অবশেষে ঈশ্বর নারীদের দাবি মেনে নিলেন
সাদিকুর রহমান খান
প্রকাশিত : ১০:১২ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার | আপডেট: ১০:৫৬ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২০ শনিবার
পৃথিবী থেকে সমস্ত পুরুষ ভ্যানিশ হয়ে গেলো!- খবরটা শুনেই নীলা তীব্র আনন্দে নাচানাচি শুরু করে দিলো। বান্ধবীরা গন্ডায় গন্ডায় প্রেম করছে, অথচ এতোদিন চেষ্টা করেও সে একটা প্রেমিকও জোগাড় করতে পারে নাই। সেই থেকেই ছেলেদের সে দুই চোখে দেখতে পারে না। ছেলেদের সকাল বিকাল গালি দেওয়াই তার প্রধান কাজ। সেই ছেলেরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে?
ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বাসে উঠলো নীলা। আজ পুরো বাস পুরুষমুক্ত, ড্রাইভারও মেয়ে, হেল্পারও মেয়ে। তবুও বাসে পা ফেলার জায়গা নাই। ভাঙা রাস্তায় উঠে বাস জোরে একটা ঝাঁকি খেলো। নীলার পাশে দাঁড়ানো ষাটোত্তীর্ণ বৃদ্ধা মহিলা নীলার গায়ের উপর এসে পড়লো।
নীলা চিৎকার করে বললো, মাইন্ড ইয়োর শরীর!! মেয়ে দেখলেই গায়ে এসে পড়তে ইচ্ছে করে তাই না? পটেনশিয়াল রেপিস্ট কোথাকার!! মহিলা হা হা করে আর্তনাদ করে উঠলেন। বললেন, দ্যাখো মেয়ে, রূপের দেমাগ করো না। তোমার বয়সে আমি তোমার চেয়েও হাজার গুণে সুন্দরী ছিলাম। একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীকে পটেনশিয়াল রেপিস্ট বলতে লজ্জা লাগে না?
নীলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। বাসে যে পুরুষ নাই, সে তো ভুলেই গেছিলো!! এর আগেও এমন হতো। দেখা যেতো থুথ্থুড়ে বুড়ো বা আট বছরের ছেলে শিশুও বাসের ঝাঁকুনি সইতে না পেরে মাঝেমধ্যে গায়ের ওপর এসে পড়তো। নীলা তখন তাদের পটেনশিয়াল রেপিস্ট বলে গালি দিতো, পুরুষ জাতির বংশ উদ্ধার করতো। কিন্তু আজ পুরো বাসে তন্নতন্ন করেও গালি দেওয়ার জন্য একটা পুরুষও খুঁজে পেলো না।
নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্ততঃ রেপিস্ট গালিটা দেওয়ার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিলো কিছু পুরুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
ইউনিভার্সিটি গেট থেকে ডিপার্টমেন্ট-এ যাওয়ার ভাড়া দশ টাকা। রিকশাওয়ালী চাইলো বিশ টাকা। নীলা খেঁকিয়ে উঠলো- মেয়ে মানুষ দেখলেই ভাড়া বেশি নেওয়া লাগে না? লোভী পুরুষ জাত কোথাকার!! রিকশাওয়ালী হাউ হাউ করে উঠলো- দেখেন আফামনি, আর যাই করেন, পুরুষ কইয়া গালি দেবেন না। মাইয়া মানুষ হয়ে রিকশা চালাই, ভাড়া অহন থেইক্যা বিশ টাকাই দেওন লাগবো।
নীলা চুপসে যায়। আর যাই হোক, মেয়ে মানুষকে তো আর লোভী বলে গালি দেওয়া যায় না। ওতে জাতের অসম্মান হয়। নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্ততঃ রিকশা চালানোর জন্য আর লোভী গালিটা দেওয়ার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিলো কিছু পুরুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
ক্লাসে নীলাকে দেখেই লাবণী আর উর্মিলা হিহি করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতেই বললো, এইটা কী কালারের ড্রেস পরছিস ভাই? তোর চয়েজ এতো খারাপ!! আর ওড়না এভাবে দিয়েছিস কেন? ক্লাউনের মতো লাগছে! আর তোর কাজলটাও কিন্তু ঠিক মানায়নি তোর স্কিনের সাথে!
নীলা রেগেমেগে বলে শাট আপ! সেক্সিস্ট কোথাকার! লজ্জা করে না একটা মেয়ের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে? সবগুলো একেকটা রেসিস্ট! উর্মিলা বললো- হাউ ডেয়ার ইউ নীলা! আমি একজন নারী। সেক্সিস্ট তো পুরুষরা হয়, নারী হয়ে তুই আমাকে সেক্সিস্ট গালি দিতে পারিস না।
নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্ততঃ সেক্সিস্ট গালিটা দেওয়ার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিলো কিছু পুরুষকে বাঁচিয়ে রাখা। ঠিক এই সময় নীলার চোখ গেলো হিজাব পরে থাকা মৌলির দিকে। হিজাব-বোরকা নীলার দুই চোখের বিষ। সে মৌলিকে বললো, এইসব বস্তা পরে কী মজা পাস? নিশ্চয়ই তোর মৌলবাদী বাবা তোকে জোর করে এই বস্তা পরে থাকতে বাধ্য করে?
মৌলি বললো- না, এটা আমার চয়েজ। আর তাছাড়া বাবা তো নাই। পৃথিবী যে পুরুষশূন্য হয়ে গেছে তুই জানিস না? নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্ততঃ মৌলবাদী গালিটা দেওয়ার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিলো কিছু পুরুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
বিরক্তিকর ক্লাস শেষ করে নীলা বাড়ি ফিরলো। বাসায় এসে মুখ ধুয়ে টিভি খুলে বসলো। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দিচ্ছে, ফকিরাপুলে এক মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নীলা রেগেমেগে আগুন হয়ে ফেসবুক খুললো। পুরুষজাতিকে খুনি, চামার, ছোটলোক বলে গালিগালাজ দিয়ে বিরাট একটা রচনা লেখার পর তার মনে পড়লো, আহা! পৃথিবী যে এখন পুরুষশূন্য।
অতএব খুনটাও নিশ্চয়ই কোনো নারীই করেছে। নারী হয়ে নারীর বিরুদ্ধে কীভাবে স্ট্যাটাস লিখবে সে? নীলা রেগেমেগে ফেসবুক থেকেই বেরিয়ে গেলো। নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্ততঃ খুনি গালিটা দেওয়ার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিলো কিছু পুরুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
নীলার প্রেম ছিলো শিলার সাথে। প্রেম মানে স্বর্গীয় প্রেম, মনের প্রেম। পুরুষদের মতো বিছানায় শুয়ে পড়া প্রেম না। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে থাকতেই শিলা জানালো ক্যাথেরিন নামের আমেরিকার এক মেয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। তার পরিবার কোনোভাবেই নীলাকে মেনে নেবে না।
প্রেমে প্রতারিত হয়ে রাগে দুঃখে নীলা থানায় গেলো মামলা করতে। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা। থানা মামলা নিলো না। নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্ততঃ বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলাটা দেওয়ার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিলো কিছু পুরুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
নীলার বিয়ে হয়েছে। পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়েছে। না, পৃথিবী পুরুষশূন্য হলেও বিয়ে বন্ধ হয় নাই। যৌতুকও বন্ধ হয় নাই। মোটা টাকার যৌতুক শ্বাশুড়িকে দিয়েই বিয়ে করতে হয়েছে। পৃথিবী পুরুষহীন হলেও এখন শ্বাশুড়িরা গুণে গুণে যৌতুক আদায় করে মেয়েদের বিয়ে দেন।
বিয়ের পর দুই বছর ভালোই চলছিলো। একদিন স্টার জলসা নাকি স্টার প্লাস এটা নিয়ে দুজনের মধ্যে কঠিন মারামারি শুরু হলো। চুলাচুলি, হাতাহাতি, মারামারি কিছুই বাদ গেলো না। নীলা থানায় গেলো নারী নির্যাতনের মামলা করতে। থানা থেকে বলা হলো- পুরুষ জাতি উঠিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী নির্যাতন আইনও উঠে গেছে। মামলা হবে না। নারীরা নির্যাতক হয় নাকি? নারীরা তো সব ফেরেশতা!
নীলার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অন্ততঃ নারী নির্যাতনের মামলাটা দেওয়ার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিলো কিছু পুরুষকে বাঁচিয়ে রাখা।
(হাইপোথেটিক্যাল রম্য গল্প। বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নাই। ব্যক্তিগতভাবে নিলে সেটা আপনার ব্যাপার।)
লেখক- শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এনএস/
এনএস/