তখন কোনোভাবেই এই হুমকিকে পাত্তা দেননি তিনি। অবশেষে সেই ট্রাম্পই কিনা সস্ত্রীক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বেশিরভাগ মার্কিনি মনে করেন, ট্রাম্পের এ উন্নসিকতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে এবং এখনও বেড়ে চলছে। ঘনিষ্ঠ সহযোগী হোপ হিকসের সংস্পর্শে আসার কারণে ট্রাম্প ও স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বিভিন্ন সময় এই সংক্রমণ নিয়ে উদ্ভট সব মন্তব্য করে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। তত দিনে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের বিষয়ে বিশ্বের সব দেশই কমবেশি সতর্ক অবস্থান নিয়ে নেয়। ১১ মার্চ করোনা ভাইরাসকে মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত ৩০ জুন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে সংস্থাটি। ঐ দিনই ট্রাম্প তার দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অন্যদিকে মার্কিনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে জোর দিলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ তাচ্ছিল্যই দেখাচ্ছিলেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে করোনা ভাইরাস ব্রিফিং টাস্ক ফোর্সের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন, যেখানে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এমন একজন বিশেষজ্ঞরই সামনে থাকার কথা। গত দিনে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজারে ছাড়িয়ে যায়। দিন দিন যতই মাত্রা ছাড়িয়েছে করোনা ভাইরাস ততই যেন উদাসীনতা দেখিয়েছেন ট্রাম্প। বলেছেন , ‘সহসাই আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৫ জনে নেমে আসবে এবং এর কিছুদিনের মধ্যেই সংখ্যাটি নেমে আসবে মাত্র ১ কি ২ জনে।’ ‘অলৌকিকভাবে’ শীঘ্রই করোনা ভাইরাস শেষ হবে। করোনা ভাইরাস তার বিরোধী দল ‘ডেমোক্রেটদের’ সৃষ্টি বলেও অভিহিত করেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করলে ১৩ মার্চ দেশ জুড়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ২০ মার্চ হোয়াইট হাউসে করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্সের প্রাত্যহিক ব্রিফিংয়ে তিনি জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেন, করোনার চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার ‘ভীষণ কার্যকর’। যেদিন তিনি দেশ থেকে লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন ঠিক সেই সময়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ লাখ ছাড়িয়ে যায় এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়ায় হাজার।
হেয়ালি ট্রাম্প লেগেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পিছনেও। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে গত ১৪ এপ্রিল সংস্থাটিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া বন্ধের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। ততক্ষণে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
গত ৯ মার্চ হোয়াইট হাউসের গাইডলাইন মেনে সব কিছু খুলে দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্য যখন অপ্রস্তুত, ট্রাম্প তখন ছোটখাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া অব্যাহত রাখেন। টুইটারে প্রকাশ করেন এ সংক্রান্ত স্লোগান, ‘ট্রাঞ্জিশন টু গ্রেটনেস’। ২২ মে গির্জাগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর আসন্ন নির্বাচনের প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে নিজের পকেট থেকে বের করা মাস্ক পড়ে ট্রাম্প বলেন, ‘যখন দরকার পড়ে, তখনই মাস্ক পরি আমি।’ ডেমোক্রেটিক প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের নিয়মিত মাস্ক পরাকে ব্যঙ্গ করে তিনি বলেন, ‘তার মতো মাস্ক পরি না। যখনই তাকে দেখবেন, তার মুখে মাস্কের দেখা পাবেন আপনারা। লোকজনের কাছ থেকে ২০ ফুট দূরে থেকে কথা বলেন তিনি। তাকে আমি সব সময় বড় বড় মাস্ক পড়ে থাকতে দেখেছি।’ একই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্দরমহল আর বাইরের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। আমরা র্যালি করি বাইরে। বিশাল জনসমাগম ঘটে...। এর কোন নেতিবাচক প্রভাব আমাদের মধ্যে পড়েনি। অথচ কোন কোন র্যালিতে ৩৫ লাখ ৪০ হাজারের মতোও মানুষ এসেছে।’
সমালোচকদের মতে, ঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষ সংক্রমণ ও মৃত্যু থেকে বাঁচতে পাড়তেন। নির্বাচনী প্রচারের সময়েও ট্রাম্প বেশ বড় জনসভা আয়োজন করেছেন, যেখানে মাস্ক পড়া বা সামাজিক ব্যবধানের কোন নির্দেশিকা ছিল না। এমনকি দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রথম টেলিভিশন বিতর্কের সময়েও ট্রাম্প শিবিরের বেশির ভাগ সদস্যকে মাস্ক পড়তে দেখা যায়নি।
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরীরেও ধরা পড়ল কোভিড-১৯। একই সঙ্গে তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও আক্রান্ত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে এমন ঘটনা বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। ট্রাম্প নিজে এক টুইট বার্তায় এই খবর দিলেন। অবিলম্বে কোয়েরেন্টাইন ও আরোগ্য প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা করেন তিনি। বাংলাদেশ সময় শনিবার রাতে তিনি হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছেন।
ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা ও আস্থার পাত্র হোপ হিক্স বুধবার সন্ধ্যায় কোভিড-১৯-এর উপসর্গ টের পান। মিনেসোটা রাজ্যে ট্রাম্পের এক জনসভার পর তিনি তখন বিমানে ছিলেন। সেখানেই তাকে বাকি যাত্রীদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফল জানা যায়। এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প নিজে সেই খবর দিয়ে জানান, যে হোপ হিক্স অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছিলেন। ফলে ফার্স্ট লেডি ও তিনি পরীক্ষার ফল আসা পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া শুরু করছেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৫২৪ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ জন।
এমএস/