‘বিএনপি’র মানববন্ধন জিয়াউর রহমানের অপকর্ম ঢাকার অপচেষ্টা’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:৪৫ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২০ রবিবার
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি’র মানববন্ধন জিয়াউর রহমানের অপকর্ম ঢাকার অপচেষ্টার অংশ, অন্য কোনো কিছু নয়।’
রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ সিনেমা এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট-বিসিটিআই এর শিক্ষকবৃন্দের সাথে মতবিনিময় শেষে বিএনপি’র মানববন্ধন সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। বিসিটিআই শিক্ষকদের মধ্যে ম. হামিদ, গাজী রাকায়েত, পঙ্কজ পালিত, সাজ্জাদ জহির, শামীম আকতার, জাহিদুল রহিম অঞ্জন, ফরিদুর রহমান ও কেরামত আলী সভায় অংশ নেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনীরা হত্যাকান্ডের পরপরই ১৯৭৫-৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে বিদেশে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ক্যাপ্টেন মাজেদ ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার আগেও জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে স্পষ্ট বলে গিয়েছেন। আরো অনেক দলিল-দস্তাবেজ প্রমাণ করছে যে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন, সেগুলো নানা তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসে। এগুলো উপস্থাপনের জন্য আমি গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।”
‘জিয়াউর রহমান যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত ছিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুণর্বাসিত করেছিলেন, সেগুলো যখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন তাদের (বিএনপি’র) গাত্রদাহ হচ্ছে এবং একারণেই বিএনপি অফিসের সামনে জিয়াউর রহমানের এই অপকর্ম ঢাকার জন্য তাদের মানববন্ধন’ বলেন মন্ত্রী।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মন্তব্য ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র নষ্ট করছে’ এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করছে বিএনপি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত চেতনাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন, স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত বিরুদ্ধাচারীদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। যখন দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা চলছিল, তখন পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের ডেপুটি লিডার হিসেবে জাতিসংঘে গিয়ে যে শাহ আজিজুর রহমান বলেছিলেন যে দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে না, কিছু ভারতীয় চর গন্ডগোল করছে এবং কোনো গণহত্যা হচ্ছে না, তাকে তিনি প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন।’
ড. হাছান আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আরো একধাপ এগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচারণকারী, স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ ও গণহত্যায় অংশ নেয়া জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন। সুতরাং গয়েশ্বর বাবু কি অবস্থায় কথা বলেছেন সেটিই প্রশ্ন।’
করোনায় আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে ৫শ’এর বেশি নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং আক্রান্ত হাজার হাজার উল্লেখ করে শনিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা সর্ম্পকিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে এই প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য এবং যেসমস্ত জায়গায় সম্মেলন হয়েছে, সেখানকার কমিটিগুলোকে পূর্ণাঙ্গ করার জন্য এবং যেখানে কোনো সম্মেলন হয় নাই, সেখানে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদকদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার সাথে প্রেসিডিয়াম মেম্বারদেরকেও বিভাগীয় পর্যায়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
করোনাকালে যখন মানুষ আতংকিত, অনেকে হাত গুটিয়ে বসেছিলেন, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বসে ছিল না, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নেতাকর্মীরা মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষকে সহায়তা করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, সেকারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে ৫শ’ নেতাকর্মী এই করোনাভারাইসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অন্য কোনো দলের ক্ষেত্রে এটি হয়নি। কারণ, অন্য কোন দল আওয়ামী লীগের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েনি। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১ কোটি ২৫ লক্ষ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। করোনাকালে আওয়ামী লীগ যেভাবে পাশে ছিল, যতদিন করোনা থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে থাকবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে এবং ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় পরিচয় গোপন করে আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়া সুযোগ সন্ধানী এবং অনুপ্রবেশকারীদের দলের কোনো পর্যায়েই রাখা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চলচ্চিত্র শিল্প উন্নয়নে ১ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত : তথ্যমন্ত্রী এসময় জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো চালু করা, চালু সিনেমা হল সংস্কার এবং নতুন সিনেমা হল তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে।
কয়েক বছরের মধ্যেই দেশে সিনেমা শিল্পে একটা বিরাট ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, অনেকগুলো বন্ধ সিনেমা হল চালু হবে, চালু সিনেমা হলগুলো সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হবে, গ্রামে-গঞ্জের অনেক সিনেমা হল চালু হবে, আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৭ সালে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিসিটিআই প্রতিষ্ঠা ও নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সিনেমা এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা।
এসি