করোনায় কেমন আছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৫৬ এএম, ৮ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৫৬ এএম, ৮ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার
আফগানিস্তানের একটি হাসপাতালে করোনাক্রান্ত এক রোগীর সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ছবি-বিবিসি
প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার দশ মাস চলছে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের। যেখানে এখন পর্যন্ত দশ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ভুক্তভোগী তিন কোটি ৬৩ লাখ ৮১ হাজারের বেশি মানুষ। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে এশিয়ার দেশ চীনের হুবেই প্রদেশে ভাইরাসটির সূচনা হলেও নতুন বছরের শুরুতেই ভয়াবহ আকার ধারণ করে ইউরোপে। যার তাণ্ডব এখনও অব্যাহত রয়েছে।
এরপরই একে একে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। যার ছোবল থেকে রেহাই মিলেনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। এ অঞ্চলে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত ভারতে ৩০ জানুয়ারি।
শুরু থেকেই ভারতে করোনা সংকট শোচনীয় অবস্থার দিকে গেলেও অনেকটা ব্যতিক্রম ছিল অন্যান্য দেশগুলো। ভারতে মার্চের দিকে কঠোর লকডাউন পালন করেও ঠেকানো যায়নি তীব্রতা। ক্রমান্বয়ে দাপট বাড়তে থাকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। তবে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল ভুটান ও আফগানিস্তানে তেমনটা পাত্তা পায়নি করোনা।
ভারতের গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, সংক্রমণ অনেকটা স্থায়ী রূপ নেয়ায় অর্থনীতি ধসের শঙ্কায় বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা রয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে গণপরিবহন, ট্রেন ও অফিস। তবে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো।
গত একমাসে টানা সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি দেখে মোদির দেশ। গড়ে শনাক্ত হয়েছে ৯০ হাজারের বেশি। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে কিছুটা দাপট কমলেও থামছে না প্রাণহানি। অন্যদিকে আশার কথা হলো, আগের তুলনায় বেড়েছে সুস্থতার হার।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিশ্বখ্যাত জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডমিটারের সর্বশেষ তথ্যা বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৭৯ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ছুঁতে চলেছে। প্রাণহানি ঘটেছে আরও ৯৬৩ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ সাড়ে ৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তবে সুস্থতা লাভ করেছেন দুই-তৃতীয়াংশ রোগী।
এ অঞ্চলে করোনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজারের বেশি মানুষ ভাইরাসটির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৬ হাজারের অধিক রোগী করোনামুক্ত হলেও প্রাণহানি ঘটেছে ৫ হাজার ৪৪০ জনের।
গত ৮ মার্চ ইতালি ফেরত তিনজনের প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। এরপরই ক্রমান্বয়ে বিস্তার ঘটে। গত ২৬ মার্চ দেশে প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার সকল পথ ও যানবাহন। তবে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে তা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ফলে অব্যাহত থাকে করোনার তাণ্ডব। বর্তমানে সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে আসন্ন শীতে প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রগুলো। দেশে নমুনা পরীক্ষার হার কমায় কমেছে আক্রান্তের হার। তারপরও ভয়াবহ আকার ধারণের আশঙ্কায় বাতিল করা হয়েছে আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হবে এবারের ফলাফল। তবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে প্রথম দুইজনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে দাপট ক্রমেই বাড়তে থাকে। যেখানে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ করোনার শিকার হয়েছেন। প্রাণহানি ঘটেছে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি ভুক্তভোগীর। তবে বর্তমানে সেখানে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ভাইরাসটি।
মার্চের দিকে জোরালোভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দিলেও বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে চালু রয়েছে খোলা হয়েছে কারখানা ও অফিস আদালত। গণপরিবহনে মাস্ক ব্যবহার করা হলেও অনুপস্থিত সামাজিক দূরত্ব মানার প্রবণতা।
নেপালে একটু দেরিতেই হানা দেয় করোনা। গত ১৮ মে ২৯ বছর বয়সী এক নারীর প্রথম করোনার শনাক্ত হয়। এরপরই কঠোর লকডাউনের পথে হাটে দেশটি। তবে বর্তমানে সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় এখনও গড়ে ৩ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯৪ হাজারের মানুষের দেহে চিহ্নিত হয়েছে ভাইরাসটি। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৮ জনের।
এ অঞ্চলে করোনার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পঞ্চম তালিকায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে লকডাউন জারি করা হয়। কিন্তু অনেকে সে নির্দেশনা অমান্য করে ঘরে বাহিরে চলাফেরা করে। বিশেষ করে ঈদকে ঘিরে বাড়ে আত্মীয়ের বাসায় যাতায়াতও।
তবে, দেশিয় চিকিৎসা ও নমুনা পরীক্ষার হার কম হওয়ায় বর্তমানে অনেকটা কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা। যেখানে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৫৪৮ জন আফগান করোনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৩ হাজারই সুস্থতা লাভ করেছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৪৬৯ জনের।
ষষ্ঠ স্থানে থাকা মালদ্বীপ শুরু থেকে করোনার লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়। সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও সাধারণ মানুষের সচেতনতায় অনেকটা পাত্তায় পায়নি ভাইরাসটি। গত ৭ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্তের পর আটমাসে সে সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৬৫৬ জনে ঠেকেছে। মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৩৪ জনের। বর্তমানে সেখানে গড়ে ৩০ জনের বেশি আক্রান্ত হলেও নেই প্রাণহানি। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক।
করোনার বিরুদ্ধে লড়া আরেক সফল দেশ শ্রীলংকা। গত ১১ মার্চ করোনা হানা দেয় দেশটিতে। কিন্তু সরকার শুরু থেকে কঠোর নিয়ম নীতি জারি করে। এতে করে তেমনটা দাপট দেখাতে পারেনি ভাইরাসটি। এখন পর্যন্ত সেখানে ৪ হাজার ৪৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৩ জনের। এখনও অনেকটা বিধি নিষেধ জারি রয়েছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার বিরুদ্ধে লড়ে সবচেয়ে সফল ভুটান। আট কোটির বেশি মানুষের দেশটিতে গত ৫ মার্চ প্রথম করোনার প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর থেকে কঠোর লকডাউন পালন করে দেশটি।
বর্তমানে সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মাস্কের ব্যবহার বহাল রয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩শ’ মানুষ করোনার শিকার হলেও প্রাণহানির রেকর্ড নেই।
এআই/এমবি