ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

গুটি কয়েক ধর্ষকের এত শক্তি?

শিরীন ফাতিমা

প্রকাশিত : ০৮:৩৪ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৮:৩৭ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২০ সোমবার

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

গতকাল থেকে একটা ভিডিও অন্তরজালে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা অতি উৎসাহী কেউ কেউ আবার ইনবক্সেও পাঠিয়েছেন। আমার সাহস হয়নি ভিডিওটি খুলে দেখার। এমনিতেই এরকম বেপরোয়া ধর্ষণের ঘটনায় মনটা ভারী হয়ে আছে। এটা নিয়ে নিজের ভয়, শংকা নিয়ে একটা লেখাও লিখলাম আজ সকালেই। সেটি পোস্ট করে গ্রুপ আড্ডাতে এসেও দেখি সেখানেও ভিডিওটা পোস্ট করা হয়েছে।

স্থিরচিত্র দেখেই যেখানে অসুস্থ বোধ করছি, সেখানে কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কিভাবে এটা করতে পারে, আমার বুঝে আসে না। আমি আসলেই বুঝতে পারিনা, কি হচ্ছে আমাদের চারপাশে। এই ঘটনা, শুধু এই ঘটনাই নয়, এই দেশে ঘটে যাওয়া কোনো ধরনের অন্যায়ের বিচার চেয়ে কিছুই হয়নি। অতীতের ধর্ষকদের যদি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, তবে আজ এই দিন দেখতে হতোনা। 

প্রতিদিন নারী ধর্ষণ হবে, তার অপমানের চিত্র ঘুরে বেড়াবে দেশজুড়ে। আমরা আহা-উহু করবো....! এভাবেই ধর্ষকেরা বিষাক্ত আগাছার মতো ছেয়ে যাবে সমস্ত দেশটায়। আর তার চাইতেও ভয়ংকর হচ্ছে- এই অপমান, অবমাননার প্রতি সহানুভূতি দেখানোর ছলে তাদের বারবার অপমান করা। ধর্ষকদের যত ঘৃণা করি, তার চেয়েও বেশি ঘৃণা জমা হয় এই সব তথাকথিত সহানুভূতিশীলদের প্রতি।

নোয়াখালির বেগমগঞ্জ, সিলেটের এমসি কলেজ, রাজশাহীর তানোর, পাহাড়ী এলাকা, ঢাকা, কুমিল্লা, রাজশাহী, দিনাজপুর ... সমগ্র বাংলাদেশ! সোনার বাংলার পথে প্রান্তরে ধর্ষিত হচ্ছে নারী, ধর্ষিত হচ্ছে কারো কন্যা, কারো বোন, কারো স্ত্রী, কারো মা! কারা করছে...? কারা? আমার ভাই? আমার বন্ধু? চাচা, মামা, বাপ, খালু, শ্বশুড়, অফিসের বস, প্রতিবেশী, গুণ্ডা, ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, আর্মি, ডাক্তার, নেতা, মৌলানা, পুরুত, ফাদার, এমনকি স্বামীও।

কিন্ত কেন? কেন এই ধর্ষণ? কি আনন্দ এতে? কিসের এত ক্ষোভ, কিসের এত রাগ, কিসের এত আক্রোশ? ক্লান্ত লাগে খুব, যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাই, অপমানিত লাগে, রাগ হয় খুব, আর আমার খুব ভয় করে, খুব খুব ভয় করে। আমার চারপাশটাকে, আমার পাড়াটাকে, আমার দেশটাকে ভয় লাগে। আর আমার ভয় লাগে মানুষকে- আমার ভাইকে, আমার বসকে, আমার আত্মীয়দের, আমার বন্ধুদের, আমার চারপাশের সব পুরুষকেই!

আমি এই ভয়ের জন্য লজ্জিত বোধ করি, আমার লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায় ওদেরকে ভয় পাওয়ায়। কিছু পুরুষ মানুষ, শুধু কিছু পুরুষ মানুষের এত শক্তি! আর বাকী যারা! কি করছো তোমরা? কি করছি আমরা?

এখনো কী সময় হয়নি একটা আইন করার? আমাদের চোখের সামনে বুক ফুলিয়ে, মাথা উঁচু করে ধর্ষকরাই ঘুরে বেড়াবে আর আমরা মাথা নীচু করে, ভয়ে জড়সড় হয়ে দিন কাটাবো। আর কতদিন? তবু

আমি আশায় বুক বাঁধি! সবাই আমরা এক হয়ে হাতে হাত ধরে দাঁড়াবো, আমরা সবাই, নারী পুরুষ, আমার বোন, আমার ভাই, আমার ছেলে, আমার মেয়ে, আমার প্রতিবেশী, আমার বন্ধুরা, আমার প্রিয়জনরা। রুখে দাঁড়াবো আমরা। আর সেটা এখনই! গুটি কয়েক ধর্ষকের এত শক্তি? আমাদের সবার সম্মিলিত শক্তির চেয়েও?

লেখক- শিক্ষক, স্কলাস্টিকা স্কুল, ঢাকা।

এনএস/