যে কারণে নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৪৯ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০ সোমবার | আপডেট: ১২:৫১ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০ সোমবার
কারাবাখের সবচেয়ে বড় শহর স্টেপানাকিয়ার্ট- ডয়চে ভেলে
গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে। এর কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল। শুরু হওয়া সংঘাতে তুরস্ক ও রাশিয়ার মতো আঞ্চলিক শক্তি জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে তুরস্ক সরাসরি আজারবাইজানের পক্ষ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহে যুদ্ধে আড়াই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক। খবর ডয়চে ভেলে, এএফপি, রয়টার্স, মিডিল ইস্ট মনিটর’র।
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের অবস্থান:
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ। পাহাড় ও বন ঘেরা দুর্গম এই অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাস করেন। তাদের বেশিরভাগই আজারবাইজানের শাসনের বিরোধী আর্মেনীয়। অঞ্চলটির আয়তন প্রায় ৪ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার। নাগর্নো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার মানুষ থাকেন। তবে এলাকাটি স্বাধীন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে। তাদের নিজস্ব প্রশাসনও আছে। আর্মেনিয়ার যথেষ্ট প্রভাব আছে ঐ অঞ্চলে।
প্রথম সংঘাত:
গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে যখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার প্রক্রিয়া চলছে, তখন থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাতের শুরু। ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে এই সংঘাত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাণ হারান প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। সংঘাতের কারণে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আর্মেনীয়দের হাতে।
আজারবাইজানের দাবি, ঐ এলাকা বেআইনিভাবে আর্মেনিয়া দখলে রেখেছে। আজারবাইজান জানিয়েছে, এলাকাটি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
আর্মেনিয়ার সহায়তা:
১৯৯৪ সালের পর থেকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে আর্মেনিয়া। এ ছাড়া সারাবিশ্বে থাকা আর্মেনীয়রাও ঐ অঞ্চলের জন্য দান করে থাকেন।
মাঝেমধ্যেই সংঘাত:
যুদ্ধবিরতি চললেও নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সৈন্যদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে এক সংঘাতে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারান। বছরের জুলাইতেও মোটামুটি বড় আকারের সংঘাত হয়েছিল। রোববার শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অন্তত ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক।
যে কারণে ফের সংঘাত:
জুলাইয়ের সংঘাতের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার সমাধানে ততটা আগ্রহ দেখায়নি। অতীতে রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে মধ্যস্থতা করলেও বর্তমানে করোনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, বেলারুশ, লেবানন পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া যায়নি। তাই গেল সপ্তাহের রোববার থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
এবারের সংঘাত:
জর্জিয়ান স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস সেন্টার’র জ্যেষ্ঠ ফেলো গেলা ভাসাদজে বলছেন, ১৯৯০ দশকের পর এই প্রথম আর্মেনিয়া ও কারাবাখ ঐ অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক যান জড়ো করছে। আজারবাইজানও সামরিক আইন জারি করেছে। এ ছাড়া আকাশ থেকে হামলা চালানোর সিস্টেম, ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি সব কিছুর ব্যবস্থা করছে দেশটি।
রাশিয়া ও তুরস্কের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা:
খ্রিস্টান প্রধান আর্মেনিয়ার সবচেয়ে বড় বন্ধু রাশিয়া। তাদের সঙ্গে সামরিক চুক্তিও আছে দেশটির। আর মুসলমান প্রধান দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি আছে তুরস্কের। তবে বিশ্লেষক গেলা ভাসাদজে বলছেন, রাশিয়া ও তুরস্ক হয়ত সরাসরি এই সংঘাতে যুক্ত হবে না। কারণ এতে যুক্ত হয়ে খুব বেশি লাভ নেই। বরং এর ফলে তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রাশিয়ার সুযোগ:
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন জানিয়ে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের বিরোধী নাভালনিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ সমালোচনার মুখে আছে রাশিয়া। এই অবস্থায় রাশিয়া যদি আলোচনার মাধ্যমে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া প্রশংসিত হতে পারে। পুটিন ইতোমধ্যে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
সংঘাত নিয়ে আলোচনা করতে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’র ডাক দিয়েছেন। দুই পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও।
এমএস/