সিংড়ায় মানব সৃষ্ট বন্যায় শত কোটি টাকার ক্ষতি!
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:২৩ এএম, ৪ অক্টোবর ২০২০ রবিবার
প্রকৃতির পাশাপাশি নাটোরের সিংড়ায় এবার মানব সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতি গুনতে হবে শতকোটি টাকার বেশি। আত্রাই নদীতে অবৈধ সোঁতি জালের কারণে এবার বন্যায় রাস্তা ও বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে অন্তত ১৬টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং অন্তত আরও ১০টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
বাঁধ ও রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় বিলের মধ্যে দ্রুতবেগে পানি প্রবেশ করায় ৩ হাজার ২শ’ হেক্টর জমির ফসল ও ২ হাজার ৩০৯টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় উপজেলার ২৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং ২৩০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এবারের দ্বিতীয় দফা বন্যা মানব সৃষ্টি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তসহ উপজেলার অধিকাংশ মানুষের। খোদ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তাই মনে করছেন। এবারের বন্যার মূল কারণ আত্রাই নদীতে স্থাপন করা অবৈধ সোঁতি জাল ও জালের জন্য তৈরি বাঁধ।
এতে করে বন্যার ভয়বহতা বেড়েছে বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এবারের বন্যা নিয়ন্ত্রণে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী নিজে আত্রাই নদীতে স্থাপনকরা সোঁতি জাল উচ্ছেদে নামেন। সর্বশেষ গত বুধবার নদীর পানি সিংড়া পয়েন্টে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে বিপদসীমার ১১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিন পৌর শহরের শোলাকুড়া এলাকায় রাস্তা ভেঙ্গে আত্রাই নদীর পানি বিলে প্রবেশ করে। এ সময় সড়কের ধারের অন্তত ১৭টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং আরও ১০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শোলকুড়ার ভাটিতে নদীর একাধিক স্থানে স্থাপন করা অবৈধ সোঁতি জাল এই ভাঙ্গন ও বন্যা সৃষ্টির কারণ বলে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি। ফলে সৃষ্ট বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য গতকাল শনিবার প্রতিমন্ত্রী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে আত্রাই নদীতে সোঁতিজাল উচ্ছেদ অভিযান শুর করেন।
অভিযানে জাল জব্দসহ বেশ কয়েকটি সোতিঁ বাঁধ অপসারণ করা হয়। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেন,‘অনুসন্ধান করে নদীতে বসানো ৭০টি অবৈধ সোঁতি জাল ও স্থাপনাসহ জড়িতদের তালিকা পেয়েছি। ওই তালিকা ধরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রসাশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সোঁতি জালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। একইসঙ্গে পানি কমার পর আর কেউ যাতে সোঁতি বসাতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনসহ স্থানীয়দের সহযোগিতা দরকার।’
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় সিংড়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আত্রাই নদীর পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো অপশক্তি সোঁতি জাল দিয়ে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।’
তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্য সকল সোঁতি জাল নিজ নিজ উদ্যোগে অপসারণের নির্দেশ দেন।
জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন,‘বন্যা সৃষ্টিতে অন্যান্যের মধ্যে সোঁতি জাল একটি বড় কারণ। মানব সৃষ্ট বন্যার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। যারা জড়িত তাদের তালিকা পাওয়া গেছে। জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
জেলা প্রসাশক মো. শাহরিয়াজ বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এআই/এসএ/